তিন জেলায় করোনায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১৯ জন করে মারা গেছেন। এ ছাড়া নেত্রকোণায় একই সময় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা নারীসহ ৫ জন মারা গেছেন।
রাজশাহী
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে এক দিনে আরও ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার সকাল থেকে বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যে তাদের মৃত্যু হয়েছে। করোনা আক্রান্ত হয়ে ৫ জন ও উপসর্গে ১৪ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে করোনা নেগেটিভ হওয়ার পর ২ জনের মৃত্যু হয়।
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় রামেক হাসপাতালে মারা যাওয়া ১৯ জনের মধ্যে রাজশাহীর ৬ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৩ জন, নাটোরের ২ জন, পাবনার ৬ ও নওগাঁর ২ জন।
মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে পুরুষ ১৫ জন এবং নারী ৪ জন। বয়স বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মৃত ১৯ জনের মধ্যে ৭ জনের বয়স ৬১ বছরের ওপরে। ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৬ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ১ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ৪ জন, এবং ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে রয়েছেন ১ জন।
এ নিয়ে চলতি মাসের ১৫ দিনে রামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মোট ২৭৬ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে করোনা শনাক্ত হয়ে ৮৩ জন আর উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন ১৮৪ জন।
এদিকে ২৪ ঘণ্টায় এই ইউনিটে নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন ৫৬ জন। বর্তমানে রামেক হাসপাতালে ৪৫৪টি করোনা ডেডিকেটেড শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি আছেন ৫০৭ জন।
বুধবার রাজশাহীতে ১ হাজার ৭৩৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২৮০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ১৬ শতাংশ।
খুলনা
খুলনায় ৪ হাসপাতালে এক দিনে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে খুলনা করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে ১২ জন, জেলা জেনারেল হাসপাতালে ১ জন, গাজী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২ জন ও আবু নাসের হাসপাতালে ৪ জন মারা গেছেন।
বুধবার সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারা মারা যান।
ডেডিকেটেড হাসপাতালের আবাসিক কর্মকর্তা (ফোকাল পারসন) সুহাস রঞ্জন হালদার জানান, এ হাসপাতালে মৃতদের মধ্যে করোনা নিয়ে ৮ ও উপসর্গ নিয়ে ৪ জন মারা গেছেন। শনাক্ত হয়ে মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে খুলনার ৬ জন ও বাগেরহাটের ২ জন।
এ ছাড়া এ হাসপাতালে ১৯৫ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। যার মধ্যে রেড জোনে ১৩৪ জন, ইয়েলো জোনে ২১ জন, এইচডিইউতে ২০ ও আইসিইউতে ২০ জন। ২৪ ঘণ্টায় নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন ৩৩ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৪০ জন।
গাজী মেডিক্যালের স্বত্বাধিকারী গাজী মিজানুর রহমান জানান, ২৪ ঘণ্টায় এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খুলনা ও বাগেরহাটে ১ জন করে ২ জন মারা গেছেন। হাসপাতালে ১১৩ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে আইসিইউতে ৯ ও এইচডিইউতে ৯ জন। এক দিনে নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন ১৪ জন। সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ১৩ জন।
জেলা জেনারেল হাসপাতালের মুখপাত্র আবু রাশেদ জানান, ২৪ ঘণ্টায় এ হাসপাতালে খুলনার ১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এ হাসপাতালে মোট রোগী রয়েছে ৬৮ জন। নতুন ভর্তি হয়েছে ১২ জন; সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ১১ জন।
আবু নাসের হাসপাতালের মুখপাত্র প্রকাশ দেব নাথ জানান, এ হাসপাতালে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে খুলনার ৩ ও বাগেরহাটের ১ জন। ৪৪ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। যার মধ্যে আইসিইউতে ১০ জন। নতুন ভর্তি হয়েছেন ৪ জন; সুস্থ হয়েছেন ৩ জন।
ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ২৪ ঘণ্টায় ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৮ জন করোনা শনাক্ত হয়ে ও বাকিরা উপসর্গ নিয়ে মারা যান।
হাসপাতালের করোনা ইউনিটের আবাসিক কর্মকর্তা (ফোকাল পারসন) মহিউদ্দিন খান মুন বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নিউজবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে করোনা ইউনিটে ৪৮০ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে আইসিইউতে ভর্তি আছেন ২১ জন। নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ৯৮ জন। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৪৩ জন।
