বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতা চলছেই একদিনে ১৩৯ ফিলিস্তিনিকে হত্যা

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ১৩ জুলাই, ২০২৫ ২২:৫২

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বর্বরতা থামছেই না। গত ২৪ ঘণ্টায় অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার হাসপাতালগুলোতে ১৩৯ জন ফিলিস্তিনির লাশ আনা হয়েছে। একই সময় অন্তত ৪২৫ জন আহত হয়ে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। রবিবার (১৩ জুলাই) এক বিবৃতিতে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় মানবিক সাহায্য পেতে গিয়ে ২৮ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। যার ফলে সাহায্য চাইতে গিয়ে এখন পর্যন্ত নিহতের মোট সংখ্যা ৮৩৩ জনে দাঁড়িয়েছে।

সবশেষ নিহত মিলিয়ে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা যুদ্ধে কমপক্ষে ৫৮ হাজার ২৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। সেই সঙ্গে আহতের সংখ্যা ১ লাখ ৩৮ হাজার ৫২০ জনে দাঁড়িয়েছে। মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, অনেক ভুক্তভোগী এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকা পড়ে আছেন। উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না।

যুদ্ধবিরতি আলোচনা নিয়ে শঙ্কা

ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ২১ মাস ধরে চলা তীব্র লড়াই বন্ধ করার প্রচেষ্টায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির চুক্তি নিয়ে কাতারের দোহায় আলোচনা চলছে। হামাস এবং ইসরায়েল একে অপরকে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছানোর প্রচেষ্টায় বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেছে। এতে গাজা যুদ্ধবিরতি আলোচনা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

কাতারে পরোক্ষ আলোচনা সম্পর্কে অবগত একটি ফিলিস্তিনি সূত্র এএফপিকে জানিয়েছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত ভূখণ্ডে ইসরায়েলি সেনা রাখার প্রস্তাব ৬০ দিনের বিরতির জন্য একটি চুক্তিকে আটকে গেছে। তবে ইসরায়েলি পক্ষের এক ঊর্ধ্বতন রাজনৈতিক কর্মকর্তা আলোচনার সংবেদনশীলতার কারণে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হামাসের অনমনীয়তা এবং ইচ্ছাকৃতভাবে একটি চুক্তিকে ব্যর্থ করার চেষ্টা করছে।

গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা জানিয়েছে, শনিবার (১২ জুলাই) গাজায় কমপক্ষে ৩৮ জন নিহত হয়েছে। ইসরায়েল বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয়স্থলে রাতভর বিমান হামলা চালিয়েছে। গাজা শহরে বসবাসকারী বাসাম হামদান এএফপিকে বলেন, আমরা যখন ঘুমাচ্ছিলাম, তখন একটি বিস্ফোরণ ঘটে। দুই ছেলে, একটি মেয়ে এবং তাদের মা অবস্থান করছিলেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তাদের ছিন্নভিন্ন অবস্থায় দেখতে পেয়েছি, তাদের দেহাবশেষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে’।

এদিকে তেল আবিবে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে এসে সরকারের কাছে জিম্মি মুক্তির চুক্তি স্বাক্ষরের আহ্বান জানিয়েছে। হামাস এবং ইসরায়েল উভয়ই বলেছে, যদি একটি চুক্তি হয় তাহলে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যোদ্বাদের হামলার পর থেকে আটক ১০ জন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, তিনি যুদ্ধের স্থায়ী অবসানের জন্য আলোচনায় বসতে প্রস্তুত।

গাজায় ত্রাণ নিতে গিয়ে ২৪ জন নিহত, অভিযোগ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে

দক্ষিণ গাজার একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছে ইসরায়েলি হামলায় ২৪ জন নিহত হওয়ার খবর দিয়েছে ওই এলাকার নাসের হাসপাতাল। সেখানে উপস্থিত ফিলিস্তিনিদের ভাষ্য, শনিবার (১২ জুলাই) খাবার নিতে গেলে ইসরায়েলি সেনারা গুলি চালায়।

