ঘুমের সময়ে নাক ডাকা নিজের জন্য খুব একটা অসুবিধার কারণ না ঘটালেও, বিছানাসঙ্গীকে নিদ্রাহীন রাখার ঝুঁকি তৈরি করে। অবশ্য দীর্ঘদিন একসঙ্গে থাকলে ধীরে ধীরে নাক ডাকার শব্দেও অভ্যস্ত হয়ে যান পাশের সঙ্গী। বিষয়টি দুই পক্ষের জন্যই আর ঝামেলার কারণ হয়ে থাকে না।
তবে একটি গবেষণা নাক ডাকার নতুন এক বিপদ হাজির করেছে। সুইডেনের একদল বিজ্ঞানী বলছেন, বিকট নাক ডাকা ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
নাক ডাকা নিয়ে আমরা প্রায়ই হাসিঠাট্টা করলেও এর স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি নিয়ে সতর্ক করছেন চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা। চিকিৎসাবিজ্ঞানে অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া (ওএসএ) হলো ঘুমসংশ্লিষ্ট এক ধরনের ব্যাধি, যাতে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ আক্রান্ত। এই ব্যাধির লক্ষণের মধ্যে রয়েছে বিকট শব্দে নাক ডাকা, অক্সিজেনের অভাবে হাঁপানি এবং দিনের বেলায় ঘুম ঘুম ভাব।
যারা নাক ডাকেন তাদের সবাই ওএসএ-তে আক্রান্ত সেটি বলা যাবে না, জোরে নাক ডাকা এই রোগটির একটি বড় লক্ষণ।
ওএসএ ঘুমের সময় মানুষের শ্বাসনালিতে বাতাসের প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করে, ফলে রাতভর স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যাহত হয়। এটি কেবল আক্রান্ত ব্যক্তিকে নাক ডাকার মতো বিব্রতকর অবস্থাতেই ফেলে না, গবেষকরা মনে করছেন, এটি ক্যানসারেরও লক্ষণ হতে পারে।
গবেষণা প্রতিবেদনটি সোমবার স্পেনের বার্সেলোনায় ইউরোপিয়ান রেসপিরেটরি সোসাইটির এক সম্মেলনে উপস্থাপন করা হয়েছে। সমীক্ষা অনুযায়ী নাক ডাকেন এমন ব্যক্তির অতিরিক্ত ওজন, ডায়াবেটিস, ধূমপান বা প্রচুর পরিমাণে অ্যালকোহল সেবনের অভ্যাস থাকলে ঝুঁকির মাত্রা অনেক বেড়ে যায়।
সুইডেনে ওএসএ আক্রান্ত ৬২ হাজার ৮১১ জন রোগীর পাঁচ বছরের চিকিৎসা ডেটা বিশ্লেষণ করা হয়েছে গবেষণায়। এর মধ্যে একটি গ্রুপে ছিলেন ২ হাজার ৯৩ জন, যাদের ওএসএ নির্ণয়ের আগেই ক্যানসার ধরা পড়েছে। গুরুতর ওএসএ আক্রান্তদের মধ্যে ক্যানসার আক্রান্তের হারও বেশি।
দেখা গেছে, বিকট শব্দে নাক ডাকা ব্যক্তির শিরায় রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকির মাত্রাও বেশি। এমন অবস্থা জীবন বিপন্ন করার মতো পরিস্থিতিও তৈরি করে।
সুইডেনের উপসালা ইউনিভার্সিটির গবেষক এবং সিনিয়র কনসালট্যান্ট ড. আন্দ্রেয়াস পাম বলেন, ‘আমরা দেখেছি, ওএসএ আক্রান্তদের ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি। আমাদের অনুসন্ধান বলছে, ওএসএ-এর কারণে অক্সিজেনের স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়, এ অবস্থা ক্যানসারের বিকাশের সঙ্গে যুক্ত।
‘তবে বিষয়টির জন্য ওএসএ এককভাবে দায়ী, নাকি স্থুলতা, কার্ডিওমেটাবলিক রোগ এবং জীবনযাপন পদ্ধতিও যুক্ত সেটি এখনও স্পষ্ট নয়।‘
তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের কিছুটা বেশি গুরুতর ওএসএ ছিল। অন্য গ্রুপের তুলনায় এই গ্রুপের সদস্যদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা শতাংশের হিসেবে বেশি দেখা গেছে। যেমন ফুসফুসের ক্যানসার (৩৮ বনাম ২৭), প্রোস্টেট ক্যানসার (২৮ বনাম ২৪) এবং ম্যালিগন্যান্ট মেলানোমা (৩২ বনাম ২৫)।’