বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

এবারও চিকিৎসকের ঈদ রোগীর সঙ্গে

  •    
  • ২০ জুলাই, ২০২১ ২৩:২০

হাসপাতালে সেবা কার্যক্রম ঠিক রাখতে স্বাভাবিক সময়ে বড় উৎসবে ৬০ শতাংশ চিকিৎসককে ছুটি দিয়ে ৪০ শতাংশ চিকিৎসককে রোগীর সেবায় হাসপাতালে রাখা হয়। তবে করোনা মহামারি কারণে বিগত চারটি ঈদে চিকিৎসকদের ছুটি দেয়া হচ্ছে না।

মহামারির কারণে পরপর দ্বিতীয় বছর কোরবানির ঈদে ছুটি পাওয়া হলো না চিকিৎসকদের। মানুষের সেবা নিশ্চিতে ও জীবন বাঁচাতে তারা রয়ে গেছেন হাসপাতালে। নিজেদের পরিবার পরিজন ছেড়ে তারা এই সংকটকালে প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন মানুষের প্রাণ রক্ষায়।

কোভিড ডেডিকেটেড একাধিক হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা ঈদের ছুটির কথা চিন্তা না করে বরং মহামারির এই সময়ে কী করে রোগীর সেবা করা যায় সেটাই তাদের কাছে মুখ্য।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, হাসপাতালে সেবা কার্যক্রম ঠিক রাখতে স্বাভাবিক সময়ে বড় উৎসবে ৬০ শতাংশ চিকিৎসককে ছুটি দিয়ে ৪০ শতাংশ চিকিৎসককে রোগীর সেবায় হাসপাতালে রাখা হয়। তবে করোনা মহামারি কারণে বিগত চারটি ঈদে চিকিৎসকদের ছুটি দেয়া হচ্ছে না।

এরইমধ্যে ঈদুল আজহার উপলক্ষ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন সব স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থানের নির্দেশ দিয়েছে অধিদপ্তর।

এতে বলা হয়, করোনা রোগী সেবা নিশ্চিতে স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঈদুল আজহা উপলক্ষে সরকারি ছুটিকালীন নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করতে হবে।

রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই হাসপাতালের মেডিসিন কনসালটেন্ট আহমেদ লুৎফর মবিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মহামারি মধ্যে চারটি ঈদ অতিবাহিত করছি। আমার আলাদা করে ঈদের আনন্দ অনুভাব করছি না। অন্যান্য ঈদের মতো এই ঈদের করোনা ইউনিটে দায়িত্ব পালন করছি। এটা আমাদের নিয়মিত দায়িত্বে মধ্যে পড়ে গেছে।’

এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে করোনা শুরু থেকেই আমাদের রোগী সেবা করে আসছে হচ্ছে। যে কোনো মহামারিতে একটি গোষ্ঠীকে সামনের সারিতে এসে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তাদেরকে সামনে এগিয়ে আসতে হয়। করোনাকালে চিকিৎসকরা এগিয়ে এসেছে। এর বাইরেও অনেক পেশার লোক এই করোনা মোকাবিলায় গুরু দায়িত্ব পালন করছেন। লকডাউনের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সামনের সারিতে এসে কাজ করেছে। এই মহামারির সবার উদ্দেশ্য হলো এই যুদ্ধে আমাদের জয়ী হতে হবে।’

করোনা মহামারীতে গত দুই সপ্তাহ ধরে দেশে রোগীর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। মৃত্যুও বেড়েছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা শঙ্কা করছেন, ঈদের পর এই পরিস্থিত আরও খারাপ হতে পারে।

কেমন কাটছে ঈদ জানতে চাইলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতলের মেডিক্যাল অফিসার শামীমা আক্তার একটু হেসে বলেন, ‘সাধারণত বড় ধরনের উৎসব চিকিৎসকদের ছুটি থাকে না। কারণ, এই সময়ে অনেক দুর্ঘটনা ঘটে। তাই বড় উৎসবের আগেই আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রাখি। মানসিক প্রস্তুতিটায় এসব চিকিৎসকদের বেশি থাকে।

‘ঈদের দিন বড় একটা সময়ে আমরা হাসপাতালে অবস্থান করি। রোগীর সঙ্গে সংযুক্ত থাকি। এভাবেই আমাদের ঈদ পার হয়ে যায়।’

এর মধ্যে যে আক্ষেপ থাকে এমন নয়। শামীমা বলেন, ‘এটার মধ্যেই অনেক মজা হয়েছে। চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করতে পারছি এটা আনন্দের। হয়ত পরিবার থেকে দূরে আছি কিছুটা। তারপরেও এই দূরত্ব মনে হয় না।

‘কষ্টটা অনেক কমে আসে যখন চিকিৎসা সেবা দিয়ে একটি রোগীকে সুস্থ করতে পারি। ঈদের দিনে সুস্থ হয়ে হাসি মুখে যখন রোগী বাড়িতে ফেরে, এই দৃশ্য দেখে আমরা আমাদের কষ্ট ভুলে যাই।’

লাইফস্প্রিং মেডিসিন কনস্যালটেন্ট নওসাবাহ্ নূর দীর্ঘদিন ধরে করোনা রোগীর সুরক্ষা দিয়ে আসছেন। যদিও সশরীরের তাদের ঈদের দিন দায়িত্ব পালন করতে হয় না। তবে অনলাইনে রোগী দেখতে হবে।

তিনি বলেন, ‘করোনা রোগীর সঙ্গে প্রতিদিনই কাজ করতে হচ্ছে। পরিবার-পরিজন থেকে রোগীরাই এখন আমাদের কাছে বেশি আপন মনে হয়।’

ঈদের দিন দুপুরের পর থেকে রোগী দেখা শুরু হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মহামারি আসার পর থেকে হাসপাতালে অধিকাংশ ঈদ কাটছে। গতকাল থেকে ঈদের ছুটি শুরু হয়েছে। আমাদের দায়িত্ব আমরা ঠিকভাবেই পালন করে যাচ্ছি। গতকালও কিছু রোগী দেখছি।’

গতকালই ঈদের দায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘চিকিৎসা পেশায় জেনেবুঝেই এসেছি। করোনা পরিস্থিতিও উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। সে কারণে হাসপাতালে রোগীর চাপও বেশি। কিছু চিকিৎসকরা হয়তো পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ করবে। কিন্তু বেশিরভাগের ঈদ কাটবে হাসপাতালে।’

পরিবার-পরিজন ছাড়া কেমন কাটে দিন- এমন প্রশ্নে নওসাবাহ নুর বলেন, ‘এটার মধ্যে অন্য রকম একটি আনন্দ রয়েছে। গতকাল চুয়াঙ্গায়া থেকেই একটি রোগী এসেছিলেন। আবার সারাদিন অনলাইনে ফোন করেন রোগীরা। এমনকি অনেক রাতেও কল আসে। এতে আমি বিরক্ত হই না।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ফরিদ হোসেন মিঞা বলেন, ‘দেশে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত সকলকে কর্মস্থলে থাকতে বলা হয়েছে। কেউ ছুটি পাননি। তাদের প্রতি আমরা ঋণী। তাদের ঋণ কখনও শোধ হবে না। তারপরও আমরা চাই সকলে চিকিৎসা পাক। করোনামুক্ত হোক দেশ।’

এ বিভাগের আরো খবর