সৌদি আরবে সংস্কারের ঢেউ এবার লেগেছে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায়। পাঠ্যক্রমে ধর্মীয় ‘বিদ্বেষমূলক’ ও ‘উগ্র’ বক্তব্যগুলো সরিয়ে ফেলতে যাচ্ছে দেশটির শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
পাঠ্যক্রম কেমন হওয়া উচিত, সে বিষয়ে জনগণের মতও নিতে যাচ্ছে দেশটির সরকার।
দেশটির প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম আরব নিউজের খবরে বলা হয়, স্কুলগুলোতে এতদিন পড়ানো হতো ‘বিধর্মীকে হত্যা করা জায়েজ’, ‘তাদের সঙ্গে মেশা যাবে না, এমনকি খাবার খাওয়াও হারাম’।
সৌদি শিক্ষামন্ত্রী হামাদ আল শেইখের মন্তব্য উল্লেখ করে ইংরেজি ভাষার এই দৈনিকে বলা হয়, পাঠ্যবইয়ে এ ধরনের ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য শিশুদের উগ্রপন্থার দিকে ঠেলে দেবে বিবেচনায় পাঠ্যক্রম থেকে সেগুলো তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
শিক্ষামন্ত্রী হামাদের একটি বক্তব্যও ছেপেছে পত্রিকাটি। তিনি জানান, শিক্ষার উন্নয়ন সম্পর্কিত যেকোনো তথ্য বা পরামর্শ আমলে নেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আর এ জন্য একটি নতুন পোর্টাল চালু করেছে রিয়াদ।
সৌদি শিক্ষা ব্যবস্থাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করাই সরকারের লক্ষ্য বলেও জানান হামাদ।
সরকার যে পোর্টাল করতে যাচ্ছে তাতে শিক্ষার্থী, অভিভাবক এমনকি সাধারণ মানুষ তাদের তথ্য বা মতামত তুলে ধরতে পারবে বলেও জানান মন্ত্রী।
তবে দ্য অস্ট্রেলিয়ান কাউন্সিল ফর এডুকেশনের (এসিইআর) উদ্যোগে এই ব্যবস্থা চালু হচ্ছে সৌদি আরবে। দেশটির পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়েও কাজ করছে সংস্থাটি।
অস্ট্রেলিয়ার একদল প্রশিক্ষক এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে সৌদি শিক্ষকদের।
সৌদি আরবে শিক্ষা ব্যবস্থা এখনও সেকেলে। দীর্ঘসময় দেশটির শিক্ষা ব্যবস্থায় কোনো পরিবর্তন আসেনি। কোন পদ্ধতিতে শিক্ষা কার্যক্রম চলবে, তা কেবল সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিত।
যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান সৌদি সিংহাসনের উত্তরাধিকারী মনোনীত হওয়ার পর থেকেই সৌদি আরবকে আধুনিকায়ন করতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন। এ নিয়ে তাকে বিরোধিতার মধ্যে পড়তে হয়েছে। তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। বেশ কিছুদিন অন্তরালেও থাকতে হয়েছে।
রাজপরিবারে বিভেদের কারণে যুবরাজবিরোধী অনেকের মৃত্যুদণ্ড হয়েছে; কারও কারও মিলছে না খোঁজ।
তবে সালমান কট্টরপন্থা থেকে তার দেশকে বের করে আনার চেষ্টা করছেন।
নারীদের ওপর থেকে কঠোর বিধি-নিষেধ তুলে নিয়েছেন যুবরাজ সালমান। স্টেডিয়ামে গিয়ে খেলা দেখার সুযোগের পাশাপাশি গাড়ি চালনোর অনুমতিও পেয়েছেন তারা। এমনকি যেতে পারছে সিনেমা হলে।
বিদেশ ভ্রমণেও স্বামী বা পরিবারের পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি থাকার বাধ্যবাধকতা তুলে নেয়া হয়েছে।
নারীদের বিষয়ে সবচেয়ে বড় যে সিদ্ধান্তটি এসেছে, সেটি হচ্ছে বোরকা পরা এখন আর বাধ্যতামূলক নেই। সৌদি আরবে এখন হরহামেশা পশ্চিমা ধাঁচে জিন্স ও টপস পরা নারী দেখা যায়। এ নিয়ে যে দেশে খুব একটা হাঙ্গামা হয়েছে, এমনও নয়। এটাই প্রমাণ করে, সৌদি নাগরিকরা তাদের এই পরিবর্তনকে বেশ সাদরে গ্রহণ করেছে।
যুবরাজের এতসব কিছু করার পেছনে অর্থনৈতিক কারণও রয়েছে। তেলসমৃদ্ধ দেশটির অর্থনীতির চালিকাশক্তি জ্বালানি তেল রপ্তানি।
গত কয়েক বছরে তেলের মূল্য পতনে তাদের অর্থনীতি শক্তি হারিয়েছে। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে দেশটির সরকার দেশে ভ্যাট আরোপ করেছে, আয়কর চালু করেছে, নাগরিকদের বিনা মূল্যে দেয়া অনেক সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দিয়েছে।
পর্যটন খাতকেও চাঙ্গা করতে চান যুবরাজ সালমান। গড়ে তোলা হচ্ছে নিয়োম সিটি যেটি বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক শহর হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সেখানে নারীরা বিকিনি পরেও যেতে পারবে, যেটি মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলোতে অভাবনীয়ই বলা যায়।
ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা চালাচ্ছে রিয়াদ, এমন খবরও আসছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। এরই মধ্যে ইসরায়েলের ওপর থেকে ফ্লাইট নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়েছে। ফলে ইহুদি রাষ্ট্রটি এখন সৌদি আরবের আকাশসীমা ব্যবহার করতে পারছে।
ইসরায়েলকে বেশ কয়েকটি মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ স্বীকৃতি দিয়েছে। সৌদি আরবও দিতে পারে বলে আভাস মিলেছে। গোপনে একটি বৈঠকের খবরও ফাঁস হয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে।