বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

করোনা বিপর্যয়ের মাঝে ডেঙ্গুর আঘাত

  •    
  • ৭ জুলাই, ২০২১ ২০:৪৯

গত বছরের জুনে সারা দেশে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছিল ২০ জনের, অথচ চলতি বছরের জুনে শনাক্তের সংখ্যা ২৭১। গত বছরের জুনের তুলনায় এবারের জুনে আক্রান্ত বেড়েছে ১৩ গুণের বেশি। আর জুলাইয়ের প্রথম সাত দিনেই শনাক্ত হয়েছেন ১৯৪ জন। 

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ নেয়ার মধ্যেই বেড়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। গত বছরের জুনে সারা দেশে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছিল ২০ জনের, অথচ চলতি বছরের জুনে শনাক্তের সংখ্যা ২৭১। আর জুলাইয়ের প্রথম সাত দিনেই শনাক্ত হয়েছেন ১৯৪ জন।

এমন অবস্থায় উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞরা ডেঙ্গু ভাইরাস ছড়ানোর জন্য দায়ী এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদারে নগর কর্তৃপক্ষকে তাগিদ দিচ্ছেন। সেই সঙ্গে এডিস মশা জন্মানোর স্থান ধ্বংসে নাগরিকদের সচেতন হওয়ার পরামর্শও দিচ্ছেন তারা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার সকাল থেকে পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীতে ২৮ জন এবং রাজধানীর বাইরে একজন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন ১৩১ জন।

সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ বছরের জানুয়ারি থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত ৫৬৫ জন রোগী ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ভালো হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৪৩৪ জন। চলতি বছর ডেঙ্গুতে এখন পর্যন্ত কারো মৃত্যু হয়নি।

২০২০ সালে সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন ১ হাজার ৪০৫ জন, যাদের মধ্যে ছয়জন মারা যান। এর আগের বছর ২০১৯ সালে ডেঙ্গুর ভয়াবহ বিস্তার ঘটে। সেবার আক্রান্তের সংখ্যা ছিল এক লাখের বেশি, যাদের মধ্যে মারা যান ১৭৯ জন। ২০১৯ সালের জুনে আক্রান্ত হন ১ হাজার ৮৮৪ জন, জুলাইয়ে সেটা পৌঁছায় ১৬ হাজারে। গত বছরে সংক্রমণের মাত্রা অনেকটা কমলেও এ বছর আবার খারাপ হচ্ছে পরিস্থিতি। গত বছরের জুনের তুলনায় এবারের জুনে আক্রান্ত বেড়েছে ১৩ গুণের বেশি।

মশা নিয়ে গবেষণার জন্য সুপরিচিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার। গত বছরের তুলনায় এবার ডেঙ্গু শনাক্তের হার বেশি কেন, জানতে চাইলে নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গুর ওয়ার্ল্ড ওয়াইড একটা প্যাটার্ন আছে। সেখানে আমরা একটা মিস্টিরিয়াস ব্যাপার লক্ষ্য করেছি। ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়া এই মশাবাহিত রোগ এক বছর বেশি হলে তার পরের বছরে কম হয়। এটা মোটামুটি সারা পৃথিবীতেই ঘটে।

‘আর এর সঙ্গে আর একটা বিষয় যুক্ত হয়, সেটি হলো বৃষ্টিপাত ও উপযোগী তাপমাত্রা। এ বছর জুন মাসে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। এই বৃষ্টির সঙ্গে এডিস মশার ঘনত্বের একটা ক্লোজ রিলেশন আছে। বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা ও আগের বছরের অবস্থা- তিনটি ফ্যাক্টরকে বিবেচনা করলে এ বছর ডেঙ্গুর মাত্রা বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে সেটি ২০১৯ সালের চেয়ে বেশি না।’

অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, ‘বাংলাদেশে ১২৩ প্রজাতির মশা আছে। এর মধ্যে ঢাকায় কিউলেক্স ও এডিস মশার আধিপত্য বেশি। ঢাকা শহরে এডিসের দুটি ধরন আছে। একটা হচ্ছে এডিস এলবোপিকটাস, আরেকট হচ্ছে এডিস ইজিপটাই।

