যুক্তরাষ্ট্রকে পোলিওমুক্ত ঘোষণা করা হয় ১৯৭৯ সালে। এরপর এই প্রথম দেশটির কোনো নাগরিক মরণঘাতী ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন।
নিউ ইয়র্কের রকল্যান্ড কাউন্টির এই বাসিন্দার শরীরে এরই মধ্যে পক্ষাঘাত দেখা গেছে। জ্বর, গলাব্যথাসহ পোলিওর বিভিন্ন উপসর্গ তার মধ্যে এক মাস আগে দেখা গেছে।
এর আগে ২০১৩ সালের দেশটিতে অভিবাসী এক শিশুর শরীরে ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়। ভারত থেকে টেক্সাসে আসার পর পরই সাত মাস বয়সী শিশুটির শরীরে শনাক্ত হয় ভাইরাসটি।
ফেডারেল স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, শিশুটির শরীরে শনাক্ত হওয়া ভাইরাস ছিল জীবন্ত ধরনের। পোলিও প্রতিরোধী টিকায় ব্যবহৃত জীবন্ত পোলিও ভাইরাস অনেক সময় রূপ পরিবর্তনের মাধ্যমে ফের সুস্থ মানুষকে আক্রান্ত করতে শুরু করে।
ব্রাউন ইউনিভার্সিটির মহামারিবিষয়ক গবেষক জেনিফার নুজ্জো জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ নাগরিকের পোলিও টিকা নেয়া আছে। তবে যারা এখনও টিকা নেননি তাদের জন্য আক্রান্তের এই খবর সতর্ক বার্তা হিসেবে কাজ করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপনার পোলিওর টিকা নেয়া থাকলে শঙ্কার কোনো কারণ নেই। তবে এখনও আপনার শিশুদের যদি টিকা দিয়ে না থাকেন, তবে শিগগিরই তাদের টিকা দেয়া জরুরি।
যেসব দেশ পোলিও ভাইরাস থেকে সংক্রমণমুক্ত হয়নি, সেসব দেশে মরণঘাতী এই ভাইরাসের জীবন্ত ধরন থেকে টিকা তৈরি করা হয়।
অন্যদিকে যেসব দেশ পোলিওমুক্ত হয়ে গেছে, সেসব দেশের যে টিকা দেয়া হয়, তা তৈরি হয় এই ভাইরাসের নিষ্ক্রিয় ধরন থেকে।
যুক্তরাষ্ট্রে একসময় পোলিও ভাইরাসকে মরণঘাতী রোগের তালিকায় ধরা হতো। তখন প্রতি বছর এ ভাইরাসে সংক্রমিত কয়েক হাজার নাগরিক পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে মারা যেতেন।
১৯৫৫ সালে পোলিওরোধী টিকা জাতীয়ভাবে দেয়া শুরু হলে ব্যাপক হারে মৃত্যু ও পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীর সংখ্যা কমতে থাকে। ১৯৬০ সালে আক্রান্তের সংখ্যা নেমে আসে ১০০-এর নিচে। ১৯৭০ সালে আরও কমে নেমে আসে ১০-এর নিচে।
ফেডারেল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসিপি) তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে আর কোনো ধারাবাহিকভাবে সংক্রমণ ধরা না পড়ায় ১৯৭৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে পোলিওমুক্ত ঘোষণা করা হয়।
এখন যুক্তরাষ্ট্রে দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের পোলিওরোধী এমন টিকা দেয়া হয়, যেগুলো মরণঘাতী ভাইরাসটির সক্রিয় নয় বরং নিষ্ক্রিয় ধরন দিয়ে তৈরি।
ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে অথবা সংক্রমিত পানির মাধ্যমে ছড়ায় পোলিও ভাইরাস।
পোলিও ভাইরাসে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে শিশুরা।
এই ভাইরাসে আক্রান্ত শিশু বা ব্যক্তির মেরুদণ্ড সংক্রমিত হয়। এতে রোগী পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে সারা জীবনের জন্য পঙ্গু বা মারা যায়।
নিউ ইয়র্কের বিভিন্ন ক্লিনিকে শুক্র ও সোমবার পোলিও টিকা দেয়া হয় উল্লেখ করে ব্রাউন ইউনিভার্সিটির গবেষক টিকা নেননি এমন নাগরিকদের ডোজ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।