সারা দেশে করোনার মৃত্যু বেড়েই চলেছে। ঢিলেঢালা লকডাউনে দ্রুতগতিতে বাড়ছে সংক্রমণও। গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু দেখেছে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল; ২৫ জন। এর পরেই বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগে ১৯ জন করে মারা গেছেন। এই সময়ে চট্টগ্রামে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৩ জনের, যা এখন পর্যন্ত জেলায় সর্বোচ্চ শনাক্ত।
রাজশাহী
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে এক দিনে আরও ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার সকালের মধ্যে তাদের মৃত্যু হয়।
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে ৭ জন ও উপসর্গে ১৪ জন মারা গেছেন। এদের মধ্যে করোনা নেগেটিভ হওয়ার পর ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
তাদের মধ্যে রাজশাহীর ১২ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর ও পাবনায় ৩ জন করে, নওগাঁয় ২ জন এবং কুষ্টিয়া ও যশোরে একজন করে রয়েছেন।
এর আগের ২৪ ঘণ্টায় এখানে ১৯ জনের মৃত্যু হয়।
এদিকে, মঙ্গলবার রাজশাহীর দুটি পিসিআর ল্যাবে রাজশাহী জেলার ৪৩০টি নমুনা পরীক্ষায় ১৪৯ জনের করোনা পজেটিভ আসে।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ওয়ার্ডে নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন ৭২ জন। সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র নিয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ৫৪ জন। এনিয়ে ৪৫৪ বেডের বিপরীতে মোট ভর্তি রোগী আছেন ৫০০ জন।
বরিশাল
বরিশাল বিভাগে ২৪ ঘণ্টায় করোনা ও উপসর্গ নিয়ে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের একই সময়ে নতুন করে ৫৩৩ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসাপাতালের করোনার আইসোলেশন ওয়ার্ডে করোনায় আক্রান্ত হয়ে বরিশালের ৩ জন ও উপসর্গ নিয়ে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া পটুয়াখালীতে ২ জন ও বরগুনায় ৪ জন।
এ পর্যন্ত বরিশাল বিভাগে করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৩৬৫ জনে দাঁড়িয়েছে।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক বাসুদেব কুমার দাস বুধবার সকালে নিউজবাংলাকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, বিভাগে মোট আক্রান্ত ২৪ হাজার ৯৬ জনের মধ্যে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৬ হাজার ৩৯১ জন।
আক্রান্ত সংখ্যায় বরিশালে নতুন ২০২ জন নিয়ে মোট ১০ হাজার ৩০৬ জন, পটুয়াখালীতে নতুন ৪৭ জন নিয়ে ৩ হাজার ২০ জন, ভোলায় নতুন ৪৩ জনসহ মোট ২ হাজার ৩৬৯ জন, পিরোজপুরে নতুন ৪৮ জন নিয়ে মোট ৩ হাজার ৩৩৭ জন, বরগুনায় নতুন ৬৬ জন নিয়ে মোট আক্রান্ত ২ হাজার ৪৩ জন এবং ঝালকাঠিতে নতুন ১২৭ জন শনাক্ত নিয়ে মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২১ জন।
এদিকে শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালকের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র শেবাচিম হাসপাতালেই করোনা আক্রান্ত হয়ে ২৩৪ জন এবং উপসর্গ নিয়ে ৬৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ২৪ ঘণ্টায় ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৭ জন করোনা শনাক্ত হয়ে ও বাকিরা উপসর্গ নিয়ে মারা যান।
হাসপাতালের করোনা ইউনিটের আবাসিক কর্মকর্তা (ফোকাল পার্সন) মহিউদ্দিন খান মুন বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় নিউজবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, বর্তমানে করোনা ইউনিটে ৪৩০ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে আইসিইউতে ভর্তি আছেন ২২ জন। নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ৪৮ জন। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৩ জন সুস্থ হয়ে ফিরেছেন।
তিনি আরও বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় টেলিমেডিসিন সেবা নিয়েছেন ২৬ জন এবং ওয়ান স্টপ ফ্লু কর্নারে ৩৮৪ জন সেবা নিয়েছেন।
সিভিল সার্জন নজরুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১০৫৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৮৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষা বিবেচনায় জেলায় আক্রান্তের হার ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
কুষ্টিয়া
কুষ্টিয়ায় টানা ৩৩ দিনের লকডাউন শেষ হচ্ছে আজ। কিন্তু করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু কমেনি।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ও এর উপসর্গ নিয়ে জেলায় আরও ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ১০ জন করোনা শনাক্ত ছিলেন। আর ৩ জন মারা গেছেন উপসর্গ নিয়ে।
মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৮টার মধ্যে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারা মারা যান।
এছাড়াও ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩২৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষায় গত দিনের চেয়ে শনাক্তের হার ৭ শতাংশ বেড়ে ৩৬ শতাংশ হয়েছে।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ৭ দিনে জেলায় করোনা আক্রান্ত ৮৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই সময়ে জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১৭শ’ ৬৬ জন। এখন পর্যন্ত জেলায় আক্রান্ত হয়ে ৩৬৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।
