ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বদলি হিসেবে দিল্লিতে না গিয়ে বরং সোমবার অবসর নিয়েছেন। এরপরই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা দিয়েছেন, আলাপন দক্ষ প্রশাসক হিসেবে করোনা নিয়ন্ত্রণে অনেক সুনাম কুড়িয়েছেন। তাই আগামী তিন বছরের জন্য তাকে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘূর্ণিঝড় ইয়াস-পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি পর্যালোচনার সভায় উপস্থিত না থাকার কারণ জানতে আলাপনকে শোকজ করেছে কেন্দ্র।
সোমবার সন্ধ্যায় আলাপনকে ওই শোকজ চিঠি দেয়া হয়। আগামী তিন দিনের মধ্যে সেই চিঠির জবাব দিতে বলেছে কেন্দ্র। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনে তাকে এই নোটিশ পাঠিয়েছে সরকার।
আলাপনকে নিয়ে টানাপোড়েনের শুরু হয় ঘূর্ণিঝড় ইয়াস পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানার পর।
গত ২৮ মে কলাইকুন্ডায় প্রধানমন্ত্রীর ঘূর্ণিঝড় ইয়াস-পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি পর্যালোচনা বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী ও মুখ্য সচিব উপস্থিত থাকেননি। তারা দুজনই মুখ্যমন্ত্রীর নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী দীঘা চলে যান।
এরপর কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে মুখ্য সচিবকে বদলির নির্দেশ দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়। রাজ্যের পক্ষ থেকেও চিঠি প্রত্যাহারে কেন্দ্র সরকারকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সোমবার সকাল পর্যন্ত তার কোনো জবাব আসেনি।
পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লেখেন। রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা না করে বেআইনি ও অগণতান্ত্রিক এই চিঠি প্রত্যাহারের আবেদন জানান তিনি। তাতেও কোনো উত্তর আসেনি।
উল্টো মুখ্য সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে আবার কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে দুপুরে চিঠি দিয়ে কাজে যোগদান না করার কারণ জানিয়ে মঙ্গলবার সকাল ১০টায় দিল্লিতে কাজে যোগ দিতে বলা হয়।
তার আগে সোমবারই অবসর নেয়ার কথা জানান আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়।
সোমবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘এটি দুর্ভাগ্যজনক। আমি কখনোই এটা মানব না। আমাদের আলাপনকে চাই। আমরা তাকে রাজ্যের প্রয়োজনে রেখেছি। তিন মাস নয়, আগামী তিন বছর মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করবেন আলাপন।’
তিনি বলেন, ‘নতুন মুখ্য সচিব হচ্ছেন হরি কৃষ্ণ দ্বিবেদী এবং স্বরাষ্ট্রসচিব হচ্ছেন বিপি গোপালিকা। বিজেপি সরকার আলাপনকে ডাকার কোনো কারণ পর্যন্ত দেখায়নি। একদিন ওদের পস্তাতে হবে।’
ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এমন নির্দয় প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আগে দেখিনি। দেশের সব রাজ্যের এককাট্টা হয়ে এর বিরুদ্ধে সরব হওয়া উচিত। বিরোধী দলগুলোর মুখ্যমন্ত্রীদের একজোট হওয়া উচিত। বিজেপি সরকার করোনা মহামারি, অর্থনীতি সব সামলাতে ব্যর্থ। বিজেপি স্বৈরাচারীর মতো, হিটলার ও স্ট্যালিনের মতো আচরণ করছে।’
আলাপনের অবসর নিয়ে মমতা বলেন, ‘আমি চাইলে ওনাকে মুখ্য সচিব হিসেবে আটকে রাখতে পারতাম। সেটা আমি করিনি। আলাপন নিজেই অবসর নিতে চেয়েছিলেন। আমি তাকে রাজ্যের জন্য কাজ করার অনুরোধ করি।’
মমতার অভিযোগ, ‘বিজেপি ভোটে হেরে প্রতিহিংসার রাজনীতি করছে। ভোট-পরবর্তী সহিংসতার কথা বলে চিৎকার করছে। রাজ্যের সঙ্গে কথা না বলে, এটা করতে পারে না। এটা কি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো আঘাত নয়? এভাবে কি কেন্দ্র-রাজ্য লড়াই চলবে?’
ক্ষুব্ধ মমতা বলেন, ‘বাংলা হারতে জানে না। প্রধানমন্ত্রী এখনও আমার চিঠির উত্তর দিতে পারেননি। আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় আজ অবসর নিয়েছেন। আমলাতন্ত্রকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। এটা হওয়া উচিত নয়। সংবিধানে এ নিয়ে লক্ষণ রেখা টানা আছে। সুপ্রিম কোর্টেরও নির্দেশ আছে।’