বিশ্বের ধনী দেশগুলো করোনা ভ্যাকসিনের বেশিরভাগ ডোজ মজুত করে রাখছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার ও দাতা সংস্থার জোট- পিপলস ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স। এতে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলো ভ্যাকসিন থেকে বঞ্চিত হবে বলে সতর্ক করেছে আন্তর্জাতিক জোটটি।
জরিপ চালিয়ে তারা দেখেছে, আগামী বছরের শেষ নাগাদ ৬৭টি দরিদ্র দেশের প্রতি ১০ জনের মধ্যে মাত্র একজন ভ্যাকসিন টিকা পাবে।
পিপলস ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স বলছে, সম্ভাব্য ভ্যাকসিনগুলোর ৫৩ শতাংশ ডোজ এরই মধ্যে কিনে নিয়েছে ধনী দেশগুলো। এই দেশগুলো বিশ্বের মোট জনসংখ্যার মাত্র ১৪ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করে।
জোট জানায়, শুধু কানাডা ভ্যাকসিনের যত ডোজের চাহিদা দিয়েছে, তাতে দেশটির একেকজন নাগরিক ৫ বার টিকা নিতে পারবেন। এছাড়া ধনী দেশগুলো ভ্যাকসিনের যত চাহিদা দিয়ে রেখেছে, তাতে সেসব দেশের মোট জনসংখ্যাকে তিনবার টিকা দেওয়া যাবে।
অক্সফামের স্বাস্থ্যনীতি ব্যবস্থাপক আনা ম্যারিয়ট বলেন, ‘কার কাছে কী পরিমাণ অর্থ আছে কিংবা কোন দেশে তিনি বাস করেন তার ওপর ভিত্তি করে করোনার ভ্যাকসিন পাওয়া না পাওয়া নির্ভর করতে পারে না। তবে নাটকীয় পরিবর্তন না হলে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ সামনের বছরগুলোতেও নিরাপদ ও কার্যকর ভ্যাকসিন পাচ্ছেন না।’
বিশ্বজুড়ে করোনা ভ্যাকসিনের সুষম বণ্টনে কোভ্যাক্স নামে একটি জোট করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বিশ্বের ১৭২ দেশের কোভ্যাক্স জোট ৯২টি দরিদ্র দেশে ৭০ কোটি করোনার ভ্যাকসিন সরবরাহ করতে চুক্তি করেছে। এই জোটে চীন থাকলেও, নেই রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র।
এতসব প্রস্তুতির মধ্যেও বিশ্বের সবপ্রান্তে ভ্যাকসিন সরবরাহ অসম্ভব বলছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, অক্সফাম, গ্লোবাল জাস্টিস নাও-সহ বিভিন্ন সংস্থার নেটওয়ার্ক পিপলস ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স।
এই পরিস্থিতিতে সব ওষুধ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে করোনা ভ্যাকসিনের প্রযুক্তি ও মেধাস্বত্ব উন্মোচন করে দেয়ার আহবান জানিয়েছে পিপলস ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স। এতে স্থানীয়ভাবে ভ্যাকসিন উৎপাদন করে, জনসংখ্যার অনুপাতে দ্রুত সরবরাহ করা সম্ভব হবে। আর এই পুরো প্রক্রিয়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে কাজে লাগানো যেতে পারে বলেও পরামর্শ দিয়েছে জোটটি।
অক্সফোর্ডের তাদের উদ্ভাবিত ভ্যাকসিনের ৬৪ শতাংশ ডোজ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সরবরাহের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা সত্ত্বেও দরিদ্র ও ধনী দেশগুলোর মধ্যে ভ্যাকসিন প্রাপ্তির ব্যবধান ব্যাপক বলে দাবি করেছে পিপলস ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স।
অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনটি সাধারণ ফ্রিজের তাপমাত্রায় শূন্য থেকে চার ডিগ্রি সেলসিয়াসে সংরক্ষণ করা সম্ভব। তাই বিশ্বজুড়ে এই ভ্যাকসিনের সরবরাহ ও বিতরণ সহজ হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ফাইজার-বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন এরই মধ্যে যুক্তরাজ্যে ঝুঁকিপূর্ণদের মধ্যে প্রয়োগ শুরু হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও অনুমতি মিলবে।
এছাড়া স্পুটনিক-৫ সফল বলে দাবি করেছে রাশিয়া। চীনের উদ্ভাবিত কয়েকটি ভ্যাকসিনও কার্যকর ও নিরাপদ বলে দাবি করেছে বেইজিং।
বিশ্বের একশোটির বেশি দেশ ও প্রতিষ্ঠান করোনার ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে এখনও কোন ভ্যাকসিন পুরোপুরি নিরাপদ ও কার্যকর প্রমাণ হয়নি। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের চূড়ান্ত পর্যায়ে থাকা ভ্যাকসিনগুলোর চাহিদা দিয়ে রেখেছে ধনী দেশগুলো।
বাংলাদেশে অক্সফোর্ডের তিন কোটি টিকা আনতে চুক্তি করেছে। তবে শেষ পর্যন্ত এই টিকাই আসবে, এটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। সরকার জানিয়েছে, যে টিকা কার্যকর ও নিরাপদ প্রমাণ হবে, সেটিই আনবে তারা।