ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের একের পর এক করোনাভাইরাসের শনাক্তের প্রেক্ষাপটে বিদ্যমান টিকা এক বছরের মধ্যে কার্যকারিতা হারাবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
রোগ প্রতিরোধে এ সময়ের মধ্যেই হয় টিকাটির আধুনিকায়ন করতে হবে বিজ্ঞানীদের, না হলে আবিষ্কার করতে হবে পুরোপুরি নতুন টিকা।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহামারি বিশেষজ্ঞ, ভাইরাস বিশেষজ্ঞ ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞদের মতের ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত এক জরিপে উঠে এসেছে এ তথ্য।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, অক্সফাম, ইউএনএইডসসহ বিভিন্ন সংগঠনের জোট পিপলস ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স ২৮টি দেশের ৭৭ জন গবেষককে নিয়ে জরিপটি করেছে। অংশগ্রহণকারীদের এক-তৃতীয়াংশেরই মত, এক বছরও নয়, নয় মাস বা আরও কম সময়ে আরও কার্যকরী নতুন টিকা না এলে অকল্পনীয় রূপ নিতে পারে মহামারি পরিস্থিতি।
বিভিন্ন দেশে টিকাদান কর্মসূচি ধীরগতিতে এগোচ্ছে বলে ভাইরাসের বিবর্তনের হার বাড়ছে উল্লেখ করেছেন জরিপে অংশ নেয়া জন হপকিন্স, ইয়েল, ইম্পেরিয়াল কলেজ, লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন এবং এডিনবার্গ ইউনিভার্সিটিতে কর্মরত গবেষকদের ৮৮ শতাংশ।
ইয়েল ইউনিভার্সিটির মহামারি বিশেষজ্ঞ ও সহযোগী অধ্যাপক গ্রেগ গনসালভেস এক বিবৃতিতে বলেন, ‘প্রতিদিনই ভাইরাসের নতুন নতুন বিবর্তন শনাক্ত হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই দিনকে দিন শক্তিশালী ভাইরাসের আবির্ভাব ঘটছে। তাই দ্রুততম সময়ে পুরো পৃথিবীর মানুষকে টিকার আওতায় আনা না গেলে এই বিবর্তন কোনোদিনই বন্ধ হবে না। তখন শক্তিশালী টিকা প্রয়োজন হবে।’
২০১৯ সালের শেষ দিকে মানবদেহে সংক্রামক করোনাভাইরাসের নতুন প্রকরণ কোভিড ১৯-এর অস্তিত্ব শনাক্তের পর এর টিকা আবিষ্কারে লেগেছে প্রায় এক বছর। তাও এখন পর্যন্ত ভাইরাসটির বিরুদ্ধে কোনো টিকারই শতভাগ কার্যকারিতা প্রমাণিত নয়।
এ অবস্থায় বিবর্তনের মাধ্যমে একের পর এক নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে চলায় এবং মহামারি পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতিতে বাড়ছে উদ্বেগ। বিশেষ করে মোট জনসংখ্যার তুলনায় টিকার আওতায় আসা জনগোষ্ঠীর হার কম যেসব দেশে, সেসব দেশে নতুন বৈশিষ্ট্যের ভাইরাসটির প্রকোপ বেশি হবে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্যবিদরা।
দ্রুততম সময়ে ভাইরাসটির বিবর্তন এবং কিছু বিবর্তিত ভাইরাস অধিক সংক্রামক ও প্রাণঘাতী হওয়ায় সেগুলো সহজেই টিকার মাধ্যমে সৃষ্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ফাঁকি দিতে সক্ষম বলে মনে করা হচ্ছে। এ অবস্থায় যত বেশি ভাইরাসটি ছড়াচ্ছে, এর বিবর্তনের ঝুঁকিও তত বেশি বাড়ছে। ফলে কোভিড-১৯ নির্মূলে সারা বিশ্বে ঐক্যবদ্ধ টিকা কর্মসূচির জন্য শুরু থেকেই জোর দিয়ে আসছিলেন বিজ্ঞানীরা।
যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিল থেকে ছড়ানো ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের করোনাভাইরাস সবচেয়ে সংক্রামক বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। শুধু ভারতেই শনাক্ত হয়েছে পৃথক বৈশিষ্ট্যের সাড়ে সাত হাজারের বেশি করোনাভাইরাস।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে করোনাভাইরাসের ভিন্ন ভিন্ন টিকা প্রয়োগ চলছে এখন। যার মধ্যে সর্বাধিক কার্যকরী হিসেবে বিবেচিত ফাইজার-বায়োএনটেক ও মর্ডানার এমআরএনএ প্রযুক্তির টিকা। কিন্তু দুটি টিকাই ধনী দেশগুলোর কুক্ষিগত।
যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের মতো ধনী দেশগুলো এরই মধ্যে মোট জনগোষ্ঠীর কমপক্ষে এক-চতুর্থাংশকে টিকার আওতায় এনেছে এবং মজুত করেছে হাজার-কোটি ডোজ টিকা। বিপরীতে দক্ষিণ আফ্রিকা, থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলো মোট জনগোষ্ঠীর এক শতাংশের জন্যও টিকা নিশ্চিত করতে পারেনি। দুই ডোজের টিকার প্রথম ডোজ দেয়াই শুরু হয়নি অনেক দেশে।
এর ওপর চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত টিকা উৎপাদন না হওয়া, নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় টিকা সংরক্ষণ ও পরিবহন নিশ্চিত করতে না পারাসহ রয়েছে নানা সংকট।