জলবিদ্যুতের উৎপাদন তিনগুণ বাড়াতে তিব্বতে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর বাঁধ নির্মাণ করতে যাচ্ছে চীন। ভাটির দেশ হিসেবে এ নিয়ে ভারতের উদ্বেগ শুরু থেকেই। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে তারাও বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা করছে।
তবে পরিবেশবিদদের আশঙ্কা, দুটি বাঁধ ভূমিকম্পপ্রবণ ব্রহ্মপুত্র নদের লাগোয়া এলাকায় তীব্র ভূমিকম্পের আশঙ্কা বাড়াবে। পাশাপাশি আশ্রয়চ্যুত হবে বহু মানুষ।
আসামের ওপর দিয়ে এসে এ নদ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে কুড়িগ্রাম হয়ে। তিন দেশের ওপর দিয়ে বয়ে চলা দুই হাজার ৮৫০কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রহ্মপুত্র এশিয়া মহাদেশের গুরুত্বপূর্ণ নদ হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে এই জোড়া বাঁধের প্রভাব নেতিবাচক হবে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চীন তাদের দেশের জলবিদ্যুতের উৎপাদন কম করে তিনগুণ বাড়াতে চায়। কারণ জলবিদ্যুতের উৎপাদন খরচ সবচেয়ে কম। তাতে তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনের মতো পরিবেশে দূষণ হয় না। যদিও বিশ্বের সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটিও চীনেই। মধ্য চীনের ইয়াংজি নদীর ওপর। এ নাম ‘থ্রি গর্জেস’।
ব্রহ্মপুত্রের ওপর বাঁধ নির্মাণের জন্য বেইজিং বেছে নিয়েছে তিব্বতের মেডগ কাউন্টির একটি সুবিশাল এলাকা। বেইজিংয়ের লক্ষ্য, ওই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বছরে ৩০ হাজার কোটি মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন।
ভারতের উদ্বেগের কারণ, তিব্বতে ওই বাঁধটি যে এলাকায় নির্মাণ করা হবে সেই এলাকা হিমালয় পর্বতমালার অন্তর্ভুক্ত। সেখান থেকেই ব্রহ্মপুত্র নদের উৎপত্তি। নদের পানিপ্রবাহ তিব্বতে চীনের প্রস্তাবিত বাঁধের এলাকা শেষ হয়ে যাওয়ার পর হিমালয় ছেড়ে বেরিয়ে আসবে না।
ভারতের রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ ব্রহ্ম চেলানি একটি সর্বভারতীয় ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘এই বাঁধ ব্রহ্মপুত্র নদের জলপ্রবাহ নিচের দিকে (ভারতের দিকে) নামার প্রতিবন্ধক হয়ে উঠবে। লাগোয়া ভূকম্পপ্রবণ এলাকায় ভূমিকম্পের আশঙ্কা তীব্রতর করে তুলবে। সুবিশাল ওই বাঁধ বানানো হলে বহু স্থানীয় বাসিন্দা আশ্রয়চ্যুত হবেন।'
ব্রহ্মপুত্রের নিম্ন অববাহিকায় ভারতের পাল্টা বাঁধ বানানোর পরিকল্পনারও সমালোচনা করেছেন চেলানি। লিখেছেন, ‘তাতে সমস্যা আরও বাড়বে।’