রাজধানীসহ সারা দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তে নমুনা পরীক্ষার চাপ বেড়েছে। গত এক মাসে নমুনা পরীক্ষা বেড়েছে দ্বিগুণ।
পাশাপাশি শনাক্ত ও মৃত্যুর হারও বেড়েছে। গত দুই সপ্তাহে শনাক্ত রোগী ১০ শতাংশ বেড়ে ১৩ শতাংশে দাঁড়িয়ে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি করোনাভাইরাস শনাক্তে ১৫ হাজার ৩২ নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এক মাস ব্যবধানে ২৬ মার্চে প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজার ২৯৯।
দেশে গত বছরের ৮ মার্চ করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। সেই মাসজুড়ে সক্ষমতা না থাকায় নুমনা পরীক্ষার সংখ্যা এক হাজারের নিচে ছিল। এরপর এপ্রিল-মে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা চার হাজারের মধ্যে আসে। পরীক্ষাকেন্দ্র ও নমুনা পরীক্ষার সক্ষমতা বেড়ে আগস্ট মাসে ৩৭ হাজারের বেশি হয়। এরপর ধীরে ধীরে কমতে থাকে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা। তবে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে করোনা সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বেড়েছে।
সংক্রমণ আবার লাগামছাড়া। মৃত্যুর হার ঊর্ধ্বমুখী। নমুনা পরীক্ষার হারও বাড়ছে। তিন সপ্তাহ ধরে সংক্রমণের হার, মৃত্যুর হার এবং নমুনা পরীক্ষার হার বাড়ার কারণ একটাই-স্বাস্থ্যবিধি না মানা। আবার কিছুটা হলেও দেশে ইউকে ভ্যারিয়েন্টের প্রভাব রয়েছে। এমনটাই মনে করছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে এখন ২২৪টি পরীক্ষাগারে করোনার নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। এর মধ্যে আরটি-পিসিআরের মাধ্যমে পরীক্ষা হচ্ছে ১২০টি পরীক্ষাগারে। জিন-এক্সপার্ট মেশিনের মাধ্যমে পরীক্ষা হচ্ছে ৩১টি পরীক্ষাগারে এবং র্যাপিড অ্যান্টিজেনের মাধ্যমে পরীক্ষা হচ্ছে ৭৩টি পরীক্ষাগারে। রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় সরকারি ও বেসরকারি সব ল্যাবে করোনা শনাক্তে নমুনা পরীক্ষা চাপ বেড়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ২৭ হাজার ৬৪টি, আর পরীক্ষা হয়েছে ২৭ হাজার ২৯৯টি। এখন পর্যন্ত দেশে করোনার মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৪৫ লাখ ৪২ হাজার ১১৯টি। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষা করা হয়েছে ৩৪ লাখ ৫৩ হাজার ২২১টি। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষা করা হয়েছে ১০ লাখ ৮৮ হাজার ৮০৯টি।
করোনা শনাক্তে রাজধানীর কয়েকটি পরীক্ষা কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক মাস ধরে পরীক্ষার জন্য মানুষের ভিড় বেড়েছে। দেশের সবচেয়ে বড় সেবাদানকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আগের থেকে ভিড় দ্বিগুণ বেড়েছে। অনেককেই নমুনা না দিয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভাইরোজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নুসরাত সুলতানা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এক মাস ধরে রোগী চাপ বেড়েছে। আমাদের এখানে প্রতিদিন ৩০০ জনের পরীক্ষা করানো হয়। যে কারণে হয়তো কিছু মানুষকে নমুনা না দিয়ে ফিরে যেতে হয়।’
এমন পরিস্থিতি রাজধানীর মুগদা হাসপাতালের করোনা পরীক্ষাকেন্দ্রেও। গত ২৪ মার্চ করেনা শনাক্তের জন্য নমুনা পরীক্ষা করাতে আসেন ৪০০ জনের বেশি। তবে পরীক্ষা সক্ষমতা না থাকায় ২০০ জনকে ফিরে যেতে হয়। এ সময় জনগণের মধ্যে নমুনা দেয়া নিয়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
রাজধানীর খামারবাড়ি থেকে বেসরকারি চাকরীজীবী আলমগীর হোসেন মুগদায় এসেছিলেন নমুনা দিতে। তার পরিবারের একজন করোনাভাইরাস সংক্রমিত হওয়ায় বাকিরাও পরীক্ষা করাতে এসেছিলেন।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার গলাব্যথা ছাড়া আর কোনো লক্ষণ নেই। কিন্তু যেহেতু চাকরি করি, প্রতিদিন অফিসে যেতে হয়, তাই নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। তিন ঘণ্টা লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এসে বলছে, ২০০ জন হয়ে গেছে এখন আর নমুনা নেয়া যাবে না।’
এ বিষয়ে মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অসীম কুমার বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে আমাদের ২০০ জনের পরীক্ষা জন্য বলা হয়েছে। হাতাহাতির বিষয়টি আমার জানা নাই।’
কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে এক মাস আগে দৈনিক নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৯০ থেকে ২৮০টি। গত ২৪ ঘণ্টায় এ হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৫৮৩টি।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, যত বেশি করোনা টেস্ট করা হবে, তত বেশি শনাক্ত করে সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব। আগের থেকে টেস্টের সক্ষমতা বেড়েছে, করোনা শুরুতে একটি মাত্র ল্যাব দিয়েই পরীক্ষা করা হতো। এখন ২২৪ টি ল্যাবে করোনা পরীক্ষা করা হয়। দিনে ৪০ হাজারের বেশি নুমনা পরীক্ষা করার সক্ষমতা রয়েছে।
জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা করোনা পরীক্ষা করেন। নিজে সুস্থ থাকুন, অন্যকে সুস্থ রাখুন। কিছুদিন হলো ঢাকা শহরের হাসপাতালগুলো অনেক রোগীতে ভরে গেছে। ঢাকা শহরে অনেক রোগী বাইরে থেকে আসছে। এ বিষয়গুলো মাথায় রেখে আমরা এরই মধ্যে বেশ কয়েকটা হাসপাতাল করোনার আওতায় নিয়ে এসেছি। ঢাকার বাইরে গাজীপুর, টাঙ্গাইলে হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। উত্তর সিটির আইসোলেশন সেন্টার সবচেয়ে বড় স্থান।’