করোনার শুরুতে রাজশাহী শহরের তুলনায় গ্রামে সংক্রমণের হার ছিল খুবই কম। বেশির ভাগ মৃত্যুও হচ্ছিল শহরেই। কিন্তু এখন মহানগরের তুলনায় গ্রামে সংক্রমণ বেশি।
রাজশাহী জেলা সিভিল সার্জন অফিসের তথ্যমতে, র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে শহরের তুলনায় উপজেলা পর্যায়ে সংক্রমণের হার প্রায় দ্বিগুণ। আবার চলতি মাসে করোনা শনাক্ত হয়ে মৃতদের মধ্যে বেশির ভাগই গ্রামের।
রাজশাহীর উপজেলাগুলোতে মাস্ক ব্যবহারের প্রবণতাও খুবই কম। বাজারগুলোতে সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না।
সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য অনুযায়ী, পাঁচ দিনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, রাজশাহী শহর ও উপজেলা মিলিয়ে ৫ হাজার ১০০ জনের অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হয়। তার মধ্যে শহরে ৩ হাজার ৭৩০ আর উপজেলা পর্যায়ে ১ হাজার ৩৭০ জন।
এতে রাজশাহী শহরে শনাক্ত হয় ৩৮০ জন আর গ্রামে শনাক্ত হয় ২২৮ জন। শহরে সংক্রমণে হার দাঁড়ায় ১০ দশমিক ১৮ ভাগ। অন্যদিকে উপজেলা পর্যায়ে ১৬ দশমিক ৬৪। অর্থাৎ উপজেলা পর্যায়ে সংক্রমণের হার ৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ বেশি।
গত ১২ জুলাই নগরীতে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট হয়েছে ৯৪৭ জনের। তাদের মধ্যে ৯৯ জনের করোনা পজিটিভ হয়। উপজেলা পর্যায়ে ২১১ জনের পরীক্ষা করে ৩৩ জনের করোনা পজিটিভ আসে।
১৩ তারিখে শহরে ৫৫৯ জনের পরীক্ষা করে ৭৬ জনের করোনা শনাক্ত হয় আর গ্রামে ৩০৬ জনের পরীক্ষা করে ৫৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়। তারপর দিন শহরে ৭৩৯ নমুনা পরীক্ষা করে ৭০ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। গ্রামে ২৫৯ জনের পরীক্ষা করেই ৪৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়।
১৫ জুলাই শহরে ৭৭৮ জনের পরীক্ষা করে ৬৫ জনের করোনা শনাক্ত হয় আর গ্রামে ২৯৭ জনের পরীক্ষা করে ৪৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়। ১৬ জুলাই রাজশাহী নগরীতে ৭০৭ জনের পরীক্ষা করে ৭০ জনের করোনা শনাক্ত হয় আর উপজেলা পর্যায়ে ২৯৭ জনের পরীক্ষা করে ৪৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়।
এদিকে রাজশাহী জেলাতে এই পর্যন্ত করোনায় মারা গেছে ২০৪ জন। তাদের মধ্যে শহরের ১১০ জন আর গ্রামের ৯৪ জন। জুলাই মাসে শহরের তুলনায় উপজেলা পর্যায়ে মৃত্যুও বেড়ে গেছে। চলতি মাসের ১৬ দিনে জেলায় মোট মৃত্যু ৪৪ জন। তাদের মধ্যে শহরের ১৯ জন আর গ্রামেরই মারা গেছে ২৫ জন।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক শামীম ইয়াজদানী বলেন, ‘আমাদের এখানে গ্রামের রোগীই বেশি। তারা বেশি মারাও যাচ্ছেন। বিশেষ করে দেরিতে আসার কারণে তাদের অক্সিজেন সাপোর্ট দিয়েও বাঁচানো যাচ্ছে না। তারা যদি দ্রুত আসেন, তবে হয়তো তাদের বাঁচানো সম্ভব হতে পারে।’
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ নওশাদ আলী বলেন, ‘গ্রামের চিত্রটা আমাদের ভাবাচ্ছে। হাসপাতালে যারা ভর্তি আছেন বা যারা মারা যাচ্ছেন, তাদের বড় অংশই গ্রাম থেকে আসা রোগী।
‘গ্রামে স্বাস্থ্যবিধির খুবই খারাপ অবস্থা। এটা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ঈদের পর চিত্র আরও ভয়ংকর হতে পারে। এখন খুবই জরুরি হলো উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা।’