মুখ্যসচিব হিসেবে অবসর নিলেন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার তার অবসর নেয়ার কথা ছিল। কেন্দ্রীয় সরকার তিন মাসের জন্য মেয়াদ বৃদ্ধি করেও দিল্লিতে বদলি করায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
‘এটি দুর্ভাগ্যজনক। আমি কখনোই এটা মানবো না। আমাদের আলাপনকে চাই। আমরা তাকে রাজ্যের প্রয়োজনে রেখেছি। তিন মাস নয়, আগামী তিন বছর মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করবেন আলাপন।’
সোমবার নবান্নে সাংবাদিকদের এমন কথাই বলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তিনি বলেন, ‘নতুন মুখ্যসচিব হচ্ছেন হরি কৃষ্ণ দ্বিবেদী এবং স্বরাষ্ট্র সচিব হচ্ছেন বিপি গোপালিকা। বিজেপি সরকার আলাপনকে ডাকার কোনো কারণ পর্যন্ত দেখায়নি। একদিন ওদের পস্তাতে হবে।’
ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এমন নির্দয় প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আগে দেখিনি। দেশের সব রাজ্যের এককাট্টা হয়ে এর বিরুদ্ধে সরব হওয়া উচিত। বিরোধী দলগুলোর মুখ্যমন্ত্রীদের একজোট হওয়া উচিত। বিজেপি সরকার করোনা মহামারি, অর্থনীতি সব সামলাতে ব্যর্থ। বিজেপি স্বৈরাচারীর মতো, হিটলার ও স্ট্যালিনের মতো আচরণ করছে।’
আলাপনকে ঘিরে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত চরম আকার নিয়েছে। কেন্দ্র সরকার বদলির চিঠি দিয়ে আলাপনকে ৩১ মে সোমবার সকাল ১০টায় দিল্লির দপ্তরে যোগ দিতে নির্দেশ দিয়েছে।
অথচ রাজ্যের অনুরোধে করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে মুখ্যসচিব আলাপনের চাকরির মেয়াদ তিন মাস বৃদ্ধি করেছিল ভারত সরকার ।
তবে শুক্রবার কলাইকুন্ডায় প্রধানমন্ত্রীর ঘূর্ণিঝড় ইয়াস পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি পর্যালোচনা বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী ও মুখ্যসচিব উপস্থিত থাকেন নি। তারা দুজনেই মুখ্যমন্ত্রীর নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী দীঘা চলে যান।
এরপর কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে মুখ্যসচিবকে বদলির নির্দেশ দিয়ে চিঠি পাঠানো হয় । রাজ্যের পক্ষ থেকেও চিঠি প্রত্যাহারে কেন্দ্র সরকারকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সোমবার সকাল পর্যন্ত তার কোনো জবাব আসেনি ।
পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লেখেন। রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা না করে বেআইনি ও অগণতান্ত্রিক এই চিঠি প্রত্যাহারের আবেদন জানান তিনি। তাতেও কোনো উত্তর আসেনি।
উল্টো মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে আবার কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে দুপুরে চিঠি দিয়ে কাজে যোগদান না করার কারণ জানিয়ে মঙ্গলবার সকাল ১০টায় দিল্লিতে কাজে যোগ দিতে বলা হয়।
আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে লেখা কেন্দ্রের ওই চিঠি নিয়ে নবান্নের সাংবাদিক বৈঠকে মমতা অভিযোগ করেন, ‘প্রতিহিংসার মনোভাব থেকেই আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে বদলির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কেন আচমকা এই নির্দেশ তার কারণ পর্যন্ত চিঠিতে বলা হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘আমি চাইলে ওনাকে মুখ্যসচিব হিসেবে আটকে রাখতে পারতাম। সেটা আমি করিনি। আলাপন নিজেই অবসর নিতে চেয়েছিলেন। আমি তাকে রাজ্যের জন্য কাজ করার অনুরোধ করি।’
মমতার অভিযোগ, ‘বিজেপি ভোটে হেরে প্রতিহিংসার রাজনীতি করছে। ভোট পরবর্তী সহিংসতার কথা বলে চিৎকার করছে। রাজ্যের সঙ্গে কথা না বলে, এটা করতে পারে না। এটা কি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো আঘাত নয়? এভাবে কি কেন্দ্র-রাজ্য লড়াই চলবে?’
ক্ষুব্ধ মমতা বলেন, ‘বাংলা হারতে জানে না। প্রধানমন্ত্রী এখনও আমার চিঠির উত্তর দিতে পারেন নি। আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় আজ অবসর নিয়েছেন। আমলাতন্ত্রকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। এটা হওয়া উচিত নয়। সংবিধানে এ নিয়ে লক্ষণ রেখা টানা আছে। সুপ্রিম কোর্টেরও নির্দেশ আছে।’