লাল হেলমেট আর টি-শার্ট পরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বেলঘরিয়ার সংগীতা এখন বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দেন। ছক ভেঙে পেশা নিয়ে রাতারাতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল সংগীতা জোমাটো গার্ল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন।
করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে পশ্চিমবঙ্গে লকডাউনের জেরে থিয়েটার, সংগীত বা বিনোদন পেশার সঙ্গে যুক্ত বহু মানুষ রোজগারহীন হয়ে পড়েছেন। তাদের পাশে দাঁড়াতে আর গতিময় জীবন ভালোবেসে বহুরূপী নাট্য সংস্থার সক্রিয় কর্মী, রবীন্দ্রভারতীর স্নাতকোত্তরের ছাত্রী সংগীতা খাবার ডেলিভারির কাজ নিয়েছেন।
সংগীতার কথায়, ‘ছোটবেলা থেকে গতিময় জীবন আমার পছন্দ। দুই চাকার সওয়ারি হওয়ার নেশা বরাবরের। তাই ভাবলাম নেশাকে যদি পেশায় রূপান্তরিত করা যায়। তখনই মাথায় আসে ডেলিভারির কাজ। যোগাযোগ করতে কাজটা পেয়ে যাই। এখন খুব এনজয় করে এই কাজ করছি।
‘থিয়েটার করে যা রোজগার করতাম, তাতে নিজেরটুকু দিব্যি চলে যেত। কিন্তু সমস্যা হলো লকডাউনের ফলে। দেখলাম ফোনের রিচার্জের জন্য বাবার কাছে হাত পাততে হচ্ছে। খুব অস্বস্তি বোধ হচ্ছিল। কিছু একটা করতে হতো। আর এই কাজের থেকে ভালো অপশন হয়তো পেতাম না। তাই পছন্দমতো কাজ। সময় বেঁচে যাচ্ছে। পড়াশোনার সময় পেয়ে যাচ্ছি।’
জোমাটো ডেলিভারি করে উপার্জন থেকে হাতখরচটুকু রেখে বাকি টাকা দুস্থদের হাতে তুলে দেন সংগীতা। এভাবেই লকডাউনে থিয়েটারের কলাকুশলীদের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।
সংগীতা বলেন, ‘এক মাস হলো আমি দমদম এলাকায় খাবার ডেলিভারি করছি। নিজের স্কুটি নিয়ে পৌঁছে যাচ্ছি কখনও কারও বাড়ি বা কারও অফিসে। আমার থিয়েটার গুরু দেবেশ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘মানুষকে পর্যবেক্ষণ করতে, থিয়েটারের এটা অন্যতম রুল।’’ কাজের মাধ্যমে মানুষকে পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছি। থিয়েটার বন্ধ থাকলেও সেই অনুশীলনটা হয়ে যাচ্ছে আমার। এটা বড় পাওনা।’
বাঁধা গৎ-এর পেশা ছেড়ে সমাজের পুরোনো ধ্যান-ধারণার মূলে আঘাত হেনে সংগীতা যখন মানুষের হাতে তাদের পছন্দসই খাবার তুলে দিচ্ছেন, তাদের থেকে নিচ্ছেন জীবন-নাটকের পাঠ, তখন শহরের অনেক বাসিন্দা সংগীতার এই সাহসকে জানাচ্ছেন সালাম।
তবে অনেকে এটা মেনে নিতে পারেননি। তাদের উদ্দেশে ৩০ মে সংগীতা তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘হ্যাঁ, আমি জোমাটো ডেলিভারির কাজ করি। আর এই কাজে আমি গর্ববোধ করি। সোসাইটিতে আমাকে নিয়ে যাদের সমস্যা আছে, যারা আমাকে দেখলেই বলছেন, ‘‘এত পড়াশোনা করে জোমাটো? তোর তো কোনো আর্থিক সমস্যা নেই।’’
‘...তাদের বলছি, থিয়েটার থেকে যে নৈতিক শিক্ষা পেয়েছি, সেটাই বলছি, আমার কাছে লোক না ঠকিয়ে যে অর্থ উপার্জন করা যায়, সেটা সম্মানের।’