বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বেফাঁস মন্তব্য করেই দিলীপের উত্থান

  •    
  • ২০ মার্চ, ২০২১ ২২:০১

দিলীপ ঘোষ পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে এক বর্ণময় চরিত্র। গণমাধ্যম তাকে নিয়ে উপহাস করলেও উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। প্রতিদিনই খবরের শিরোনামে তিনি। এটাই নাকি তার উত্থানের রেসিপি।

দু’চার বছর আগেও তাকে কেউ চিনত না। কাজে লাগিয়েছেন একের পর এক বেঁফাস মন্তব্য করে আলোচনার কেন্দ্রে থাকার কৌশলকে। পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচন সামনে রেখে এভাবেই মুখ্যমন্ত্রিত্বের দৌড়ে প্রথম সারিতে উঠে এসেছেন।

তিনি বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ। তার কাঁধেই পশ্চিমবঙ্গে পদ্মের ভবিষ্যত।

কেউ বলেন ছোটলোক, কেউ বলেন অভদ্র। বিরোধী শিবিরে দিলীপবিরোধী বিশেষণের অভাব নেই। তাতেও কুচপরোয়া নেহি রাজনীতির ময়দানে মাত্র বছর পাঁচেকের শিশু দিলীপের।

বিজেপির নির্বাচনি প্রতীক পদ্ম। তৃণমূলের ঘাসফুল। এই দুই ফুলের লড়াই এখন জমজমাট। লড়াইয়ের নেপথ্যে বিজেপির বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।

দিলীপের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। নির্বাচনি হলফনামায় আছে উচ্চমাধ্যমিক পাশের পর ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমার কথা। যার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অনেকেই। বিষয়টি নিয়ে মামলাও হয়েছে।

সবমিলিয়ে দিলীপ ঘোষ পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে এক বর্ণময় চরিত্র। রাজনীতির মাঠে উপহাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র হলেও তাকে উপেক্ষার সুযোগ নেই। প্রতিদিনই কোনো না কোনোভাবে আছেন খবরের শিরোনামে।

‘গরুর দুধে সোনা আছে’, ‘গো-চনা সেবন করলে করোনা হবে না’- এমন বহু বিতর্কিত মন্তব্য দিলীপকে প্রচারের আলোয় এনেছে।

৫৬ বছরের হিন্দুত্ববাদী নেতার জন্ম ১৯৬৪ সালের ১ আগস্ট, পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গলমহল বলে পরিচিত ঝাড়গ্রামের কুলিয়ারা গ্রামে। মা পুষ্প লতা ও বাবা ভোলানাথ ঘোষের চার ছেলের মধ্যে দিলীপ মেজো।

পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায় (ওবিসি) সদগোপ বংশে জন্ম তার। বিজেপি জিতলে তিনিই প্রথম পশ্চিমবঙ্গের ওবিসি মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন। তবে রাজ্যে দলের দায়িত্ব তার কাঁধে থাকলেও মুখ্যমন্ত্রী পদে এখনও কাউকে মনোনয়ন দেয়নি দল।

দিলীপ ঘোষ বিয়ে করেননি। ভারতের হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের (আরএসএস) প্রচারক ছিলেন। ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০৭ পর্যন্ত আন্দামান ও নিকোবরে আরএসএসের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

সুনামির সময় ত্রাণ ও উদ্ধার কাজে বিশেষ পারদর্শিতার পরিচয় দেন প্রতিদিন শরীরচর্চা করা মানুষটি। দুর্গতদের পাশে দাঁড়ান। অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। নজরে পড়ে যান সংঘের লোকেদের।

এরপর তাকে কাজ করতে হয় সংঘের প্রধান কে সুধাকরণের সহকারী হিসেবে। সেখানেও দক্ষতা দেখান। রাজনীতিতে তেমন একটা আগ্রহ ছিল না বলে জানান দিলীপ ঘোষ।

কিন্তু ২০১৪ সালে আরএসএস-ই তাকে বিজেপিতে পাঠায়। প্রথমে পশ্চিমবঙ্গে দলের সাধারণ সম্পাদক হন। এক বছরের মধ্যে হয়ে যান বিজেপির রাজ্য সভাপতি।

পশ্চিমবঙ্গে তখন মধ্যগগনে মমতার রাজত্ব। বিজেপির তেমন অস্তিত্বই নেই। লোকসভার ৪২টি আসনের মধ্যে মাত্র দুটি ছিল বিজেপির। সাংগঠনিক শক্তিও অতি সামান্য। সেখান থেকে আজ ক্ষমতার দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে।

দিলীপ দায়িত্ব নেয়ার পরই ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচন হয় পশ্চিমবঙ্গে। সেই ভোটে ২৯৪ আসনের মধ্যে বিজেপি পায় মাত্র তিনটি। কিন্তু দলের ভোট ৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেড়ে হয় ১০ দশমিক ১৬ শতাংশ।

খড়্গপুর কেন্দ্র থেকে দিলীপ নিজে জিতে চমকে দেন দলকে। হারিয়ে দেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা জ্ঞানসিং সোহনপালকে। ১৯৮২ সাল থেকে একটানা জিতে আসা জ্ঞানসিং প্রথমবার পরাজিত হন নবাগত দিলীপ ঘোষের কাছে।

পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির শক্ত ঘাঁটির তৈরির সূচনা এভাবেই।

২০১৭ সালে রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেন মমতার এক সময়ের বিশ্বস্ত সহযোগী ভারতের সাবেক রেলমন্ত্রী মুকুল রায়। সংগঠক হিসেবে মুকুল ও দিলীপ মিলে শুরু করেন গ্রাম দখলের লড়াই।

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বে বিজেপি অপ্রত্যাশিত ফল পায় পশ্চিমবঙ্গে। বামেদের প্রায় নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে ঝড়ো প্রচারে ৪২টির মধ্যে ১৮টি আসন দখলে নেয় দলটি। ক্ষমতা আরো কমে যায় কংগ্রেসেরও।

দিলীপ লোকসভা ভোটে হারান কলকাতার চলচ্চিত্র জগতের জনপ্রিয় অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায়কে। এভাবে দলে দিলীপের গুরুত্ব বাড়তে থাকার সঙ্গে বাড়তে লাগলো তার বিতর্কিত মন্তব্যের ঝাঁঝও।

প্রচার মাধ্যমকে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর দক্ষতা রয়েছে দিলীপের। অত্যন্ত ভালো মানুষ বলে ঘনিষ্ঠমহলে পরিচিত। সৌজন্যবোধেরও অভাব নেই। কিন্তু দলের স্বার্থে তার কদর্য ভাষার ব্যবহারে কার্পণ্য নেই।

ছুটে বেড়াচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত। সঙ্গে বিলিয়ে চলেছেন বিতর্কিত মন্তব্য।

নিজেই বলেন, মানুষের মন বুঝে কথা বলেন তিনি। যেখানে গরম দরকার সেখানে খুব গরম, আবার নরম লাগলে মধুর ভাষণ দিতে জানেন।

কিন্তু দিল্লির নেতারা কি দিলীপ সমীকরণ বোঝেন? উত্তরের জন্য ২ মে নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। বিজেপি জিতলেই জানা যাবে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দিলীপের ভাগ্য।

দিলীপ অবশ্য বলছেন, তার কিছু যায় আসে না। দলের প্রতি দায়বদ্ধ তিনি। দল যা বলবে, তাই করবেন। তিনি সেবক মাত্র। বিজেপির নয়, আরএসএসের। উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংঘের একনিষ্ঠ সেবক তিনি।

এ বিভাগের আরো খবর