বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের কিডনি বিনিময়

  •    
  • ৫ আগস্ট, ২০২১ ১০:৫৫

যেদিন সন্তানের দেহে এক ইসরায়েলির কিডনি প্রতিস্থাপিত হয়েছে, সেদিনই ফিলিস্তিনি বাবাও নিজের কিডনি দান করেন ২৫ বছর বয়সী এক ইসরায়েলি তরুণীকে। এ ঘটনাকে বিশ্বের সবচেয়ে বৈরী সম্পর্কের দুটি পক্ষের মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ইসরায়েলের নাগরিক ইদিত হারেল সেগাল বিশেষ কিছু করে নিজের ৫০তম জন্মদিন উদযাপন করতে চেয়েছিলেন। এরই অংশ হিসেবে তিনি সিদ্ধান্ত নেন, অপরিচিত কোনো মৃত্যুপথযাত্রীকে একটি কিডনি দান করবেন তিনি।

কিডনি প্রয়োজন, এমন একজন মানুষ খুঁজে বের করতে এবং তাকে কিডনি দানের পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্নে প্রায় ৯ মাস সময় লেগেছে সেগালের।

আরব নিউজের প্রতিবেদনে জানানো হয়, শেষ পর্যন্ত কিডনির প্রয়োজন এমন কাউকে খুঁজে পান সেগাল। তার কিডনি গ্রহীতা হলো ফিলিস্তিনি এক শিশু; যে ফিলিস্তিনের সঙ্গে ইসরায়েলের দ্বন্দ্ব-সহিংসতার ইতিহাস কয়েক দশকের।

সেগালের কিডনি নেয়া তিন বছরের ছোট্ট শিশুটি ইসরায়েল কর্তৃক অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার বাসিন্দা।

পেশায় কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক সেগাল নিজেকে একজন গর্বিত ইসরায়েলি বলে জানান। জন্মলগ্ন থেকে সীমান্ত নিয়ে অব্যাহত বিতর্ক, সংঘাতে জড়িয়ে থাকা ইসরায়েলের এই নাগরিক উদারতার উদাহরণ দাঁড় করাতে চেয়েছিলেন, তা পেরেছেনও।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসিদের ইহুদিবিরোধী বর্বরতার শিকার প্রয়াত দাদার স্মৃতিতে উদ্দীপ্ত সেগাল। তাকে অর্থপূর্ণ জীবন গড়ে তোলার উপদেশ দিয়ে গিয়েছিলেন দাদাই। বলেছিলেন, ইহুদি ধর্মের শিক্ষায় অন্যের জীবন বাঁচানোর চেয়ে বড় কোনো দায়িত্ব হয় না। সেই উপদেশ আমলে নিয়েই কিডনিদাতা ও গ্রহীতাদের প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেন তিনি। এর মাধ্যমেই খোঁজ পান ফিলিস্তিনি শিশুটির।

ইসরায়েলি নাগরিকের সাহায্য দেয়া-নেয়া স্পর্শকাতর বিষয় বলে শিশুটির নাম-পরিচয় গোপন রাখার অনুরোধ করেছেন তার মা-বাবা।

এই কিডনি বিনিময় প্রক্রিয়ায় সমন্বয়ে সহযোগিতা করেছে জেরুজালেমভিত্তিক বেসরকারি সাহায্য সংস্থা মাতনাত শাইম।

প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী শ্যারোনা শারম্যান জানান, গাজার শিশুটি ভীষণ অসুস্থ ছিল। তাকে বাঁচাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করে ইসরায়েলি দাতার কাছ থেকে কিডনি নেয়ার বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে বলে। শিশুটির সঙ্গে কিডনি ‘ম্যাচ’ না করায় নিজের কিডনি দিতে পারেননি বাবা।

তবে যেদিন সন্তানের দেহে এক ইসরায়েলির কিডনি প্রতিস্থাপিত হয়েছে, সেদিনই ফিলিস্তিনি শিশুটির বাবাও নিজের কিডনি দান করেন ২৫ বছর বয়সী এক ইসরায়েলি তরুণীকে। ওই তরুণীও দুই সন্তানের মা।

সেগালের কিডনিতে শিশুটির জীবন বেঁচে যাওয়ায় এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে শিশুটির বাবার এক ইসরায়েলিকে কিডনি দেয়ার ঘটনায় বিশ্বের সবচেয়ে বৈরী সম্পর্কের দুটি পক্ষের মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ফিলিস্তিনি বাবার কিডনি দান করাকে বেশ ভালোভাবেই গ্রহণ করছেন ইসরায়েলিরা। ঘটনাটিকে তারা দেখছেন, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দানে অঞ্চল দুটির মানুষের উৎসাহ বৃদ্ধির সুযোগ হিসেবে।

অস্ত্রোপচারের আগে ফিলিস্তিনি শিশুটির মা-বাবার সঙ্গে দেখা করেছেন সেগাল, তাদের মধ্যে এখনও যোগাযোগও আছে।

