দাউদকান্দির শহীদনগরে প্রায় দুই দশক আগে নির্মিত ট্রমা সেন্টারটি আজও পুরোপুরি চালু হয়নি। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের প্রাণকেন্দ্রে স্থাপিত এ প্রতিষ্ঠানটি দুর্ঘটনায় আহতদের জরুরি চিকিৎসা দেওয়ার জন্য নির্মিত হলেও আজ সেখানে চলছে কেবল জ্বর, ঠান্ডা-কাশি আর পেটব্যথার রোগীর আউটডোর সেবা।
এখানে অর্থো-সার্জারি, অ্যানেসথেসিয়া, মেডিকেল অফিসার, নার্স ও টেকনিশিয়ানসহ ২৬টি পদ রয়েছে। অথচ কর্মরত আছেন মাত্র ১৫ জন। তাদের অনেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্ব পালন করেন। ফলে মহাসড়কে দুর্ঘটনায় আহত রোগীদের উন্নত চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
সরেজমিনে দেখা যায়, তিনতলা ভবনের নিচতলায় জরুরি বিভাগ ও চিকিৎসক-নার্সদের কক্ষ মিলিয়ে সীমিত পরিসরে কিছু চিকিৎসাসেবা চলছে। বাকি ভবনজুড়ে ধ্বংসপ্রায় চিত্র। দোতলা ও তিনতলার দেয়ালে পলেস্তারা খসে পড়ছে। দরজা-জানালা নষ্ট। কোথাও লোহায় মরিচা ধরেছে। আধুনিক কাঠামোয় নির্মিত কক্ষগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।
২০০৬ সালের ৬ অক্টোবর তৎকালীন বিএনপি জোট সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন আনুষ্ঠানিকভাবে সেন্টারটির উদ্বোধন করেন। প্রায় ৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয়ে গণপূর্ত বিভাগের অর্থায়নে নির্মিত এই ২০ শয্যার ট্রমা সেন্টারটি উদ্বোধনের কিছুদিন পরেই সরঞ্জাম ও জনবল সংকটে বন্ধ হয়ে যায়। পরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১০ সালের ৩০ এপ্রিল দ্বিতীয়বারের মতো উদ্বোধন করা হলেও পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম আর শুরু হয়নি।
চাঁদগাঁও গ্রামের তসলিম আহমেদ বলেন, ট্রমা সেন্টার নির্মিত হয়েছিল দুর্ঘটনায় আহতদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য। কিন্তু ট্রমা সেন্টারটি পুরোপুরি চালু হয়নি অদ্যাবদি। সরকার চাইলে এখানেই একটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল গড়ে তুলতে পারে বলেন তিনি।
সুন্দলপুর মডেল ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. আশরাফ উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, পরিষদের পক্ষ থেকে ভবনের আশপাশ পরিষ্কার রাখার উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু এ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাটি চালু করতে সরকারের নীতিগত পদক্ষেপ জরুরি।
স্থানীয় বাসিন্দা জসিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এই ট্রমা সেন্টার ছিল আমাদের বহুদিনের স্বপ্ন। রাজনৈতিক হিংসা আর অবহেলার কারণেই ১৯ বছরেও এটি চালু হয়নি। আমরা সরকারের কাছে দ্রুত চালুর দাবি জানাচ্ছি।’
বর্তমানে সেখানে কর্মরত সিনিয়র স্টাফ নার্স রোকসানা বানু জানান, যন্ত্রপাতি ও জনবল না থাকায় দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয় না। প্রতিদিন গড়ে ৬০ থেকে ৭০ জন সাধারণ রোগী আউটডোরে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. নাজমুল হাসান বলেন, আমি একাই দায়িত্ব পালন করছি। ইনডোর কার্যক্রম বন্ধ। জনবল ও সরঞ্জাম পেলে সেবা কার্যক্রম বাড়ানো সম্ভব।
দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, জনবল ও সরঞ্জামের ঘাটতির কারণে ট্রমা সেন্টারটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা যায়নি। একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে দুর্ঘটনায় আহতরা এখানেই উন্নত চিকিৎসা পাবেন।
প্রতিদিনই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ঘটে দুর্ঘটনা। কিন্তু কাছাকাছি এই বিশেষায়িত ট্রমা সেন্টারটি অচল পড়ে থাকায় অনেক আহত রোগীকে কুমিল্লা বা ঢাকায় পাঠাতে হয়, ফলে বিলম্বে চিকিৎসা পেয়ে অনেকে প্রাণ হারাচ্ছেন। স্থানীয়দের প্রত্যাশা দীর্ঘ ১৯ বছরের স্থবিরতা কাটিয়ে দ্রুত চালু হোক শহীদনগর ট্রমা সেন্টার।