বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপি প্রত্যাশিত ফল করতে না পারায় আদি বিজেপি ও নব্য বিজেপির অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসে পড়েছে। সংগঠনের দুর্বলতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, যা নিয়ে সম্প্রতি বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে ঘিরে ধরে আসানসোল ও চুঁচুড়ায় বিক্ষোভ দেখানোর মতো ঘটনা ঘটেছে।
এ পরিস্থিতিতে দিলীপ ঘোষ কলকাতায় মঙ্গলবার সাংগঠনিক বৈঠক ডাকেন।
দিলীপ ঘোষের কলকাতায় সাংগঠনিক বৈঠকের সময় রাজ্যের বিরোধী দলের নেতা বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী দিল্লিতে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ নিয়ে বিজেপির অন্দরে জল্পনা তুঙ্গে।বিজেপির সর্বভারতীয় সহসভাপতি মুকুল রায় বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না।
অনেকের যুক্তি, এটা রাজ্যের মিটিং। মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠ সূত্রে অবশ্য জানা গেছে, তিনি সদ্য করোনামুক্ত হয়েছেন। ভিড় এড়িয়ে চলছেন। তার স্ত্রীও অসুস্থ। হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে। তবে বিজেপির সঙ্গে মুকুলের সম্পর্ক যে আগের মতো যাচ্ছে না, বিভিন্ন ঘটনায় তা স্পষ্ট।
মুকুল এক সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘এসবের মধ্যে আমি নেই। কোনো বৈঠকের কথা আমি জানি না।'
মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠকে দিলীপ বলেন, ‘প্রত্যেকের মতো মুকুল রায়কে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। পরিস্থিতি অনুকূল থাকলে তিনি আমায় আশ্বাস দিয়েছিলেন আসবেন বলে। মুকুল বাবুর স্ত্রী অত্যন্ত অসুস্থ। ওনারা সমস্যার মধ্যে রয়েছেন।'
মুকুলের ছেলে শুভ্রাংশুও বৈঠকে ছিলেন না। তৃণমূল কংগ্রেস সরকার গঠনের পর শুভ্রাংশুর একটি ফেসবুক পোস্ট নিয়ে জল ঘোলা হয়।
ওই পোস্টে শুভ্রাংশু বলেন, 'সদ্য গঠিত একটি নির্বাচিত সরকারকে আক্রমণ না করে আত্মসমালোচনা করা দরকার।'
এ নিয়ে বিজেপির সঙ্গে শুভ্রাংশুর দূরত্ব তৈরি হয়। সম্প্রতি তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় শুভ্রাংশুর মাকে হাসপাতালে দেখতে গেলে তা নিয়ে তৃণমূল ও রায় পরিবারের সম্পর্ক নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা তৈরি হয়।
দিলীপের বৈঠকে উপস্থিত থাকেননি সৌমিত্র খাঁ, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।
দলবিরোধী কাজকর্মে নজর রাখতে শৃঙ্খলা কমিটি গঠন করেছে রাজ্য বিজেপি। মুকুলের ছেলের ফেসবুক পোস্টে দল অস্বস্তিতে পড়েছিল।
মঙ্গলবারের বৈঠকে দিলীপ বলেন, ‘সুভাষ সরকার, বিশ্বপ্রিয় রায়চৌধুরী, রথীন বসু এই কমিটিতে থাকবেন। কমিটির কাজ হবে দল-বিরোধী কাজে নজর রাখা।'
এর মাধ্যমে সর্বস্তরের কর্মীদের বার্তা দেয়া- সমস্যা হলে যেন দলের ভেতরে কথা হয়।
পাশাপাশি রাজ্যে ভোট-পরবর্তী সহিংসতা নিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে যাওয়া হবে বলে জানান দিলীপ।
ঘরছাড়া কর্মীদের ঘরে ফেরানোর দাবিতে আন্দোলনে যাবে বিজেপি। তার জন্য সংগঠন মেরামত করা দরকার।
সে কারণে আন্দোলনের রূপরেখা ঠিক করতে নাকি দিল্লি গেছেন শুভেন্দু। কিন্তু নাড্ডা ও শাহের মধ্যকার সাংগঠনিক আলোচনায় দিলীপ ঘোষ বাদ কেন, প্রশ্ন ঘুরছে রাজনৈতিক মহলে।
বিরোধী দলের নেতা শুভেন্দু অধিকারী অবশ্য টুইট করে জানিয়েছেন, 'কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বাংলা নিয়ে কথা বলেছি। তার আশীর্বাদ চেয়েছি। উনি আশ্বস্ত করে জানিয়েছেন, বাংলার পাশেই থাকবেন।'