ভারতে লাগামছাড়া দাম বৃদ্ধি হচ্ছে রান্নার গ্যাসের। চলতি মাসেই পর পর তিন দফায় দাম বাড়ল রান্নার গ্যাসের। দু সপ্তাহ আগে এক লাফে বেড়েছিল ২৫ টাকা। বুধবার রাত থেকে এক লাফে আরও ২৫ টাকা দাম বাড়ল সিলিন্ডারের। অর্থাৎ ফেব্রুয়ারিতেই রান্নার গ্যাসের দাম বাড়ল মোট ১০০ টাকা।
সেই সঙ্গে পেট্রল-ডিজেলের দামও রেকর্ড উচ্চতায়। অবিলম্বে জ্বালানি ও গ্যাসের দাম না কমলে মূদ্রাস্ফীতি হতে পারে। বৃহস্পতিবার এই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাশ।
বৃহস্পতিবার বম্বে চেম্বার অফ কমার্সের ১৮৫তম প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে ভার্চুয়াল বক্তব্য রাখেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গর্ভনর। তিনি জ্বালানি এবং গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
গভর্নর বলেন, ‘জ্বালানি ও গ্যাসের আকাশছোঁয়া দামবৃদ্ধি ভারতীয় অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে। কেন্দ্র-রাজ্যের উচিত সমন্বয় রেখে দাম কমাতে পদক্ষেপ নেয়া।’
তার পরামর্শ, ‘ডিজেল-পেট্রল-গ্যাসের ওপর ধাপে ধাপে বসানো কর কমালেই কিছুটা কমবে দাম। যেহেতু জ্বালানির ওপর কেন্দ্র ও রাজ্য উভয়েই কর বসায়, তাই দু পক্ষকে সমন্বয় করতে হবে। মনে রাখতে হবে, করোনা আবহে যে ভাবে কোষাগারে চাপ পড়েছে, সেখান থেকে আয়ের মুখ দেখা প্রয়োজন। কেন্দ্র-রাজ্যের সরকারের সেই বাধ্যবাধকতা আছে। কিন্তু এভাবে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি হলে মুদ্রাস্ফীতি হবে। প্রভাবিত হবে উৎপাদন শিল্প।’
তার আশা, করোনা পরবর্তী সময়ে আর্থিক সঙ্কট থেকে বেরোতে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে ভারত। আগামী দুবছরের মধ্যে ঘুরে দাঁড়াবে ভারতীয় অর্থনীতি।
ডিসেম্বর থেকে তিন দফায় বেড়ে চলতি মাসেই সিলিন্ডারপিছু ভর্তুকিহীন গ্যাসের দাম হয় ৭৪৫ টাকা ৫০ পয়সা। ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকে ভর্তুকিহীন ১৪ কেজি ২০০ গ্রাম এলপিজি সিলিন্ডারের দাম বেড়ে হয় ৭৪৫ টাকা ৫০ পয়সা। আগে যার দাম ছিল ৭২০ টাকা ৫০ পয়সা। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি সিলিন্ডারপ্রতি ৫০ টাকা বাড়ে রান্নার গ্যাসের দাম। ভর্তুকিযুক্ত রান্নার গ্যাসের দাম হয় ৭৯৫ টাকা ৫০ পয়সা। ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন এখন নিয়ম করে মাসের শুরুর দিকেই রান্নার গ্যাসের দাম পর্যালোচনা করে। প্রতি মাসের শুরুতে জানিয়ে দেওয়া হয় সিলিন্ডারের নতুন দাম। অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান পেট্রোল ও ডিজেল জিএসটির আওতায় আনলে দাম অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন।
শাসকদল বিজেপির বক্তব্য: বিভিন্ন রাজ্যের বাধাতেই তা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ, এখনকার নিয়ম মতো পেট্রল-ডিজেলের উপরে কেন্দ্র নির্দিষ্ট হারে শুল্ক নিলেও বিভিন্ন রাজ্য আলাদা আলাদা হারে ‘ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স’ (ভ্যাট) বসায়। এর ফলে বিভিন্ন রাজ্যে এই দুই জ্বালানির দাম ভিন্ন ভিন্ন হয়। যেটা সব থেকে বেশি মহারাষ্ট্রে এবং সবচেয়ে কম আন্দামান-নিকোবরে। কিন্তু জিএসটি চালু হলে দেশের সর্বত্র একই দাম থাকবে।
বিজেপি সূত্রের খবর, আগামী এপ্রিল-মে মাসে পাঁচটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার আগে পেট্রল-ডিজেল জিএসটির আওতায় নেবার প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার।