১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে পূর্ণাঙ্গ সেনা প্রত্যাহারের পরও দেশটিতে বিমান হামলা অব্যাহত রাখবে যুক্তরাষ্ট্র। অর্থাৎ এখনই শেষ হচ্ছে না বিদেশি ভূখণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘতম এ যুদ্ধ; যা চলছে প্রায় ২০ বছর ধরে।
বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত কয়েক সপ্তাহে আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর সহযোগিতায় তাদের ভূখণ্ডে বেশ কয়েকটি বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। হামলায় ব্যবহৃত যুদ্ধবিমানগুলো আফগানিস্তানের বাইরে বিভিন্ন দেশে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি থেকে এসে ওইসব হামলা চালায়।
এ ধরনের হামলাই জারি থাকবে। এভাবেই সশস্ত্র রাজনৈতিক সংগঠন তালেবানের বিরুদ্ধে আফগান নিরাপত্তা বাহিনীকে জোরদার প্রতিরক্ষা গড়ে তুলতে সাহায্য করবে আমেরিকান সেনাবাহিনী।
২০০১ সালে তালেবানকে আফগানিস্তানের ক্ষমতা থেকে উৎখাতের সময় থেকেই দেশটিতে সামরিক উপস্থিতি ও রাজনীতিতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখে চলেছে যুক্তরাষ্ট্র।
আফগানিস্তানে নিয়োজিত আমেরিকান সেনাদের সবচেয়ে বড় ও প্রধান অংশ আর সামরিক সরঞ্জাম চলতি সপ্তাহে মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে নেয়ার কথা। এ সময়েই আফগানিস্তান ছাড়বেন দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন মিশনের প্রধান সেনা কমান্ডার জেনারেল স্কট মাইলারও।
এরই মধ্যে আফগানিস্তানের বাগরাম বিমান ঘাঁটি ছেড়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর সবচেয়ে বড় দলটি। আফগানিস্তানে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালনায় যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবহৃত সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটি ছিল বাগরামে।
১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৫ মাসে আফগানিস্তান ছাড়বে যুক্তরাষ্ট্রের আড়াই থেকে সাড়ে তিন হাজার এবং ন্যাটোভুক্ত বিভিন্ন দেশের আরও প্রায় সাত হাজার সেনার। এরই মধ্যে আফগানিস্তানে সামরিক মিশন আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ করেছে জার্মানি ও ইতালি; শেষ সেনাকেও দেশে ফিরিয়ে নিয়েছে পোল্যান্ড।
তবে মাইলারের প্রস্থান যুক্তরাষ্ট্রের আফগান মিশনের সবচেয়ে বড় পরিবর্তন বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
মাইলারের পরে আল-কায়েদার মতো নিষিদ্ধঘোষিত ও সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে বিমান হামলাসহ আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য সন্ত্রাসবিরোধী ও সামরিক কার্যক্রমে নেতৃত্ব দেবেন মেরিন জেনারেল ফ্র্যাঙ্ক ম্যাককেঞ্জি। ফ্লোরিডাভিত্তিক এই সেনা কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক শীর্ষ কমান্ডার।
আর আফগানিস্তানের ভেতরে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সেনা কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব নেবেন নৌবাহিনীর রিয়ার অ্যাডমিরাল পিটার ভ্যাসেলি। আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা মিশনেও নেতৃত্ব দেবেন তিনি।
এরই মধ্যে কাবুলে পৌঁছে মাইলারের কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নিতে শুরু করেছেন ভ্যাসেলি।
ভ্যাসেলির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ৬৫০ জন সেনা আফগানিস্তানে থেকে যাবেন অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য। মূলত দূতাবাসে কূটনীতিকদের নিরাপত্তা দেয়াই হবে তাদের প্রধান দায়িত্ব। নিরাপত্তার স্বার্থে বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন এলাকায় সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চাইলে আরও ৩০০ সেনাকে রাখতে পারবেন ভ্যাসেলি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনসহ হোয়াইট হাউজ থেকে ক্যাপিটল হিল পর্যন্ত শীর্ষ আইনপ্রণেতারা আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে।
তাদের শঙ্কা, বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের ফলে গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হবে আফগানিস্তানে। নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার ও তাদের সেনাবাহিনী।
গত কয়েক সপ্তাহে আফগানিস্তানে সহিংসতা তীব্র রূপ নিয়েছে।
আফগানিস্তানের চার শতাধিক জেলার মধ্যে ১০০টির বেশি জেলা দখল করে ফেলেছে তালেবান। ঘিরে ফেলছে রাজধানী কাবুল। এ অবস্থায় কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে তালেবান যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে লড়ছে আফগান সেনাবাহিনী।