২০২০ সালের জুন থেকে এ পর্যন্ত তিনবার ছোঁয়াচে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ভারতের মুম্বাইয়ের এক চিকিৎসক। এর মধ্যে চলতি বছর টিকা নেয়ার পরই দুবার তিনি করোনা পজিটিভ হয়েছেন।
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে জানানো হয়, করোনা শনাক্তে মুলুন্দভিত্তিক ২৬ বছর বয়সী ড. শ্রুশতি হালারির সংগৃহীত নমুনা জিনোম সিকোয়েন্সের জন্য গবেষকদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
টিকা গ্রহণের পর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে মুম্বাইভিত্তিক একটি গবেষণার অংশ হিসেবে চলছে এ জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের কাজ।
শ্রুশতি বলেন, ‘বারবার করোনায় আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে আমি নিজেই বিভ্রান্ত।’
শ্রুশতির দেহে তিনবার করোনা শনাক্তের সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যাখ্যা নেই চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যবিদদের কাছে।
তারা বলছেন, করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষার ভুল ফল থেকে শুরু করে ভাইরাসটির রূপ পরিবর্তিত নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ বা ওই তরুণীর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যাওয়া, এমন অনেক কারণই থাকতে পারে।
করোনা শনাক্তে আরটি-পিসিআর টেস্ট আদর্শ বলে মনে করা হলেও এই পরীক্ষাতেও সঠিক ফল পাওয়ার সম্ভাবনা ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ।
সারা বিশ্বেই মহামারির সবচেয়ে সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে চিকিৎসকদের একাধিকবার করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলছে। মুম্বাইয়ের বেশ কয়েকটি হাসপাতালেই এ সংখ্যা উল্লেখযোগ্য।
তবে সন্দেহভাজন একেকজনের নাক ও গলা থেকে সংগৃহীত দুই বা ততোধিক ‘সোয়াব স্যাম্পল’-এর জিনোম সিকোয়েন্স ছাড়া এক ব্যক্তির বারবার করোনায় আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি প্রমাণ করার উপায় নেই।
ব্রিহানমুম্বাই মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের (বিএমসি) এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, টিকা নেয়ার পরও কেন শ্রুশতি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, সে প্রশ্নের উত্তর পেতে তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
বিএমসির পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে গবেষণা শুরু করেছে একটি বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ফাউন্ডেশন ফর মেডিক্যাল রিসার্চের (এফএমআর) তত্ত্বাবধানে এসব গবেষণা চলছে।
মুলুন্দে বিএমসির কোভিড কেন্দ্রে দায়িত্ব পালনের সময় গত বছরের ১৭ জুন প্রথমবার করোনা পজিটিভ হন শ্রুশতি। সে সময় এক সহকর্মী করোনা পজিটিভ হওয়ায় তিনিও নমুনা পরীক্ষা করতে দিয়েছিলেন।
এরপর চলতি বছরের ২৯ মে ও ১১ জুলাই দুবার করোনা পজিটিভ হন তিনি।
তিনবারই করোনার মৃদু উপসর্গে ভুগেছেন বলে জানিয়েছেন শ্রুশতি।
করোনা প্রতিরোধী টিকা তিনি নিয়েছেন চলতি বছরের শুরুতেই।
শ্রুশতি হালারির তিনবার করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় বিস্মিত তার চিকিৎসক মেহুল ঠাক্কার বলেন, ‘আরটি-পিসিআর টেস্ট রিপোর্ট ভুল আসা একটি কারণ হতে পারে।
‘আবার এমনও হতে পারে, মে মাসে যে তার দেহে দ্বিতীয়বার করোনা শনাক্ত হয়েছে, জুলাইয়ে সেটিই নতুন করে সক্রিয় হয়েছে।’
এফএমআর পরিচালক ড. নার্গিস মিস্ত্রি বলেন, ‘ব্যক্তির স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কতটা কিংবা তার অটোইমিউনবিষয়ক কোনো স্বাস্থ্য জটিলতা আছে কি না, সেসবের ওপর করোনায় একাধিকবার আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নির্ভর করতে পারে।
‘আবার সার্স-কোভ-টুর নতুন নতুন প্রজাতিতেও সংক্রমিত হয়ে থাকতে পারেন তিনি।’
দেহের প্রাকৃতিক রোগ প্রতিরোধক্ষমতা যখন নিজের কোষ ও অনুপ্রবেশকারী জীবাণুর পার্থক্য ধরতে পারে না, তখন তাকে ‘অটোইমিউন রোগ’ বলা হয়। এ ধরনের জটিলতায় আক্রান্ত ব্যক্তির দেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ভুলবশত দেহে অনুপ্রবেশকারী ভেবে সাধারণ কোষের ওপরই আক্রমণ চালায়।
চলতি বছরের মে মাসেই করোনায় বারবার আক্রান্ত হওয়া নিয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)। এপিডেমোলজি অ্যান্ড ইনফেকশন জার্নালে প্রকাশিত হয় সেই প্রতিবেদনটি।
তাতে বলা হয়, করোনায় দুবার আক্রান্ত হওয়া ১ হাজার ৩০০ ব্যক্তির তথ্য যাচাই করেছেন বিজ্ঞানীরা। দুবার পজিটিভ হওয়ার মধ্যবর্তী সময়েও তাদের বারবার কোভিড টেস্ট করা হয়েছে।
জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে দেখা গেছে, এদের মধ্যে মাত্র ৫৮ জন বা সাড়ে ৪ শতাংশ দ্বিতীয়বার আসলেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছে।
এই ৫৮ জনের ক্ষেত্রেই দুবার কোভিড পজিটিভ হওয়ার মধ্যে ব্যবধান ছিল ১০২ দিনের। এই ১০২ দিনে যতবার তাদের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে, প্রতিবারই নেগেটিভ এসেছে।
ভারতে দেড় বছরের মহামারিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রাণ গেছে এক হাজারের বেশি চিকিৎসকের।