করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থার কোনো পরিবর্তন নেই বলে জানিয়েছেন তার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের একজন সদস্য।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে মঙ্গলবার রাতে বিএনপি নেত্রীকে দেখে এসে মেডিক্যাল বোর্ডের অন্যতম সদস্য অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘সিসিইউতে থাকা রোগীর সঙ্গে তো সবসময় কথা বলা যায় না। দূর থেকে দেখতে হয়। গতকাল যেমন ছিলেন আজও তেমন আছেন।’
মঙ্গলবার রাতে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে তিনি সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘আপনারা যে কারণে এখানে অপেক্ষা করছেন এবং আপনাদের ন্যায় দেশবাসীও জানতে চায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গত ২৭ তারিখ সন্ধ্যার পর থেকে এভারকেয়ার হসপিটালে পোস্ট কোভিড, উনার যে করোনা হয়েছিল সেই করোনার চেকআপের জন্য এসে পরবর্তীতে উনার নিয়মিত চেকআপ করতে যেয়ে উনি এখানে ভর্তি আছেন এবং ভর্তি থাকা অবস্থায় আপনারা শুনেছেন তার ৩ তারিখ আর্লি মর্নিং অর্থাৎ গতকালকে উনার শ্বাসকষ্ট হলে উনাকে সিসিইউতে ট্রান্সফার করা হয়।’
খালেদা জিয়ার সংবাদ নিয়ে কিছু কিছু গণমাধ্যমে ভুল লেখা হয়েছে উল্লেখ করে জাহিদ হোসেন বলেন, ‘সিসিইউ মানে করোনারি কেয়ার ইউনিট, আপনারা অনেকেই লিখেছেন করোনা কেয়ার ইউনিট। আমি কিন্তু কালকেও বলে এসেছি এটা একটা হৃদরোগের ইউনিট, করোনারি কেয়ার ইউনিট। করোনারি কেয়ার ইউনিটে তিনি (খালেদা জিয়া) ভর্তি আছেন।
‘ডাক্তার শাহাবুদ্দিন তালুকদারের তত্ত্বাবধানে ওখানে একটা মেডিক্যাল বোর্ড উনার সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার ব্যাপারে বা চিকিৎসা নিশ্চিত করার ব্যাপারে সার্বক্ষণিক কাজ করছেন এবং সেই বোর্ডের সদস্যরা আজকেও উনার যেসব পরীক্ষা গতকালকে করানো হয়েছিল এবং আজকে সকালে করা হয়েছিল সেগুলো রিভিউ করেছেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে উনার সে অনুযায়ী ট্রিটমেন্ট করে অ্যাডজাস্ট করেছেন এবং সেই অনুযায়ী চিকিৎসা চলছে।’
জাহিদ হোসেন আরও বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমি উনার সাথে মানে এখানকার সিসিইউতে কিছুক্ষণ আগেও, দূর থেকে দেখে এসেছি। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে উনি গতকালকে যে অবস্থায় ছিলেন, এখনও ঠিক একই অবস্থায় আছেন। চিকিৎসা চলছে এবং আপনাদের মাধ্যমে আমি আগেও বলেছি এখনও বলছি যে আমরা দেশবাসীর কাছে উনার সুস্থতার জন্য এবং রোগমুক্তির জন্য দোয়া চাই। আপনারা অনেকক্ষণ যাবত কষ্ট করেছেন, সেজন্য আমি আমার দলের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করছি।’
দুপুরে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের এক অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের কথা জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘আমরা নিশ্চয়ই সবাই উদ্বিগ্ন খালেদা জিয়ার অসুস্থতার খবরে। আপনারা সবাই শুনেছেন যে গতকাল তার একটু শ্বাসকষ্ট হওয়ায় সিসিইউতে নেয়া হয়েছে। এখনও তিনি সিসিইউতে আছেন। অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে। এখন তিনি স্থিতিশীল আছেন।’
গত ১১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার করোনার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। শুরুর দিকে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় থেকেই চিকিৎসা নেন বিএনপির চেয়ারপারসন। বিএনপি থেকে একাধিক বার বলা হয়, করোনায় আক্রান্ত হলেও তেমন কোনো জটিলতা নেই খালেদা জিয়ার।
গত ১৫ এপ্রিল এভারকেয়ার হাসপাতালে সিটি স্ক্যান করানো হয় খালেদা জিয়ার। সে রিপোর্ট ভালো আসে বলে বিএনপি থেকে জানানো হয়।
রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে খালেদা জিয়ার করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এই রিপোর্টও পজিটিভ আসে।
এরপর ২৭ এপ্রিল সিটি স্ক্যান করানোর জন্য আবার এভারকেয়ারে নিয়ে যাওয়া হয় বিএনপি প্রধানকে। এদিনই তাকে হাসপাতালে ভর্তি কারানো হয়। তার চিকিৎসায় গঠন করা হয় একটি মেডিক্যাল বোর্ড। এতে হাসপাতালটির সাতজন চিকিৎসকের পাশাপাশি তার ব্যক্তিগত তিনজন চিকিৎসককেও রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসার খবরাখবর রাখছেন লন্ডনে থাকা তার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমানও।
মেডিক্যাল বোর্ড খালেদা জিয়ার কিছু পরীক্ষা করে। পরীক্ষাগুলোর মধ্যে রয়েছে সিটিস্ক্যান, ইসিজি, ইকো, হৃদরোগ। চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পরিস্থিতি বিবেচনায় খালেদা জিয়াকে আরও কয়েকদিন হাসপাতালে রাখা হতে পারে।
৭৬ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ডিত। দণ্ড নিয়ে তিন বছর আগে তাকে কারাগারে যেতে হয়।
২০০৮ সালের ৮ মার্চ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয় খালেদার। পরে উচ্চ আদালত সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করা হয়। ওই বছরই জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় তাকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনা সংক্রমণ দেখা দেয়ার পর বিএনপি নেত্রীকে দেশের বাইরে না যাওয়া ও বাড়িতে বসে চিকিৎসা নেয়ার শর্তে ছয় মাসের জন্য দণ্ড স্থগিত করিয়ে মুক্তি দেয়া হয়। এরপর দুই দফা বাড়ানো হয় দণ্ড স্থগিতের মেয়াদ।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, হাঁটুর জটিলতা ছাড়াও নানা ধরনের রোগ আছে বলে তার দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। ২০১৭ সালে যুক্তরাজ্যে তার চোখেও অপারেশন করা হয়।