অল্প দিনের ব্যবধানে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দুটি কার্যকর টিকার খবরে বিশ্বজুড়ে স্বাভাবিক কার্যক্রমে যেন গতি ফিরেছে। উল্লম্ফন ঘটেছে আন্তর্জাতিক পুঁজিবাজার ও জ্বালানি তেলের বাজারে।
ফাইজার ও মডার্না দিয়ে করোনার টিকা উদ্ভাবনের লড়াইটি কেবল শুরু বলে ধরা হচ্ছে। শিগগিরই টিকা নিয়ে আসছে আরও গরম খবর।
ফরেন পলিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এ মুহূর্তে বিশ্বজুড়ে সব মিলিয়ে দুই শতাধিক করোনা টিকা নিয়ে গবেষণা চলছে। এর মধ্যে ৫৩টি টিকা আছে মনুষ্য শরীরে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল স্তরে। গবেষণা ও উন্নয়নের পাপলাইনে আছে আরও ১৫৫টি টিকা।
এই প্রতিযোগিতায় রয়েছে বাংলাদেশের নামও। গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড করোনার টিকা তৈরির দৌড়ে থাকা একমাত্র বাংলাদেশি কোম্পানি। তাদের টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেট তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
সবচেয়ে কার্যকর টিকার লড়াইয়ে কোনটির জয় হবে, এর মধ্যে আসতে শুরু করেছে সে প্রশ্ন।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার ও জার্মানভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বায়ো-এনটেক প্রাথমিক তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে জানায়, তাদের টিকা করোনা রোধে ৯০ শতাংশ কার্যকর।
‘এমআরএনএ’ জেনেটিক কোডের টিকাটি নিয়ে চ্যালেঞ্জও রয়েছে। এটি সংরক্ষণ ও বহন করার উপায়টি খুবই জটিল। ফ্রিজে টিকাটি সংরক্ষণ করতে হবে মাইনাস ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায়।
গত সোমবার করোনা প্রতিরোধে আরও বেশি আশাবাদী হওয়ার মতো খবর নিয়ে আসে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বায়োটেকনোলজি প্রতিষ্ঠান মডার্না। তাদের উদ্ভাবিত টিকা মানুষকে করোনামুক্ত রাখতে প্রায় ৯৫ শতাংশ কার্যকর বলে দাবি করা হয়।
এই টিকার জেনেটিক কোডও ‘এমআরএনএ’। তবে সংরক্ষণ, বহন অনেকটাই সহজ। ফলে ব্যবসায়িক উপযোগিতাও বেশি।
মাত্র মাইনাস চার ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় রাখা যায়, সাধারণ তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যায় ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত।
টিকাটির বিষয়ে হার্ভার্ডের টিএইচ চ্যান স্কুল অফ পাবলিক হেলথের বিজ্ঞানী জ্যাপ গুডস্মিথ বলেছেন, ‘অসাধারণ কার্যকারিতার জন্যই আমি বিস্মিত হচ্ছি না; টিকাটির স্থিতিশীলতাও দারুণ। এর ফলে টিকা দেয়ার অভিযান অধিকতর সহজ হবে।’
একই কথা কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপার্ডনেস ইনোভেশনের সিইও রিচার্ড হ্যাটচেটেরও। যেমন আশা করছিলেন মডার্নার টিকাটি ততটুকুই ভালো বলে জানান তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন ২০ জানুয়ারি দায়িত্ব নেয়ার আগে প্রায় একই মাত্রার কার্যকারী আরও টিকার ঘোষণা আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এসব টিকার ভিড়ে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা ও কার্যকারিতার দিক থেকে যথাযথটি বেছে নেয়াটা যে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
এদিকে টিকা নিয়ে রাজনীতিও শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এরই মধ্যে জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস সংকট নিরসনে তার প্রশাসনের নেয়া ‘অপারেশন র্যাপ স্পিড’ উদ্যোগের ফলেই কার্যকরী দুটি টিকা পাওয়া গেছে।
দুটি টিকার খবরকে করোনা রোধে ট্রাম্পের জয় হিসেবে উল্লেখ করেছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ও ট্রাম্পের জামাতা জেরার্ড কুশনার।
এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে রক্ষণশীল ভাষ্যকার হগ হিউইট তো বলেই ফেলেন, ‘কভিড-১৯ ভ্যাকসিন ট্রাম্পের লিগ্যাসি হওয়া উচিত।’