করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হলেও স্বাভাবিকভাবেই শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছেন।
বিএনপি নেত্রীর সঙ্গে দেখা করে এসে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন তার চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন। বলেন, ‘ভোর থেকে হঠাৎ ওনার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। পরে সিসিইউতে ট্রান্সফার করা হয়। এখন উনি স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন এভারকেয়ারে বেগম খালেদা জিয়া পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য ছিলেন। শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড সার্বক্ষণিক ওনাকে নজরদারিতে রেখেছেন। আজ হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হওয়ার কারণে ওনাকে সিসিইউতে পাঠানো হয়। সেখানেই উনি চিকিৎসাধীন আছেন। দেশ ও বিদেশের চিকিৎসকদের পরামর্শে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এই মুহূর্তে খালেদা জিয়ার অবস্থা কেমন, এমন প্রশ্নের জবাবে জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আমি মিনিট দুয়েক আগে তার সঙ্গে কথা বলে এসেছি। যেকোনো সময় এমন পরিস্থিতিতে মানুষের শ্বাসকষ্ট হতে পারে। কেন এমন হলো তা পরীক্ষা করে জানা যাবে। এখন আর কিছু বলতে পারছি না।’
সাংবাদিকদের সামনে খালেদা জিয়ার শারীরিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন
গত ১১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার করোনার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। শুরুর দিকে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় থেকেই চিকিৎসা নেন বিএনপির চেয়ারপারসন। বিএনপি থেকে একাধিকবার বলা হয়, করোনায় আক্রান্ত হলেও তেমন কোনো জটিলতা নেই খালেদা জিয়ার।
গত ১৫ এপ্রিল এভারকেয়ার হাসপাতালে সিটি স্ক্যান করানো হয় খালেদা জিয়ার। সে রিপোর্ট ভালো আসে বলে বিএনপি থেকে জানানো হয়।
রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে খালেদা জিয়ার করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এই রিপোর্টও পজিটিভ আসে।
এরপর ২৭ এপ্রিল সিটি স্ক্যান করানোর জন্য আবার এভারকেয়ারে নিয়ে যাওয়া হয় বিএনপিপ্রধানকে। তার চিকিৎসায় গঠন করা হয় একটি মেডিক্যাল বোর্ড। এতে হাসপাতালটির সাতজন চিকিৎসকের পাশাপাশি তার ব্যক্তিগত তিনজন চিকিৎসককেও রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসার খবরাখবর রাখছেন লন্ডনে থাকা তার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমানও।
মেডিক্যাল বোর্ড খালেদা জিয়ার কিছু পরীক্ষা করে। পরীক্ষাগুলোর মধ্যে রয়েছে সিটিস্ক্যান, ইসিজি, ইকো, হৃদরোগ। চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পরিস্থিতি বিবেচনায় খালেদা জিয়াকে আরও কয়েক দিন হাসপাতালে রাখা হতে পারে।
৭৬ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ডিত। দণ্ড নিয়ে তিন বছর আগে তাকে কারাগারে যেতে হয়।
২০০৮ সালের ৮ মার্চ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয় খালেদার। পরে উচ্চ আদালত সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করা হয়। ওই বছরই জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় তাকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনা সংক্রমণ দেখা দেয়ার পর বিএনপি নেত্রীকে দেশের বাইরে না যাওয়া ও বাড়িতে বসে চিকিৎসা নেয়ার শর্তে ছয় মাসের জন্য দণ্ড স্থগিত করিয়ে মুক্তি দেয়া হয়। এরপর দুই দফা বাড়ানো হয় দণ্ড স্থগিতের মেয়াদ।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, হাঁটুর জটিলতা ছাড়াও নানা ধরনের রোগ আছে বলে তার দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। ২০১৭ সালে যুক্তরাজ্যে তার চোখেও অপারেশন করা হয়।