‘আড়াইশ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে আইছি। সকাল ১০টা থেকে আইসা লাইনে দাঁড়াইছি। এখন কয় টিকা শেষ। টিভিতে দেখায় কত টিকা আইছে। এরা কয় টিকা নাই। কয়, এসএমএস আসলে আসেন। এসএমএস ছাড়াই তো সবাই দিতাছে। এরা টিকা কী করছে?’
বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এভাবেই রাজধানীর মিরপুরে ঢাকা ডেন্টাল কলেজে টিকা সমন্বয়কারীর সঙ্গে তর্ক করতে দেখা যায় টিকা নিতে আসা রফিকুল ইসলামকে।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা নিতে নিবন্ধনের টিকা নেয়ার তারিখ জানিয়ে ফিরতি একটি এসএমএস পাঠানো হয় নিবন্ধনকারীর ফোনে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ওই এসএমএস আসতে ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় লাগছে এমনকি মাসও পেরিয়ে যাচ্ছে।
এসএমএস ছাড়াই শুধু নিবন্ধন কপি নিয়ে গিয়ে টিকা পাওয়া যাবে এমন তথ্যে টিকা কেন্দ্রে গিয়ে টিকা না পেয়ে হতাশ রফিকুল ইসলাম।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বাসার কেউ বাইরে বের হয় না। বাচ্চা দুইটা জেলখানার মতোই বন্দি দুইটা বছর ধরে। আমিই একমাত্র বাইরে বের হই। আমার টিকা নেয়াটা জরুরি। রেজিস্ট্রেশন করছি এক মাস হয়ে গেছে। পরে এলাকায় অনেকে বলল, এখন আর মেসেজ লাগেনা। নিবন্ধন কপি নিয়া গেলেই পাওয়া যায় টিকা। তারাও নাকি এভাবেই দিছে।
‘সেটা শুনেই আমি আসছি। আগারগাঁও থেকে ২৫০ টাকা দিয়ে। যেতে আবার ২৫০ টাকা বা তার চেয়ে বেশিই লাগবে। এর উপর এই গরমে এতক্ষণ ধরে দাঁড়ায় আছি। এখানে এতজন অহেতুক ঘোরাফেরা করে। তারা যদি একবার করে এসে বলে যে কারা নিতে পারবে, কারা না তাইলে এতক্ষণ দাঁড়ায় থাকা লাগে না। প্রথমে বলল, এসএমএস নাই টিকা দিব না। এখন বলতেছে টিকাই নাই।’
রফিকুল ইসলামের মতোই আরও অনেকেই এসএমএস ছাড়াই এসেছেন। ভিড় করে হট্টগোল করে টিকার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
এ বিষয়ে কেন্দ্রের টিকা সমন্বয়কারী আবু বকর সিদ্দীকি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এসএমএস ছাড়া কাউকেই টিকা দেয়া হচ্ছেনা। এটা গুজব। প্রতিদিনই এমন অনেকে আসতেছেন। তাদেরকে বুঝিয়ে বাড়ি পাঠানো হচ্ছে। অনেকেই না জেনে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে গিয়ে আমাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করছেন। অনেকে অনুরোধ করছেন।
‘এমন কোনো নির্দেশনা থাকলে আমরা তো দিতাম। আমাদের তো কিছু করার নেই।’
শুধু ডেন্টাল কলেজে নয়, করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা নিতে নিবন্ধনের পর এসএমএস আসার আগেই টিকা নেয়া যাবে এমন বিশ্বাসে বিভিন্ন টিকা কেন্দ্রে গিয়ে ফেরত আসছেন সাধারণ মানুষ।
এমনকি ‘এসএমএস লাগবে না, নিবন্ধন করে কপি প্রিন্ট করে নিয়ে গেলে টিকা মিলবে’ এমন বিশ্বাসে আগের দিন রেজিস্ট্রেশন করে পরের দিনই টিকা কেন্দ্রে হাজির হচ্ছেন অনেকে।
ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে শেষে টিকা না পেয়ে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন তারা। কেউ কেউ বাগ-বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ছেন কেন্দ্রের টিকা সমন্বয়কারীদের সঙ্গে।
একই চিত্র কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে
টিকা নিতে আসা আসমা বেগম বুধবার টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন। পাশের বাসার ভাবি এসএমএস ছাড়াই টিকা নিতে পেরেছেন এমন তথ্যে নিজেও এসেছেন টিকা নিতে।
দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে টিকা না পেয়ে হাসপাতালের সিঁড়িতে বসে একা একাই কথা বলছেন।
আসমা বেগম বলেন, ‘আমার শ্বাসকষ্টের সমস্যা। প্রতিদিন কত মানুষ মরে। সরকার বলে সবার টিকা দিছে। তাইলে আমারটা কই।’
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এসএমএস ছাড়া টিকা দিতাছেনা। আবার দিতাছেও। যাদের লাইনঘাট আছে তারা এসএমএস ছাড়াই দিতাছে। নার্সের দূর সম্পর্কের খালতো ভাই, তালতো ভাই তারাও পাইতেছে।’
অভিযোগের বিষয়ে কেন্দ্রের টিকা সমন্বয়কারী আকবর হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘টিকা না দিলে মানুষ বের হইতে পারবে না। প্রতিদিনের মৃত্যুর সংখ্যা এগুলো মানুষকে খুব নাড়া দিচ্ছে। তারা তথ্যকে নিজেদের মতো করে নিয়ে ভাবছে। আমরা আমাদের মতো করে বোঝানোর চেষ্টা করছি। টিকা সবাই পাবে। একটা কেন্দ্রে একদিনে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টিকা দেয়ার সুযোগ থাকে।’
একই চিত্র দেখা গেছে রাজধানীর আরও বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএসের পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘টিকা নিবন্ধনের বয়স কমিয়ে আনার পর থেকেই ব্যাপকহারে টিকার নিবন্ধন হচ্ছে। নিবন্ধনের তালিকা অনেক লম্বা হয়ে আসছে।
‘এক কেন্দ্রে দৈনিক ২০০ জনের টিকা দেয়ার সক্ষমতা থাকলেও নিবন্ধন হচ্ছে অনেক বেশি। সে ক্ষেত্রে এসএমএস আসতে একটু দেরি হচ্ছে।’
উদ্বিগ্ন না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মিজানুর বলেন, ‘যারা নিবন্ধন করেছেন, তারা সবাই টিকা পাবেন। টুডে অর টুমরো (আজ বা কাল) এসএমএস আসবে। এতে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।’