কুষ্টিয়া করোনা ডেডিকেডেট জেনারেল হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েই চলেছে।
হাসপাতালের তত্বাবধায়ক আব্দুল মোমেন জানান, ২০০ বেডে করোনা ও এর উপসর্গ নিয়ে ভর্তি আছেন ২৭৯ জন। এদের মধ্যে করোনা শনাক্ত রোগী ২০৫ জন। বাকিরা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি আছেন। প্রায় ৭০ শতাংশ রোগীদের অক্সিজেন প্রয়োজন হচ্ছে। এতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হিমশিম খাচ্ছেন।
খুলনা
খুলনায় ৩ হাসপাতালে একদিনে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে আবু নাসের হাসপাতালে আজ কোনো মৃত্যু নেই।
এরমধ্যে খুলনা করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে ৫ জন, জেলা জেনারেল হাসপাতালে ৪ জন, গাজী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৩ জন মারা গেছেন।
মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৮টার মধ্যে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারা মারা যান।
ডেডিকেটেড হাসপাতালের আবাসিক কর্মকর্তা (ফোকাল পার্সন) সুহাস রঞ্জন হালদার জানান, এ হাসপাতালে মৃতদের মধ্যে করোনা নিয়ে ২ ও উপসর্গ নিয়ে ৩ জন মারা গেছেন।
এ ছাড়া হাসপাতালে ২০১ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। যার মধ্যে রেড জোনে ১৩৫ জন, ইয়ালো জোনে ২৬ জন, এইচডিইউতে ২০ ও আইসিইউতে ২০ জন। নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন ৩৮ জন। সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ২১ জন।
গাজী মেডিক্যালের স্বত্বাধিকারী গাজী মিজানুর রহমান জানান, এই হাসপাতালে মৃত ৩ জনের মধ্য খুলনা ও বাগেরহাটের ১ জন করে। হাসপাতালে ১১৪ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। এর মধ্যে আইসিইউতে ৯ ও এইচডিইউতে ৯ জন রয়েছেন। এক দিনে নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে ১২ জন। সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ২৫ জন।
জেলা জেনারেল হাসপাতালের মুখপাত্র আবু রাশেদ জানান, এ হাসপাতালে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে খুলনার ১ জন ও বাগেরহাটের ৩ জন।
এ হাসপাতালে মোট রোগী রয়েছেন ৬৮ জন। নতুন ভর্তি হয়েছে ৮ জন; সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ১২ জন।
আবু নাসের হাসপাতালের মুখপাত্র প্রকাশ দেব নাথ জানান, এ হাসপাতালে আজ কোনো মৃত্যু নেই। ৪৪ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। যার মধ্যে আইসিইউতে ১০ জন। এখানে নতুন ভর্তি হয়েছেন ৬ জন; সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ৬ জন।
চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামে করোনায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই সময়ে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৩ জনের, যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বুধবার এসব তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামের ১১টি ও কক্সবাজারের একটিসহ মোট ১২টি ল্যাবে ২ হাজার ৮৬৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে ১ হাজার ৩ জনের শরীরে ভাইরাসটির অস্তিত্ব পাওয়া যায়। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ৬৫২ জন নগরের আর গ্রামের বাসিন্দা ৩৫১ জন।
এ নিয়ে চট্টগ্রামে করোনা শনাক্ত হলো ৬৭ হাজার ৭৮৭ জনের।
গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১০ জন। তাদের মধ্যে ছয়জন উপজেলার ও চারজন শহরের বাসিন্দা। এ নিয়ে চট্টগ্রামে করোনায় মৃত্যু হলো ৮০০ জনের।
জেলার ১৪টি উপজেলার মধ্যে সর্বোচ্চ ৭৫ জন আক্রান্ত হয়েছে হাটহাজারীতে। সবচেয়ে কম ছয়জন আক্রান্ত হয়েছে সন্দ্বীপ উপজেলায়।
চট্টগ্রামে আক্রান্তের সংখ্যায় প্রতিদিনই ছড়িয়ে যাচ্ছে রেকর্ড। গত সোমবার জেলায় করোনায় আক্রান্ত হন ৮২১ জন। এর পরদিন, অর্থাৎ মঙ্গলবার আক্রান্ত হন ৯৫৫ জন। সর্বশেষ বুধবার গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হন এক হাজার ৩ জন।
নেত্রকোণা
জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ৩ জন মারা গেছেন। এই সময়ে জেলায় নতুন করে আরও ৮০ জন শনাক্ত হয়েছেন।
মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৮টার মধ্যে তারা মারা যান।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের মুখপাত্র চিকিৎসা কর্মকর্তা উত্তম কুমার পাল জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সদর, দুর্গাপুর ও মোহনগঞ্জে ৩ জন মারা গেছেন। তাদের মধ্যে ১ জন পুরুষ ও ২ জন নারী ছিলেন।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের মুখপাত্র আরও জানান, ২১৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হন ৮০ জন। জেলায় শনাক্তের হার শতকরা ৩০ দশমিক ৪২।
শনাক্তদের মধ্যে সদরে ২৩ জন, মোহনগঞ্জে ২২ জন, দুর্গাপুরে ১৩ জন, আটপাড়ায় ৯ জন, বারহাট্রায় ৪ জন, কেন্দুয়ায় ৩ জন, কলমাকান্দায় ৩ জন, মদনে ২ জন ও পর্বধলায় ১ জন রয়েছেন। জেলায় এখন পর্যন্ত ২১ হাজার ৩৯০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৩৭৫ জন। সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৩২৫ জন।
এ ছাড়া হাসপাতাল ও নিজ বাড়িতে চিকিৎসাধীন আছেন এক হাজার ৫০ জন। জেলায় এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৪৪ জন।