‘এডিস ইজিপটাই হচ্ছে নগরের মশা। আর এলবোপিকটাসের সম্পর্ক হচ্ছে গাছপালার সঙ্গে। অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে ইজিপটাইয়ের পরিমাণ দিনে দিনে বেড়ে যাচ্ছে। ঢাকা শহরে এখন এডিসের প্রায় ৯৮ ভাগই হচ্ছে ইজিপটাই। আর এই ইজিপটাই হচ্ছে ডেঙ্গুর প্রিন্সিপাল বা মূল বাহক।’

এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের র‍্যাপিড অ্যাকশন দরকার। সেটি শুধু সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব নয়। নগরবাসী ও সিটি করপোরেশন মিলে এডিস মশা জন্মানোর স্থান ধ্বংস করতে হবে। নগরবাসীর উচিত নিজের বাসার ভেতর ও বাইরে ঠিক রাখা, আর সিটি করপোরেশন বাইরের দায়িত্ব পালন করবে।

‘যেহেতু ডেঙ্গু অলরেডি ছড়িয়ে গেছে, তাই সিটি করপোরেশনের আর একটা দায়িত্ব আছে। বাতাসে যে পূর্ণাঙ্গ মশাটা ছড়িয়ে গেছে, সেটি তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’

মশা নিয়ন্ত্রণে দুর্বলতা প্রসঙ্গে অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, ‘আমরা এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রচুর কথাবার্তা বলি। অথচ এডিস মশাকে টার্গেট করে আমাদের দেশে মাস্টার প্ল্যান নেই। যে পরিকল্পনা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কলকাতাতেও আছে, সেটি এখানে নেই। আমাদের ৫ বা ১০ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কিন্তু আলাদা। এ জন্য আলাদা পরিকল্পনা করে বছরব্যাপী কাজ করতে হবে।’

কী বলছে কর্তৃপক্ষ

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকায় এখন সারা বছর ডেঙ্গু মশা পাওয়া যাচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে নগরায়ণ। যত বেশি নগরায়ণ হবে তত বেশি ডেঙ্গু মশা বাড়বে।’

অন্যদিকে ডিএসসিসি জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাসেরের দাবি, এডিস নিয়ন্ত্রণে তারা সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এপ্রিলের ১ তারিখ থেকেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশিত সব জায়গায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি। আমাদের লার্ভিসাইডিং (মশার লার্ভা ধ্বংস) ও এডাল্টিসাইডিং (পূর্ণবয়স্ক মশা ধ্বংস) নিয়ম অনুযায়ী করা হচ্ছে।’

এডিসের প্রকোপ বাড়ার বিষয়টি স্বীকার তিনি বলেন, ‘এ কারণে মেয়র মহোদয় আমাদের কাউন্সিলর, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও মশক বিভাগের সঙ্গে মিটিং করেছেন। তিনি তদারকি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। বৃষ্টির পরিমাণ এখন বেশি বলে মশক নিধন কার্যক্রম আরও ভালোভাবে পরিচালনা করতে হবে। প্রয়োজন হলে যেসব বাসায় প্রজনন হচ্ছে, সেখানে গিয়ে অনুমতি নিয়ে ধ্বংস করতে হবে।’

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা গত মাসেই ক্র্যাশ প্রোগ্রাম করেছি। ঈদের পর আর একটা করব।’

তিনি বলেন, ‘আমরা গত বছর যেসব বাড়িতে লার্ভা পেয়েছি, গত এপ্রিল থেকে তাদের মোবাইলে বার্তা দিয়ে জানিয়েছি। সবাইকে সচেতন থাকার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারি, আধা সরকারি ও সরকারি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়েছি। ২২ মে ১০টি অঞ্চলে রোড শো করে জনসচেতনতা তৈরি করা হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি রোগীর ঠিকানা নিয়ে তাদের বাড়ির চারপাশে লার্ভা ধ্বংসের কাজ করছি।’

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জোবায়দুর রহমান বলেন, ‘আমরা ধর্ম মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। সেখানে আমরা বলেছি, মন্ত্রণালয় যেন মানুষকে সচেতন করতে মসজিদের ইমামদের যুক্ত করে। এ বিষয়ে ইমামদের প্রশিক্ষণ দিতে একটি শিডিউল করা আছে। তবে লকডাউনের কারণে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না।’

এ বিভাগের আরো খবর