২০২০ সালের অক্টোবরে ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাইয়ে নজিরবিহীন বিদ্যুৎ বিভ্রাটের পেছনে হাত ছিল চীনের।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান রেকর্ডেড ফিউচার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে এ তথ্য। অনলাইন ডিজিটাল নিরাপত্তা ঝুঁকি বিশ্লেষণের কাজ করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি।
গত ১২ অক্টোবর স্থানীয় সময় সকাল ১০টার পর থেকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হতে শুরু করে মুম্বাইয়ের বাসাবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, পুঁজিবাজার, এমনকি হাসপাতাল আর রেল সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও। দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে এ অচলাবস্থা বিরাজ করে। থমকে যায় ট্রেন চলাচল।
সে সময় কারণ হিসেবে টাটা পাওয়ারের গ্রিডে কারিগরি ত্রুটির কথা জানায় ভারতের ওয়েস্টার্ন রেলওয়ে। শহরের হাসপাতালগুলোতে, বিশেষ করে আইসিইউয়ের কার্যক্রম নিরবচ্ছিন্ন রাখতে কমপক্ষে আট ঘণ্টার জন্য বিদ্যুতের বিকল্প জ্বালানি হিসেবে পর্যাপ্ত ডিজেল সরবরাহের নির্দেশও দিয়েছিল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
রেকর্ডেড ফিউচার বলছে, ভারতের প্রধান বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর কম্পিউটার নেটওয়ার্কে এক ধরনের ম্যালওয়্যার ঢুকিয়ে দিয়েছিল চীনসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান রেডইকো। যার মাধ্যমে সেদিনের এই নজিরবিহীন অচলাবস্থা তৈরি হয়।
এ-সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিবেদনটি নিয়ে প্রথম খবর প্রকাশ করে নিউইয়র্ক টাইমস। এতে বলা হয়, জুনে চীন-ভারতের লাদাখ সীমান্তে সংঘর্ষে ২০ ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার ঘটনার পরপরই চীনের তৈরি ম্যালওয়্যারগুলো সক্রিয় হয়। সারা ভারতে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ নেটওয়ার্কে সেগুলো ছড়িয়ে দেয় চীনা হ্যাকাররা।
রেকর্ডেড ফিউচার জানিয়েছে, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ খাতের সাথে জড়িত ভারতের ১২টি প্রতিষ্ঠানের ২১টি ইন্টারনেট প্রটোকল বা আইপি অ্যাড্রেস ছিল হ্যাকারদের লক্ষ্য। সবগুলো আইপি অ্যাড্রেসই ভারত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তালিকাভুক্ত।
গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মুম্বাইয়ে এই বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সময়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে মহারাষ্ট্র রাজ্যের পাডঘায় অবস্থিত স্টেট লোড ডিসপ্যাচ সেন্টারে ম্যালওয়্যার ছড়ানোর খবরও প্রকাশ হয়। কিন্তু দুটি ঘটনার মধ্যে সম্পৃক্ততার বিষয়টি সে সময় নিশ্চিত করা যায়নি। কিন্তু এর ভিত্তিতেই অনুসন্ধানের মাধ্যমে বেরিয়ে আসে পুরো ইন্ডিয়ান লোড ডিসপ্যাচ সেন্টারে সমন্বিত সাইবার হামলার অনেক তথ্য-প্রমাণ।
ভারতের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার অভ্যন্তরীণ তথ্যে রেকর্ডেড ফিউচারের প্রবেশাধিকার নেই বলে মুম্বাইয়ের বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জন্য দায়ী ম্যালওয়্যারের কোডের বিস্তারিত উদঘাটন করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২০ সালের শুরু থেকেই ভারতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার নেটওয়ার্কে চীনা পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত হ্যাকারদের অনুপ্রবেশ বাড়তে শুরু করে বলে ধারণা করা হচ্ছে।