বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ডেঙ্গু না করোনা: ডাক্তাররা ধন্দে

  •    
  • ৭ ডিসেম্বর, ২০২০ ০৮:২২

ডেঙ্গু আর করোনা নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। দুই রোগের অভিন্ন উপসর্গ জ্বর। তাই কেউ জ্বরে আক্রান্ত হলে ধরে নেয়া হচ্ছে করোনা হয়েছে।

করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। আবহাওয়া অধিদফতরের ভাষ্য, ডিসেম্বরের শুরুতে দেশে শীতের আগমন ঘটেছে। গত নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে প্রতিদিন করোনাভাইরাসে রোগী শনাক্ত ও মৃত্যুর হার বেড়েছে।

চিকিৎসকেরা বলছেন, অনেকে করোনা ও ডেঙ্গু দুই ভাইরাসে একই সঙ্গে আক্রান্ত হচ্ছেন। সে রকম ক্ষেত্রে সেবা পেতে দেখা দিচ্ছে নানা জটিলতা।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন বলেন, ‘ডেঙ্গু আর করোনা নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। দুই রোগের অভিন্ন উপসর্গ জ্বর। তাই কেউ জ্বরে আক্রান্ত হলে ধরে নেয়া হচ্ছে করোনা হয়েছে।

‘দুটি ভাইরাসের উপসর্গ জ্বর, যে কারণে ডেঙ্গু না করোনা এটা শনাক্তে বেগ পোহাতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। এ জন্য হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু ও করোনার পরীক্ষার আলাদা আলাদা ব্যবস্থা রাখা দরকার। একই সঙ্গে করোনা দ্রুত শনাক্তের জন্য অ্যান্টিজেন পরীক্ষার ব্যবস্থা করা দরকার।’

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ব্রাজিলসহ বেশ কয়েকটি দেশে করোনা ও ডেঙ্গু পরীক্ষা একই সঙ্গে করা হচ্ছে। এটি মনে রেখে আমাদের চিকিৎসা পরিকল্পনা নেয়া উচিত।’

স্বাস্থ্য অধিদফতর ও হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য বলছে, চলতি বছর সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে নভেম্বরে। বছরের শুরুতে জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গুতে রোগী শনাক্ত হয়েছিল ১৯৯ জন।

ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত রোগী শনাক্তের সংখ্যা ছিল ৫০ জনের নিচে। তবে অক্টোবরে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ১৬৩ জনে। গত নভেম্বর রোগীর সংখ্যা সাড়ে তিন গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৪৭ জনে।

ডিসেম্বরের শুরু থেকে রোববার পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে ৮৬ জন। এর মধ্যে ৫ ডিসেম্বর শনিবার এক দিনে সর্বোচ্চ ২২ ব্যক্তি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন।

হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর ১ জানুয়ারি থেকে ৬ ডিসেম্বর রোববার পর্যন্ত সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ১ হাজার ২৬০ জন রোগী। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৬২ জন রোগী ভর্তি আছেন। এর মধ্যে ঢাকার ৪১টি হাসপাতালে আছেন ৫২ জন।

এ ছাড়া ডেঙ্গুতে মৃত্যু সন্দেহে এ পর্যন্ত সাত জনের তথ্য পাঠানো হয়েছে আইইডিসিআরে। এর মধ্যে চার জনের তথ্য পর্যালোচনা করে তিন জনের মৃত্যু ডেঙ্গুর কারণে হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিফতরের তথ্য বলছে, ১৪ নভেম্বর থেকে করোনা ভাইরাসে রোগী শনাক্তের সংখ্যা গড়ে দুই হাজারের বেশি ছিল। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় এ পর্যন্ত মারা গেছে ৩ হাজার ৬৯৫ জন, যা করোনায় মোট মৃত্যুর অর্ধেকের বেশি।

বর্তমানে রাজধানীতে করোনা আক্রান্ত হয়ে রোগী ভর্তি রয়েছে ২ হাজার ৩৫২ জন। সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি রয়েছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে।

গত কয়েক বছরের ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার হিসাব বলছে, বাংলাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা অক্টোবর কিংবা নভেম্বরে কমে যায়। গত বছরেও সর্বোচ্চ আক্রান্ত হয়েছিল আগস্ট মাসে। এরপর সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বরে ডেঙ্গুর প্রকোপ আস্তে আস্তে কমে আসতে থাকে।

বিশেষজ্ঞদের অভিমত, চলতি বছর অক্টোবর মাসে ভারী বৃষ্টিপাতের সঙ্গে গরমের প্রকোপ ছিল অনেক বেশি, যা ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার বংশ বিস্তারে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছে। ফলে মশা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়েছে।

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাসার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘২০০০ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ডেঙ্গুর যে ধরন, তা এবারের অক্টোবর-নভেম্বর মাসের ধরনের সঙ্গে মিলছে না। সাধারণত অক্টোবর মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে যায়, নভেম্বরে যা আরও কমে আসে। কিন্তু এবার আমরা নভেম্বরেও প্রচুর রোগী পাচ্ছি।’

এর কারণ বিশ্লেষণ করে এ কীটতত্ত্ববিদ বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এবার অক্টোবরে যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হলো, তাতে অনেক বেশি এডিস মশার প্রজননস্থল তৈরি হয়েছে। এ কারণে এডিস মশার ঘনত্ব বাড়ার পাশাপাশি রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে।’

দুই দশক আগে ২০০০ সালে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। এরপর ২০১৯ সালে সবচেয়ে বেশি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয় ও মারা যায়। সরকারি হিসাবেই আক্রান্তের সংখ্যা ছিল লাখের বেশি। মৃত্যু হয় ১৭৯ জনের। তবে হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের দেয়া তথ্য অনুসারে এই সংখ্যা আরও বেশি।

এ কারণে এবারও ডেঙ্গু নিয়ে জনমনে আতঙ্ক ছিল। তাই স্থানীয় সরকার বিভাগের পক্ষ থেকেও ডেঙ্গু প্রতিরোধে সর্বোচ্চ ‍গুরুত্ব দিয়ে বছরব্যাপী মশকনিধন কার্যক্রম চালিয়ে যেতে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়।

তবে ডেঙ্গুর মৌসুম শুরুর আগেই গত মার্চ মাস থেকে করোনাভাইরাসের কারণে ঘরবন্দি হয়ে পড়ে মানুষ। টানা দুই মাস চলে লকডাউন পরিস্থিতি। এরপর মানুষ বাইরে বের হতে শুরু করলেও পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি।

এ বিষয় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনার মধ্যে কিছুটা হলেও ডেঙ্গু রোগীরা অবহেলিত ছিল। তখন জ্বর হলেও ধরে নেয়া হতো করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। ফলে ডাক্তাররা ডেঙ্গু শনাক্তে যে পরীক্ষা করতেন, সেটাও অনেকটা কমে যায়। ডেঙ্গু রোগী শনাক্তের বাইরে থেকে গেছে।

‘এদের মধ্যে কেউ কেউ মৃত্যুবরণও করেছে, যাদের করোনা উপসর্গে মৃত্যু বলে ধরে নেয়া হয়েছে।’

এ বিভাগের আরো খবর