তিনি আরও জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় টেলিমেডিসিন সেবা নিয়েছেন ২৭ জন এবং ওয়ান স্টপ ফ্লু কর্নারে ৩৪৭ জন সেবা নিয়েছেন।
সিভিল সার্জন নজরুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৯২০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৬৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। জেলায় আক্রান্তের হার ২৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ।
কুষ্টিয়া
জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ও এর উপসর্গ নিয়ে জেলায় আরও ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ১০ জন করোনা শনাক্ত ছিলেন। আর ৪ জন মারা গেছেন উপসর্গ নিয়ে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার আবদুল মোমেন জানান, বুধবার সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার মধ্যে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারা মারা যান।
এছাড়াও ২৪ ঘণ্টায় ৮৯৪টি নমুনা পরীক্ষা করে নতুন করে ২৭৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তের হার ৩০ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ২২১ জন করোনা রোগী এবং ৬৪ জন উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
বরিশাল
বরিশাল বিভাগে ২৪ ঘণ্টায় করোনা ও উপসর্গ নিয়ে ১৩ জন মারা গেছেন। তাদের মধ্যে ৩ জন করোনা আক্রান্ত ছিলেন। বাকি ১০ জন মারা গেছেন উপসর্গে।
বুধবার সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার মধ্যে তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে বরিশাল বিভাগে করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৩৭৭ জনে দাঁড়িয়েছে।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক বাসুদেব কুমার দাস বৃহস্পতিবার সকালে নিউজবাংলাকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৫০০ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে বরিশাল জেলায় শনাক্তের সংখ্যা ১৯২ জন। তাদের মধ্যে ৯১ জনই সিটি কর্পোরেশন এলাকার বাসিন্দা। জেলায় শনাক্তের হার ৪৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১০ জন। এই সময়ে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৭৬৮ জন।
সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বৃহস্পতিবার এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মৃতদের মধ্যে ৭ জন উপজেলার এবং ৩ জন শহরের বাসিন্দা।
গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার ৯টি ল্যাবে ২ হাজার ৪২১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৭৬৮ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে।
নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ৪৭৪ জন শহরের এবং ২৯৪ জন গ্রামের বাসিন্দা। এ নিয়ে চট্টগ্রাম এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৬৮ হাজার ৫৫৫ জন। এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৮১০ জন।
ঝিনাইদহ
২৪ ঘণ্টায় করোনা ও উপসর্গে ঝিনাইদহে ৭ জন মারা গেছেন। একই সময় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৯৪ জন।
সিভিল সার্জন সেলিনা বেগম জানান, বুধবার সকাল ৮ টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮ টার মধ্যে সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৪ জন ও উপসর্গ নিয়ে ৩ জন মারা গেছেন।
তিনি আরও জানান, এক দিনে ২৭৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৯৪ জন করোনা শনাক্ত হয়েছেন। আক্রান্তের হার ৩৩ দশমিক ৯৩ ভাগ।
এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ৬ হাজার ৩৯ জনে। এছাড়াও গত ২৪ ঘণ্টায় কেউ সুস্থ হয়নি।
নেত্রকোণা
নেত্রকোণায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় সাত মাসের অন্ত:সত্ত্বা নারীসহ ৫ জন মারা গেছেন। এই সময়ে জেলায় নতুন করে আরও ১০১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের মুখপাত্র উত্তম কুমার পাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে সদর, আটপাড়া, বারহাট্রা, কলমাকান্দা ও মোহনগঞ্জে ১ জন করে মারা যান।
এ ছাড়া ২৪ ঘণ্টায় ২৫৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হন ১০১ জন। শনাক্তের হার শতকরা ৩৯ দশমিক ৭৬।
নতুন শনাক্তদের মধ্যে সদরে ৩৬ জন, মোহনগঞ্জে ২০ জন, দুর্গাপুরে ১১ জন, আটপাড়ায় ৭ জন, বারহাট্রায় ৮ জন, কেন্দুয়ায় ৪ জন, কলমাকান্দায় ৪ জন, মদনে ২ জন, পর্বধলায় ৪ জন ও খালিয়াজুরীতে ৫ জন রয়েছেন।
জেলায় এ পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৪৭৬ জন। আর সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৪৩৪ জন। হাসপাতাল ও নিজ বাড়িতে চিকিৎসাধীন আছেন ১ হাজার ৪২ জন।