বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

লকডাউনের সুফল কোথায়?

  •    
  • ২৮ জুলাই, ২০২১ ১২:৪৮

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৭ জুলাইয়ের পর থেকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার ৩০ শতাংশের ওপরে উঠে এসেছে। এর মধ্যে সংক্রমণ ৩২ শতাংশও ছিল। তাহলে লকডাউনের সুফল কোথায় পাওয়া গেল? 

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কঠোর লকডাউন চলছে প্রায় এক মাস ধরে। কিন্তু এর সুফল নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মধ্যে।

সংক্রমণের হার কমার কোনো লক্ষণ চোখে পড়ছে না। দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়ে চলেছে দৃষ্টিগ্রাহ্যভাবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক নজরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘লকডাউনের সুফল পেয়েছি কি না, এটা ফলাফল দেখে বোঝা যাচ্ছে। ৭ জুলাইয়ের পর থেকে করোনাভাইরাসে সংক্রমণের হার ৩০ শতাংশের ওপরে উঠে এসেছে। এর মধ্যে ৩২ শতাংশও ছিল। তাহলে আমরা লকডাউনের সুফল কীভাবে পেলাম? এই ফলাফলে সুফলের কোনো লক্ষণ আমরা দেখছি না।’

সরকারের পক্ষ থেকে ‘কঠোর লকডাউন’ বলা হলেও সাধারণ জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবণতা আশানুরূপ বাড়েনি। ভারতীয় ধরন বিস্তারের মধ্যে ঈদের সময় লকডাউন শিথিল রাখার সিদ্ধান্ত ঝুঁকি বাড়িয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। অনেকে এটিকেই লকডাউনের সুফল না পাওয়ার কারণ মনে করছেন।

তারা বলছেন, ঈদ উপলক্ষে বিপুলসংখ্যক মানুষের গাদাগাদি ঈদযাত্রা, কোরবানিতে পশুর হাট, শপিং মল খুলে দেয়ায় ঈদের পর সংক্রমণ বেড়েছে। এই সংক্রমণ কোথায় পৌঁছবে, তা আগামী এক-দুই সপ্তাহে জানা যাবে।

তবে নতুন করে দেশে করোনা সংক্রমণ আরও ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে লকডাউনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে সরকারি নির্দেশনা সাধারণ মানুষ যথাযথভাবে মানছে কি না, তা নজরদারিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সোমবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১৪ হাজার ২৫৮ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ার তথ্য জানায়। আক্রান্তদের মধ্যে ২৫৮ জনের প্রাণ গেছে এই ২৪ ঘণ্টায়। দেশের ইতিহাসে কোনো একক রোগে এত মৃত্যু এর আগে দেখা যায়নি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক ডা. বে-নজীর আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, আক্রান্ত ও মৃত্যুর নতুন এই রেকর্ড দুই সপ্তাহ আগের সংক্রমণ পরিস্থিতির ফল। ঈদের সময় লকডাউন শিথিলের পর তৈরি হওয়া পরিস্থিতির ফলাফল জানা যাবে আরও এক-দুই সপ্তাহ পর।

ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক নজরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শুধু লকডাউন দিয়ে দায় শেষ হয় না। করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।’

ডা. বে-নজীর আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সুফল কই পেলাম? কাল (সোমবার) দেশে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে। শনাক্ত হয়েছে রেকর্ড। ঈদের আগের লকডাউনের সুফল পাইনি। এর কারণও আছে। সেটি হচ্ছে ঈদের আগে ৯ দিন লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। ঈদের আগেই দোকানপাট খুলে দেয়া হয়েছে। ঈদে মানুষ বাড়ি গেছে। কোরবানির হাট ও ঈদের জামাত হয়েছে, যে কারণে ঈদের পরে সংক্রমণটা আরও বেড়েছে। যেহেতু সংক্রমণ বেড়েছে, এটা কত দিন থাকবে সেটা হলো কথা।

‘তার মানে আগের যে লকডাউন সেই লকডাউনের সুফল আমরা পাইনি। উল্টা সংক্রমণ আরও বেড়েছে। এটি কোথায় গিয়ে ঠেকবে, এখনই বলা যাবে না। এবারে লকডাউন যে হচ্ছে, সেটা তো ১৪ দিনের। এই ১৪ দিন শেষ হবে ৫ আগস্ট। এরপর আর ১৪ দিন পর এই লকডাউনের সুফল পাওয়া যাবে।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণ শনাক্ত নমুনা পরীক্ষার ওপর নির্ভরশীল। এখন ৫০ হাজার নমুনা পরীক্ষা করে যদি ১৫ হাজার সংক্রমণ পাওয়া যায়, তাহলে ১ লাখ নমুনা পরীক্ষা করলে অবশ্যই ৩০ হাজার নতুন রোগী পাওয়া যাবে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মুশতাক হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জুলাইজুড়ে সংক্রমণ ঊর্ধ্বগতি ছিল। ঈদের মধ্যে মৃত্যু হয়তো দুই শর নিচে ছিল। তা আবার বেড়ে গেছে। সংক্রমণ পরিস্থিতি একই জায়গায় অবস্থান করছে। লকডাউনে সংক্রমণের দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন আসেনি।’

তিনি বলেন, ‘গ্রামের একটি প্রবাদ আছে: বন্যার পানি নাকের ওপরে এক হাত ওঠা আর দুই হাত ওঠা একই কথা। নাকের ওপরেই এখনও আমাদের সংক্রমণের হার। এখনও বিপজ্জনক হিসেবেই আছে। শনাক্তের হার আবার বাড়ার প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে।’

লকডাউনের সুফল পাওয়ার আগেই ঈদের আগে তা শিথিল করা হয়েছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘ঈদে লকডাউন শিথিল করার প্রভাব আমরা আগামী সপ্তাহে পাব। এক সপ্তাহ মৃত্যুর সংখ্যাটা আরও বেড়ে যাবে। তিন সপ্তাহ আগে যারা সংক্রমিত হয়েছিলেন, সেই সংক্রমণের কারণে এখন মৃত্যু হচ্ছে।

‘তবে শঙ্কার বিষয়, তিন সপ্তাহ আগে যে সংক্রমণ ছিল, তার তুলনায় এখন সংক্রমণে হার অনেক বেশি। মানে তিন সপ্তাহ পর মৃত্যু আরও বাড়বে এটা ধরে নেয়া যায়। সংক্রমণ পরিস্থিতি আরও এক সপ্তাহ বাড়বে।’

এ বিভাগের আরো খবর