পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে দলের ভরাডুবির কারণ পর্যালোচনায় বসেন রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। কিন্তু আলোচনা ঘুরে যায় ভোটের ফল ঘোষণার পর রাজ্যে চলমান সহিংসতার বিষয়ে।
রাজ্যের সহিংসতার ঘটনা নিয়ে রাজ্য বিজেপির মতামত জানতে চায়নি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যা নিয়ে তাদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। ভোটের ফল প্রকাশের পর সহিংসতার ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে তৃণমূল-বিজেপি দু’পক্ষেরই কর্মীদের।
শপথ নেয়ার পরই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কড়া হাতে আইনশৃঙ্খলা মোকাবিলা করার পদক্ষেপ নেয়। তবে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি দল, জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রতিনিধি দল কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের পাঠিয়ে বাড়াবাড়ি করছে বলে মনে করেন রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশ।
শুক্রবারের ওই পর্যালোচনা বৈঠকে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘নিজেদের লড়াই নিজেদেরই করতে হবে। দলে আর কেন্দ্রীয় শাসন মানা হবে না।
‘ভোট পরবর্তী সহিংসতা নিয়ে দিল্লির নেতৃত্ব আমার কাছে জানতে চেয়েছিল তারা কীভাবে আমাদের সহযোগিতা করতে পারেন। আমি বলেছি, এতদিন আপনারা অনেক সহযোগিতা করেছেন। তার জন্য ধন্যবাদ। এবার আমাদের বিষয় আমাদের বুঝে নিতে দিন।’
দিলীপের বক্তব্যে উপস্থিত বিজেপির রাজ্য স্তরের নেতারা হাততালি দিয়ে ওঠেন ।
ওই দিনের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, আগামী সপ্তাহে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতিনিধি দলের রাজ্যে আসার আপাতত দরকার নেই বলে শীর্ষ নেতৃত্বকে জানিয়ে দেয়া হবে ।
বৈঠকে আক্রান্ত কর্মীদের পাশে দাঁড়াতে রাজ্য নেতাদের জেলায় জেলায় যেতে বলেন দিলীপ ঘোষ।
রাজ্য বিজেপি চাইছে, সহিংসতার প্রশ্নে রাজ্য সরকারের ওপর চাপ বাড়াবে কি না, সে সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় সরকার নিক। কিন্তু রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক লড়াইয়ে দিল্লির নেতারা যেন নাক না গলায় ।
তৃণমূল কংগ্রেস নেতা সৌগত রায় বলেন, ‘দিল্লির বিজেপি নেতারা এতদিন সবকিছু করছিলেন। ওদের সঙ্গে বাংলার কোনো সম্পর্ক ছিল না। দিলীপ ঘোষ এ কথা বলে থাকলে ঠিকই বলেছেন । রাজ্য বিজেপির উচিত, বিরোধী দল হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সহযোগিতা করা।’
বিশ্লেষকদের ভাষ্য, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অনুপস্থিতিতে হারের পর্যালোচনা করে লাভ নেই- এটা ভালোভাবেই জানে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব।
পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় পাঁচ বছরে ৩ জন থেকে বেড়ে ৭৭ জন বিধায়ক হয়েছে বিজেপির। বাম-কংগ্রেস শূন্য বিধানসভায় তারাই এখন একমাত্র প্রধান বিরোধী দল।
এ সাফল্যকে মানুষের সামনে তুলে ধরতে চাইছে রাজ্য বিজেপি। কিন্তু ভোট পরবর্তী সহিংসতা নিয়ে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অতি সক্রিয়তায় চাপা পড়ে যাচ্ছে রাজ্য বিজেপির মনের ইচ্ছে।