তবে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী বলছে, সেখানে তাদের গুলিতে কোনো হতাহতের খবর তাদের ‘জানা নেই’।

অন্যদিকে এক ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তা বলেছেন, হুমকি মনে করে লোকজনকে ছত্রভঙ্গ করতে সতর্কতামূলক গুলি চালানো হয়েছিল। উভয় পক্ষের দাবি বিবিসি স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি। ইসরায়েল বিবিসিসহ আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলোকে গাজায় প্রবেশের অনুমতি দেয় না।

বিবিসির হাতে আসা এক ভিডিওতে দেখা যায়, নাসের হাসপাতাল চত্বরে একাধিক মৃতদেহের ব্যাগ, যার চারপাশে রক্তমাখা পোশাক পরা মানুষ ও নার্সরা দাঁড়িয়ে আছেন। আরেকটি ভিডিওতে একজন বলেন, লোকজন ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিল, তখন পাঁচ মিনিট ধরে তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। এ ঘটনায় একজন প্যারামেডিক ইসরায়েলি সেনাদের বিরুদ্ধে ‘ঠাণ্ডা মাথায় হত্যার’ অভিযোগ তুলেছেন।

ওই ভিডিওগুলোর সত্যতাও বিবিসি যাচাই করতে পারেনি। বার্তা সংস্থা রয়টার্স ঘটনার বিবরণ জানতে চেয়েছেন কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর কাছে। তারা বলেছেন, লোকজনের মাথা ও দেহ লক্ষ্য করে গুলি করা হয়েছে। নাসের হাসপাতালে সাদা কাফনে মোড়ানো লাশও দেখার কথা লিখেছে রয়টার্স।

বিবিসি লিখেছে, গাজায় খাবার সংগ্রহের সময় প্রায় প্রতিদিনই ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে হতাহতের খবর আসছে। গত মার্চে গাজায় ত্রাণ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় ইসরায়েল এবং তারপর হামাসের বিরুদ্ধে ফের সামরিক অভিযান শুরু করে। আর তাতে দুই মাস ধরে চলা যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যায়।

ইসরায়েল বলেছে, তারা হামাসকে চাপে ফেলতে চায়, যাতে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীটি ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দেয়। বৈশ্বিক বিশেষজ্ঞদের দুর্ভিক্ষের আশঙ্কার মধ্যে মে মাসের শেষ দিকে অবরোধ কিছুটা শিথিল করা হয়; এখনো সেখানে খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানির তীব্র সংকট রয়েছে। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, গাজাজুড়ে হাজার হাজার শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে।

জাতিসংঘের কিছু সহায়তা ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার পাশাপাশি গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) মাধ্যমে একটি নতুন ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থা চালু করেছে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র। তাদের ভাষ্য, হামাস যেন ত্রাণ চুরি করতে না পারে, সেজন্যই এই ব্যবস্থা।

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় শুক্রবার বলেছে, তারা ত্রাণ সংশ্লিষ্ট ৭৯৮ হত্যার তথ্য নথিবদ্ধ করেছে। এর মধ্যে ৬১৫টি ঘটেছে জিএইচএফ পরিচালিত ত্রাণকেন্দ্র এলাকায়। বাকি ১৮৩টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে জাতিসংঘ ও অনান্য বহরের আশপাশে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী স্বীকার করেছে, কিছু ঘটনায় বেসামরিক মানুষ ‘ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছে এবং ‘জনগণ ও (ইসরায়েলি) বাহিনীর মধ্যে সম্ভাব্য সংঘর্ষ যতটা সম্ভব কমানোর জন্য’ তারা কাজ করছে। জিএইচএফের অভিযোগ, জাতিসংঘ গাজার হামাস-পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘ভুল ও বিভ্রান্তিকর’ পরিসংখ্যান ব্যবহার করছে।

এ বিভাগের আরো খবর