প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রকৃতি সহায়- পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এ ভাবনাকে বাস্তবায়ন করতে ২৪ সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে রাজ্য সরকার।
ভারতের সুন্দরবন উপকূল এলাকার বাসিন্দাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি 'প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রকৃতি সহায়' রূপায়িত করতে ২৪ জনের এক বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করলেন মমতা।
নদী বিশেষজ্ঞ ড. কল্যাণ রুদ্রের নেতৃত্বে গঠিত এ কমিটিতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, কল্যাণী বিধান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা রয়েছেন বলে সোমবার নবান্নে সাংবাদিকদের জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা।
ভারতের সুন্দরবন ও সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকার ভূখণ্ড রক্ষায় কোন প্রজাতির গাছ লাগানো যায়, দুর্যোগ মোকাবিলায় কী কী ব্যবস্থা নেয়া যায়, সে বিষয়ে সুপারিশ করবে এ কমিটি।
নবান্ন সূত্রে খবর, আম্পান ও ইয়াস সমুদ্র উপকূলসংলগ্ন দীঘা, শঙ্করপুর, মন্দারমনিসহ বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে তছনছ করেছে।
স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়, উপকূলবর্তী বিভিন্ন এলাকায় দুশ থেকে তিনশ মিটার স্থলভূমিতে ঢুকে গেছে সমুদ্র।
পরিবেশ দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সুন্দরবন বা পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূলবর্তী এলাকা কংক্রিট দিয়ে বেঁধে ফেললে দুর্যোগ মোকাবিলা করা সহজ। কিন্তু খরচ অনেক বেশি।'
এ জন্য মাটির বাঁধের সঙ্গে বেশি করে সবুজ ব্যবহার করে কংক্রিটের খরচের চেয়ে এক-দশমাংশ খরচ কম করে একই রকম ফল পাওয়া যেতে পারে বলে মনে করেন ওই কর্মকর্তা।
পূর্ব মেদিনীপুরে ব্যাপক হারে ঝাউগাছ লাগানো হবে। এ জন্য বন দপ্তরের জমি ছাড়াও সরকারি খাসজমিও চিহ্নিত করা হচ্ছে।
সুন্দরবনে সাত রকম প্রজাতির ম্যানগ্রোভ লাগানো হবে। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে গাছ লাগানো হবে বলে পরিবেশ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে।
কোস্টাল রেগুলেশন আইন কঠোরভাবে প্রয়োগে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার।
সমুদ্রসৈকতে নির্মিত একের পর এক হোটেল, যা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে বলে পরিবেশ কর্মীদের অভিযোগ। এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতাও বিরক্ত। এবার কড়াভাবে প্রয়োগ হবে কোস্টাল রেগুলেশন অ্যাক্ট, খবর নবান্ন সূত্রের।
এদিকে ইয়াসের ক্ষয়ক্ষতি খতিয়ে দেখতে সোমবার রাজ্যে এসেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে এ দলে আছেন বিপর্যয় মোকাবিলা, কৃষি ও সংশ্লিষ্ট আধিকারিকরা। আকাশপথে পাথরপ্রতিমা, গোসাবা, হিঙ্গলগঞ্জ, দীঘা, শঙ্করপুর তাজপুর দেখে মঙ্গলবার নবান্নে বৈঠক করবেন তারা। বুধবার দিল্লিতে প্রতিবেদন দেয়ার কথা।
রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকার ইয়াসে ক্ষয়ক্ষতির একটি প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। অবশ্য কেন্দ্র কত টাকা দেবে তা অনেকটাই নির্ভর করছে কেন্দ্রের পাঠানো এ কমিটির প্রতিবেদনের ওপর।