দৈনন্দিন বিভিন্ন বিষয়ের খোঁজ-খবর রাখতে পত্রিকা পড়া মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। খবর পড়ার পরও পত্রিকার রয়েছে বহুমুখী ব্যবহার। বিশেষ করে ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার বিক্রিতে খবরের কাগজের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি।
ঝালমুড়ি হোক বা সিঙ্গাড়া, লুচি থেকে পুরি বা রোল, পত্রিকায় পেঁচিয়ে খাবার দেয়ার চল আমাদের উপমহাদেশে বেশ পুরনো। আগে কলাপাতা কিংবা পদ্মপাতায় এসব খাবার বিক্রি করা হলেও কালের আবর্তে সেই স্থানটি দখল করেছে পুরনো খবরের কাগজ।
রাস্তার পাশে তৈরিকৃত খাবার খেলেও অনেকেই দোকানের পরিচ্ছন্নতা নিয়ে বাছবিচার করেন। কিন্তু কোনোরকম চিন্তা ছাড়াই কাগজে মোড়ানো খাবার খেতে শুরু করে দেন। তেলে ভাজা খাবার থেকে তেল কমাতেও অনেকে এই কাগজগুলো ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু এগুলো করতে গিয়ে খাবারের স্বাস্থ্যগত মান কোথায় যাচ্ছে, তা খেয়াল করেন না কেউ।
গবেষণা থেকে জানা যায়, বছরের পর বছর ধরে খবরের কাগজের মোড়কে খাবার খাওয়ার এই চল একেবারেই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এতে প্রতিনিয়ত শরীরে ঢুকছে বিষ।
আসলে পত্রিকা ছাপতে যে কালি ব্যবহার করা হয়, মূলত তাতেই সমস্যা। এ কালিতে থাকে ন্যাফথাইলামাইন, অ্যারোম্যাটিক হাইড্রোজেন ও কার্বন যৌগের মতো বায়ো-অ্যাকটিভ পদার্থ। খবরের কাগজে পেঁচিয়ে রাখা খাবারে এসব যৌগ সহজেই মিশে যায়। আর দীর্ঘদিন এগুলো শরীরে ঢুকলে দেখা দিতে পারে বিষক্রিয়া বা বিষক্রিয়ার প্রভাবে সৃষ্ট বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা।
তাই গবেষণা বলছে, ভাজাপোড়া থেকে যে তেল বের হয়, তা কালির সঙ্গে মিশে গিয়ে মারাত্মক বিষক্রিয়ার কারণ হতে পারে।
ফুসফুসের ক্যান্সার হওয়ার অন্যতম কারণ এই পত্রিকায় ব্যবহৃত কালি। অন্তত এমনই দাবি বিজ্ঞানীদের। এক্ষেত্রে, কালিতে থাকা কার্বন যৌগ বেঞ্জোপাইরিনকে দায়ী করেন তারা।
এছাড়া খবরের কাগজে ব্যবহৃত কালি মূত্রাশয়ের ক্যান্সারের ঝুঁকিও বৃদ্ধি করে। কালিতে থাকা অ্যামিনোবিফিনাইল, বেনজিডিন ও ন্যাফথাইলামাইন মূত্রাশয়ের ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান উপাদান।
শুধু ক্যান্সার নয়, এ কালি শরীরে ঢুকে একাধিক রোগের কারণ হতে পারে। বিভিন্ন গবেষণা বলছে- খবরের কাগজে ব্যবহৃত রং, পিগমেন্ট, প্রিজারভেটিভ, রাসায়নিক, প্যাথজেনিক মাইক্রো অরগ্যানিজম পেটে গেলে হজমের সমস্যা হয়। এছাড়া হার্টের অসুখ, কিডনির অসুখ, লিভার-ফুসফুসের কর্মক্ষমতা কমে যাওয়া, হাড় দুর্বল হওয়ার মতো একাধিক সমস্যার কারণও এই কালি। কালিতে থাকা ন্যাফথাইলামাইন যৌগ শরীরে প্রবেশ করলে যৌনজীবনের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ন্যাফথাইলামাইনের কারণে সন্তান জন্ম দেয়ার ক্ষমতা কমে যায় বলে জানান বিজ্ঞানীরা।
তবে শুধু কালিই ক্ষতিকর নয়, সংবাদপত্র প্রিন্ট থেকে শুরু করে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার প্রক্রিয়ায় অনেকভাবে সেগুলো দূষিত ও ভাইরাস-ব্যাক্টেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হয়। ফলে খবরের কাগজে পেঁচানো খাবার খেলে শরীরে বিভিন্ন রোগের পাশাপাশি ভাইরাস-ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
তাই নিজে সুস্থ থাকতে চাইলে কাগজে মোড়ানো খাবার খাওয়া বন্ধ করতে চেষ্টা করুন। একটু সচেতন হলে সুস্থ থাকার প্রক্রিয়ায় অনেকটা এগিয়ে থাকবেন আপনি।