ফিলিস্তিনি শিশুটিকে কিডনির সঙ্গে একটি চিঠিও দিয়েছেন সেগাল। হিব্রু ভাষায় লেখা চিঠিতে শিশুটির উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তুমি আমাকে চিনবে না। কিন্তু খুব শিগগিরই এক সুতোয় বাঁধা পড়ব আমরা, তোমার শরীরে আমার কিডনি থাকবে যখন।

‘আমি মনেপ্রাণে চাই, এই অস্ত্রোপচার সফল হোক, তুমি বেঁচে যাও। তুমি দীর্ঘকাল বেঁচে থেকো, সুস্থ থেকো, অর্থবহুল জীবন হোক তোমার।’

চলতি বছরের মে মাসেই সবশেষ সহিংসতায় জড়ায় ইসরায়েল-ফিলিস্তিন। ইসরায়েলের ১১ দিনের বিমান হামলায় গাজা উপত্যকাসহ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাণ যায় আড়াই শর বেশি মানুষের, যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন ও গাজার শাসক দল হামাসের রকেট হামলায় ইসরায়েলি ভূখণ্ডেও প্রাণ যায় ১৩ জনের।

ওই সহিংসতার পরপরই, গত ১৬ জুন ফিলিস্তিনি শিশুটির দেহে সেগালের কিডনি প্রতিস্থাপন হয়।

সেগাল লিখেছেন, ‘আমি আমার ক্ষোভ আর হতাশা বিসর্জন দিয়েছি। সামনে কেবল শান্তি আর ভালোবাসা দেখেছি। আমাদের মতো আরও অনেক মানুষ এগিয়ে এলে একসময় লড়াই করার জন্য আর কোনো কারণ পাব না আমরা।’

ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের রক্তক্ষয়ী ইতিহাসের কারণে ফিলিস্তিনি শিশুকে কিডনি দান করার সিদ্ধান্ত নেয়া খুব একটা সহজ ছিল না সেগালের জন্য। এ জন্য পরিবারের সদস্যদের মুখোমুখি হতে হয়েছে তাকে। তার স্বামী ও তিন সন্তানের মধ্যে বড় সন্তান সেগালের এ সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধী ছিলেন। সেগালের বাবাও মেয়ের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। অস্ত্রোপচারের আগ মুহূর্তে অবশ্য পুরো পরিবারকেই পাশে পেয়েছিলেন তিনি।

তাদের কাছে মনে হয়েছিল, অযথাই নিজের জীবন বিপণ্ন করছেন সেগাল। বিশেষ করে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংঘাতে সেগালের দাদা-দাদিসহ তিন স্বজনের মৃত্যুর ইতিহাস পরিস্থিতি আরও কঠিন করে তুলেছিল।

সেগাল বলেন, ‘পরিবারের প্রতিটি মানুষ আমার বিরুদ্ধে ছিলেন। স্বামী, বোন, বোনের স্বামী। ন্যূনতম যেটুকু সমর্থন শেষ দিকে পেয়েছি, সেটা বাবাই দিয়েছেন। তারা ভয় পেয়েছিলেন।’

ইসরায়েলের উত্তরে ইশার এলাকায় একটি পাহাড়ের চূড়ায় নিজ বাড়িতে বসে সেগাল জানান, শিশুটির পরিচয় জানার পর কয়েক মাস কাউকে কিছু বলেননি তিনি।

তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়েছিল যে কিডনি দিচ্ছি জানার প্রতিক্রিয়াই যদি এমন হয়, তাহলে যে শিশুটি কিডনি নিচ্ছে, তার পরিবারের সদস্যদের জন্য হয়তো পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে যাবে।’

২০০৭ সালে গাজার নিয়ন্ত্রণ নেয় ইসরায়েলের অস্তিত্ববিরোধী হামাস। তখন থেকেই উপত্যকা অঞ্চলটি কঠোরভাবে অবরোধ করে রেখেছে ইসরায়েল। অবরোধের কারণে দারিদ্র্যে জর্জরিত ফিলিস্তিনিরা; ভঙ্গুর তাদের স্বাস্থ্য-শিক্ষাসহ প্রায় সব খাত। এ পর্যন্ত চারটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জড়িয়েছে চিরশত্রু পক্ষ দুটি।

দাতার স্বেচ্ছায় অঙ্গ দানের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্নের কারণে বিশ্বের অনেক দেশেই পারস্পরিক অঙ্গ প্রতিস্থাপনের অনুমতি নেই। একটি নীতিতেই অঙ্গ দানের পুরো প্রক্রিয়াটি ঘটে। আর তা হলো, দাতা স্বেচ্ছায় নিজের অঙ্গ দান করবেন, কিন্তু বিনিময়ে কিছু পাবেন না।

এ বিভাগের আরো খবর