করোনা ভ্যাকসিন নেওয়ার পর নানাবিধ দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা হচ্ছে—এমন দাবি করে বেশ কিছু গুজব ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে ছড়িয়ে পড়া স্ক্যাবিসসহ কিছু চর্মরোগ নিয়ে অনেকেই মনে করছেন, এগুলো নাকি ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। তবে চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা এসব ধারণা ভিত্তিহীন এবং বিভ্রান্তিকর বলে জানিয়েছেন।
চুলকানির গুজব ভ্রান্ত তথ্য
করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন গবেষণা চালানো হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO), যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (CDC) এবং ইউরোপিয়ান মেডিসিন এজেন্সি (EMA)-এর তথ্য অনুযায়ী, করোনার ভ্যাকসিন সাধারণত স্বল্পস্থায়ী ও হালকা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে চর্মরোগ কিংবা চুলকানি তৈরি করে—এমন কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।
চিকিৎসকদের অভিমত অনুযায়ী, যেসব মানুষ ভ্যাকসিনের কারণে চুলকানি হচ্ছে বলে মনে করছেন, তাদের বেশির ভাগই আসলে স্ক্যাবিস (Scabies), রিংওয়ার্ম বা দাঁদ (Ringworm) কিংবা একজিমার মতো চর্মরোগে আক্রান্ত। এসব রোগ ছড়াচ্ছে মূলত—
- ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার অভাব,
- ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বসবাস,
- আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা,
- আবহাওয়া ও পরিবেশগত কারণে।
চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সঞ্চিয়া তারান্নুম বলেন—“চুলকানি মানেই ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া—এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। চর্মরোগ দেখা দিলে গুজবে কান না দিয়ে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি। দেরি হলে সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে।”
ফুসফুস ও হৃদরোগ জটিলতার পেছনে ভ্যাকসিন নয়, দায়ী করোনা সংক্রমণ
করোনা-পরবর্তী শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগ বা হঠাৎ মৃত্যুর কারণ হিসেবে ভ্যাকসিনকে দায়ী করে প্রচুর গুজব ছড়ানো হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো—
করোনাভাইরাস সংক্রমণের সময় শরীরে তীব্র প্রদাহ হয়।
এতে অনেকের ফুসফুসে স্থায়ী ক্ষত (Fibrosis) তৈরি হয়, ফলে দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
ভাইরাসটি হৃদপেশিতে প্রদাহ (Myocarditis) সৃষ্টি করে, যার ফলে বুক ধড়ফড়, অনিয়মিত হার্টবিট বা হৃৎপিণ্ড বিকল হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
প্রতPrestigious গবেষণা জার্নাল Nature Medicine এবং The Lancet Respiratory Medicine–এ প্রকাশিত গবেষণে দেখা গেছে—করোনা ভ্যাকসিন গ্রহণকারীদের মধ্যে করোনা-পরবর্তী জটিলতার ঝুঁকি ৭০% পর্যন্ত কম।
বক্ষব্যাধী বিশেষজ্ঞ ডা. মনির হোসেন বলেন—“করোনা ভ্যাকসিন মানবতার জন্য আশীর্বাদ। এই ভ্যাকসিন না পেলে মহামারি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হতো না। ভুল তথ্যই আজকের আসল ভাইরাস—এটি মনে রাখা জরুরি।”