বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কেন করোনা সংক্রমণ ২ থেকে ১৩ শতাংশে

  •    
  • ২৪ মার্চ, ২০২১ ২৩:২৮

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণ কমতে কমতে গত ৩ ডিসেম্বর শনাক্তের হার নেমে এসেছিল ২-এর ঘরে। চলতি সপ্তাহে তা ছাড়িয়ে গেছে ১৩ শতাংশের ঘর। গত দুই সপ্তাহে শনাক্তের হার বেড়েছে ৮ শতাংশের বেশি।

বাংলাদেশে গত ডিসেম্বর থেকে মার্চের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ছিল। নিয়ন্ত্রণে ছিল এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুও। তবে এর পরপরই গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে শুরু করেছে সংক্রমণ ও মৃত্যু। এর পেছনে গণটিকাদান শুরুর পর মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতাকেই মূলত দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। নতুন ধরনের করোনাও এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন তারা।

হঠাৎ সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় জনগণের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে। জনগণকে আতঙ্কিত না হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানার ওপর জোর দিতে বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। সরকারও মাস্ক পরাসহ সব স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে কঠোর হচ্ছে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণ কমতে কমতে গত ৩ ডিসেম্বর শনাক্তের হার নেমে এসেছিল ২-এর ঘরে। চলতি সপ্তাহে তা ছাড়িয়ে গেছে ১৩ শতাংশের ঘর। গত দুই সপ্তাহে শনাক্তের হার বেড়েছে ৮ শতাংশের বেশি। চলতি সপ্তাহে টানা দু্ই দিন রোগী শনাক্তের সংখ্যা সাড়ে ৩ হাজারের বেশি, যা গত সাড়ে আট মাসের মধ্যে এক দিনে সর্বাধিক। গত বছরের ১৬ জুলাই এর চেয়ে বেশি রোগী শনাক্তের খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেদিন শনাক্ত ছিল ৩ হাজার ৭৩৩ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত বছর ৮ মার্চ দেশে প্রথম তিনজনের শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ সরকারিভাবে প্রথম মৃত্যুর ঘোষণা আসে। মে মাসের মাঝামাঝি থেকে সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়তে থাকে। মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত শনাক্তের হার ছিল ২০ শতাংশের ওপরে।

এর পর ধীরে ধীরে কমতে থাকে। গত বছরের ৩ ডিসেম্বর রোগী শনাক্তের হার কমে ২.৯১ শতাংশে নেমে আসে। ডিসেম্বর থেকে ৮ মার্চ পর্যন্ত শনাক্তের হার ছিল ৫ শতাংশের নিচে। তবে গত ৯ মার্চ তা বেড়ে ৫ দশমিক ১৩ শতাংশে পৌঁছায়। ১৮ মার্চ শনাক্তের হার ছিল ১০ দশমিক ৪৫ শতাংশ। সেদিন রোগী শনাক্ত হয় ২ হাজার ১৮৭ জন, যা ১০০ দিনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

দেশে এখন পর্যন্ত করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৮ হাজার ৭৬৩ জনের। শনাক্ত হয়েছেন ৫ লাখ ৮০ হাজার ৮০৮ জন। আর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গণটিকা দেয়া শুরুর ৪১ দিনে টিকা নিয়েছেন ৫০ লাখের বেশি মানুষ। তাদের মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে ৯২৩ জনের শরীরে। টিকা পেতে নিবন্ধন করেছেন ৬৪ হাজারের বেশি।

হঠাৎ কেন করোনা সংক্রমণ বাড়ছে তার কারণ অনুসন্ধান করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে তথ্য নেয়া হয়েছে। এতে দেখা গেছে, গত ৭ ফেব্রুয়ারি গণটিকাদান শুরু হওয়ার পর থেকেই মানুষের মধ্যে গা-ছাড়াভাব তৈরি হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মানছে না মানুষ। বিয়েশাদি ও সামাজিক অনুষ্ঠান, ভ্রমণ বেড়েছে। এসব কারণেই রোগী বাড়ছে।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণেই করোনা বাড়ছে। এরই মধ্যে আইসিইউ সংকট দেখা দিয়েছে।

গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে করোনা সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে গত ফেব্রুয়ারি মাসে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন তিনি।

করোনার প্রকোপ শীতে কম কেন এমন প্রশ্নে নিউজবাংলাকে তিনি বলেছিলেন, শীতে অন্যান্য ভাইরাসের প্রকোপ বেশি থাকে। এ কারণে শীতকালে করোনা সংক্রমণ অনেকটা কমে আসে।

করোনা কেন হঠাৎ বাড়ছে এবং প্রতিরোধে করণীয় জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মানা পূর্বশর্ত। এ নিয়ে আমাদের মধ্যে শিথিলতা রয়েছে। আমরা মাস্ক পরছি না। বিয়েশাদি ও সামাজিক অনুষ্ঠান স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে গেছে।

‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই। টিকা নেই আর না নেই, আমাদের মাস্ক পরতে হবে। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। ৩০ মিনিট পরপর হাত ধুতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই করোনাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘করোনা নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সব প্রস্তাব মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটা বাস্তবায়নে আমরা জোর দিচ্ছি।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি সারা বিশ্বে দেখা দিয়েছে, এটা শুধু বাংলাদেশে নয়। আগামী ৮ এপ্রিল থেকে করোনার টিকার দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগ শুরু হবে। প্রথম ডোজ যারা নিয়েছেন, তাদের দ্বিতীয় ডোজের জন্য মোবাইল ফোনে এসএমএস দেয়া হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, করোনার নতুন ধরন একটু ভিন্ন। আক্রান্ত ব্যক্তি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। নতুন ধরনে কারও ক্ষেত্রে ফুসফুস, আবার কারও গ্যাস্ট্রো এন্টারোলজিক্যাল সিস্টেমগুলো মারাত্মকভাবে সংক্রমিত হয়। তখন দ্রুততম সময়ে চিকিৎসার আওতায় নেয়া প্রয়োজন। এ জন্য হাসপাতালগুলোকে জোরদার প্রস্তুতি নিতে হবে।

করোনা সংক্রমণ আবার বেড়ে গেলেও আপাতত লকডাউন বা সাধারণ ছুটি না দিয়ে স্বাস্থ্যবিধির ওপরই জোর দিচ্ছে সরকার। এমনটা জানিয়ে বুধবার এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘বিভিন্ন স্থান থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, পর্যটন কেন্দ্রগুলো থেকে করোনা বেশি ছড়াচ্ছে। হাসপাতালে যেসব রোগী ভর্তি হচ্ছেন, তারা দুই-এক মাসের মধ্যে বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র ভ্রমণ করেছেন। পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে মানুষের ভিড় কমাতে নির্দেশনা দিয়েছি।

‘আমাদের চিঠিপত্র কেবিনেটে গেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গেছে, অন্যান্য মন্ত্রণালয়ে আমরা দিয়েছি। ডিসিদের কাছে গেছে। তারা এ কাজটা এখন শুরু করেছে। মোবাইল কোর্ট করবে, প্রয়োজন হলে তারা জরিমানাও করবে। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায়ও করোনা ইউনিট বাড়ানোর নির্দেশ দেয়া হচ্ছে।’

৫ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ

করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে রাজধানীর পাঁচ সরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সোমবার স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এ নির্দেশ দেয়া হয়। হাসপাতালগুলো হলো, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, মিরপুরের লালকুঠি হাসপাতাল, ঢাকা মহানগর জেনারেল হাসপাতাল, মহাখালীর ডিএনসিসি করোনা আইসোলেশন সেন্টার এবং সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল।

এ বিভাগের আরো খবর