প্রধানমন্ত্রী হাসপাতাল ভবন উদ্বোধন করে এসেছেন প্রায় সাড়ে চার বছর হয়ে গেল। কিন্তু রোগীদের লাভ হলো না কোনো। জনবল নিয়োগ কে দেবে- এ নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের মধ্যে চলছে বিরোধ। আর এতে আটকে গেছে গোটা প্রক্রিয়া। ফলে নতুন ভবনে ভালো চিকিৎসা হবে- এই আশায় দিন কাটাতে হচ্ছে রোগীদের।
বরগুনার আড়াই শ শয্যার বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের চিত্র এটি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ সালে ১০০ শয্যার হাসপাতালটিকে আড়াই শ শয্যা করার ঘোষণা দেয়ার এক যুগ পরও সেটির বাস্তবায়ন হয়নি।
আসলে ১০০ শয্যার হাসপাতালে যে চিকিৎসা পাওয়ার কথা, বরগুনাবাসী পাচ্ছে না সেটিও। যে চিকিৎসক থাকার কথা, আছে তার এক-চতুর্থাংশ। ফলে বোঝাই যায় কতটা ভঙ্গুর ১২ লাখ মানুষের এই জেলায় সরকারি চিকিৎসাসেবা।
বরগুনায় নাগরিক অধিকার নিয়ে সোচ্চার একটি সংগঠনের নেতা বলছেন, সরকারপ্রধানের ঘোষণা, তার ভবন উদ্বোধনের পরও স্বাস্থ্য বিভাগের এসব অগ্রহণযোগ্য কর্মকাণ্ডে বদনাম হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা এক যুগ আগের
১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ৫০ শয্যার চিকিৎসালয়টি আওয়ামী লীগের শাসনামলে ১৯৯৭ সালে ১০০ শয্যা করা হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় ফেরার পরের বছর হাসপাতালটিকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২০১৩ সালে বরগুনা গণপূর্ত বিভাগ ৩১ কোটি ৩১ লাখ ৪৩ হাজার ৫৭৭ টাকা ব্যয়ে সাততলা ভবনের নির্মাণকাজ শুরু করে। ২০১৮ সালে নতুন ভবন উদ্বোধনও করেন সরকারপ্রধান। কিন্তু সেবা আর শুরু হয়নি।
এর তিন বছর পর ২০২১ সালের জুন মাসে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত অধিদপ্তর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে ভবনটি হস্তান্তর করেন। সোয়া এক বছর পরও সেভাবেই পড়ে আছে সেটি।
বরগুনার সিভিল সার্জন ফজলুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জনবল নিয়োগ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ না করায় আমরা নতুন ভবনে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করতে পারছি না।’
কত জনবল থাকার কথা, আছে কত
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী, আড়াই শ শয্যার হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, চিকিৎসক, নার্স, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট, প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ২৫১ জনের কাজ করার কথা। কিন্তু নেই ১০০ শয্যার প্রয়োজনীয় লোকবলই।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক সোহরাব উদ্দীনের তথ্য মতে, ১০০ শয্যার হাসপাতালের জনবল কাঠামো অনুযায়ী ৪৩ জন চিকিৎসক থাকার কথা। কিন্তু আছেন ১১ জন। এদের মধ্যে তিনি একজন। বাকিদের মধ্যে একজন আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও), চারজন চিকিৎসক, সার্জারি ও অ্যানেসথেসিয়া, গাইনি ও অর্থোপেডিকস বিভাগ আছেন একজন করে জুনিয়র কনসালট্যান্ট এবং একজন হোমিও চিকিৎসক।
তিনি বলেন, ‘আমরা জেলার ১২ লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম এক প্রকার চালিয়ে নিচ্ছি। লোকবল নিয়োগ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম বরাদ্দ না হওয়ায় আমরা নতুন ভবনে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করতে পারছি না।’
বরগুনায় চিকিৎসাসেবা নিয়ে সোচ্চার সংগঠন জেলা পাবলিক পলিসি ফোরামের আহ্বায়ক হাসানুর রহমান ঝন্টু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এক শ শয্যার হাসপাতালের তিন-চতুর্থাংশ জনবল নেই। এটা নিয়েও আমরা আন্দোলন করেছি। স্বাস্থ্য বিভাগের তদারকির অভাব ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে ৩০ মাসের কাজ ৯ বছর শেষ করে আড়াই শ শয্যার হাসপাতালের ভবন নির্মাণ হয়েছে।
‘২০১৮ সালে ভবন উদ্বোধনের পরও চার বছর শেষ। কিন্তু চিকিৎসাসেবা শুরু হয়নি। স্বাস্থ্যসেবার মতো মৌলিক সেবা খাতে যদি এমন অবস্থা থাকে তবে আমরা দুর্ভাগা ছাড়া কিছুই নই। এই জটিলতা নিরসন করে দ্রুত হাসপাতালটি চালু করা এখন আমাদের দাবি।’
কোথায় সংকট
নতুন হাসপাতালটি চালু না হওয়ার পেছনে জনবল নিয়োগ নিয়ে যে জটিলতার কথা বলা হচ্ছে, সেটি কেন হচ্ছে- প্রশ্ন ছিল বরগুনার সিভিল সার্জন ফজলুল হকের কাছে।
তিনি বলেন, ‘নিয়োগ নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের মধ্যে জটিলতা চলছে। দুই সংস্থাই নিয়োগ দিতে চায়। এ কারণে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। তাই হাসপাতালটি আমরা চালু করতে পারছি না।’
যোগাযোগ করা হলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) শামিউল ইসলাম সাদির মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন করে আসা চিকিৎসালয়ে চার বছরেও সেবা চালু না হওয়ার বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের বক্তব্য জানতে মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম প্রধানের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘মন্ত্রী মহোদয় কক্সবাজারে গিয়েছেন। তিনি না আসা পর্যন্ত কথা বলা যাচ্ছে না।’