সরকারি-বেসরকারি নানা পদক্ষেপে গত ১৫ বছরে দেশে ম্যালেরিয়া প্রত্যাশা অনুযায়ী কমলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রকোপ এখনও রয়েছে। দেশে প্রতি বছর যত ম্যালেরিয়ার রোগী শনাক্ত হয়, তার ৮৫ ভাগই বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ির।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এই তথ্য জানিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাদুর্ভাব স্বস্তির পর্যায়ে আনা গেলেও ম্যালেরিয়া নির্মূলের চ্যালেঞ্জ রয়েই যাচ্ছে।
তারা বলছেন, বেশি বৃষ্টিপাত, সীমান্তবর্তী পাহাড়, বনাঞ্চলবেষ্টিত হওয়া, অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও সেবাজনিত সমস্যার কারণে ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকায় পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। এতে ১৩ জেলার ৭২ উপজেলায় প্রাদুর্ভাব নির্মূল হচ্ছে না।
ম্যালেরিয়া নির্মূলে উদ্ভাবনী শক্তি কাজে লাগিয়ে সবাইকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
এমন প্রেক্ষাপটে ‘উদ্ভাবনী কাজে লাগাই, ম্যালেরিয়া রোধে জীবন বাঁচাই’ স্লোগানে সোমবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে ম্যালেরিয়ার রোগী কমেছে দ্বিগুণ। তবে ২০২১ সালে দেশের ১৩ জেলায় ৭ হাজার ২৯৪ জন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হন, যা আগের বছরের তুলনায় ১ হাজার ১৬৪ জন বেশি।
আক্রান্ত ওই রোগীদের ৭১ দশমিক ৭ শতাংশই পার্বত্য জেলা বান্দরবানের। এরপরেই রয়েছে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম। গত ৩ বছরে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনা মহামারিতে কর্মসূচি বাস্তবায়ন ছিল অনেকটা চ্যালেঞ্জের। এরপরও সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিস্থিতি নাগালে রয়েছে।
বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস উপলক্ষে রোববার আয়োজিত আলোচনা সভায় অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক রোবেদ আমিন বলেন, ‘ম্যালেরিয়া নির্মূলে দেশীয় চিকিৎসার পাশাপাশি স্থায়ীভাবে ভ্যাকসিন দেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। তবে টিকা দিলেই সব সমস্যার সমাধান হবে তা কিন্তু নয়। বৈশ্বিক ভ্যাকসিন জোট গ্যাভিসহ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা আছে, আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশে বিনা মূল্যে এসব ভ্যাকসিন দেয়া হবে। তবে সবার আগে চাই সচেতনতা।’
তবে চলমান প্রক্রিয়ায় ২০৩০ সালের মধ্যে ম্যালেরিয়া শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।
তিনি বলেন, ‘সীমান্ত ও পাহাড়ি অঞ্চলগুলোর সঙ্গে ভারতে যাতায়াত রয়েছে। ফলে পুরোপুরি নির্মূল করা যাচ্ছে না। যেসব এলাকায় বেশি হচ্ছে সেগুলোকে টার্গেট করে কার্যক্রম চালাতে হবে। সীমান্তে বিশেষ করে বন্দরগুলোতে ম্যালেরিয়া পরীক্ষা চালানো যায় কি না, তা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কাজ করতে হবে।’
ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে উদ্ভাবনী কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক বে-নজির আহমদ বলেন, ‘বিশ্বে যেখানে লাখ লাখ মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত ও মারা যায়, সেখানে বাংলাদেশ অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে এটি আরও কমিয়ে আনতে উদ্ভাবনের বিষয়ে জোর দিতে হবে।’