বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পর্যটক ফিরবে তো?

  •    
  • ১৯ আগস্ট, ২০২১ ১১:০৭

সিলেটের হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমাত নুরী জুয়েল বলেন, ‘এখন পর্যন্ত পর্যটকদের তেমন সাড়া পাচ্ছি না। মানুষের আয়-রোজগার কমে গেছে। সরকারি কর্মকর্তা ছাড়া সবাই করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ফলে এখন কেউ ঘুরতে বের হতে চাচ্ছেন না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও কিছুটা সময় লাগবে।’

দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর অবশেষে বৃহস্পতিবার থেকে খুলছে দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলো। পর্যটকদের অন্যতম পছন্দের গন্তব্য সিলেটের স্পটগুলো দর্শনার্থীদের বরণ করে নিতে প্রস্তুত।

তবে পর্যটনকেন্দ্র খোলার ঘোষণা এলেও এখন পর্যন্ত পর্যটকদের তেমন সাড়া মিলছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

করোনার সংক্রমণ না কমা ও বিধিনিষেধে মানুষের আয় কমে যাওয়ার কারণে তেমন পর্যটক সমাগম হবে না বলে আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের। বুধবার পর্যন্ত পর্যটকদের তেমন সাড়া মেলেনি বলেই তারা জানালেন।

গত বছর মার্চে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর থেকেই বন্ধ করে দেয়া হয় পর্যটন কেন্দ্রগুলো। মাঝখানে কিছুদিন খুলে দেয়া হলেও সংক্রমণ বাড়ায় গত এপ্রিলের শুরুতে আবার পর্যটকদের সমাগমে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

স্বাভাবিক সময়ে সিলেটের চার জেলায় সারা বছরই পর্যটক সমাগম লেগে থাকে। পাহাড়, ঝর্ণা, চা বাগান আর হাওরের সৌন্দর্য বরাবরই প্রকৃতিপ্রেমীদের টানে।

পর্যটক বাড়ায় সিলেটে গত একদশকে গড়ে উঠেছে শতাধিক হোটেল ও রিসোর্ট। বিনিয়োগবিমুখ হিসেবে পরিচিত সিলেটের উদ্যোক্তাদের অনেকে এই খাতে বিনিয়োগে এগিয়ে এসেছেন। ফলে পর্যটনকেই ধরা হয় সিলেটের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খাত। তবে গত দেড় বছরে এই খাতই পড়েছে সবচেয়ে সংকটে।

পর্যটনকেন্দ্র খুলে দেয়ার ঘোষণায় এই অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে বলে মনে করেন সিলেটের হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমাত নুরী জুয়েল।

তিনি বলেন, ‘আমরা তো একেবারে পথে বসে গেছি। সিলেট বিভাগে প্রতিদিন এই খাতে ক্ষতি হচ্ছে প্রায় তিন কোটি টাকা। সহজে এই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা যাবে না। তবে বন্ধ করে রাখলে তো কোনো দিনই ক্ষতি পূরণ হবে না। বরং চালু করলেই একটা সম্ভাবনা তৈরি হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রস্তুত আছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত পর্যটকদের তেমন সাড়া পাচ্ছি না। মানুষের আয়-রোজগার কমে গেছে। সরকারি কর্মকর্তা ছাড়া সবাই করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ফলে এখন কেউ ঘুরতে বের হতে চাচ্ছেন না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও কিছুটা সময় লাগবে।’

সিলেট নগরের জিন্দাবাজার এলাকার হোটেল গোল্ডেন সিটির ব্যবস্থাপক মিষ্ঠু দত্ত বলেন, ‘অন্যান্য সময় শুক্রবারের জন্য আগেই আমাদের সব কক্ষ বুকিং হয়ে যেত। এখন বুধবার পর্যন্ত কেউ বুকিংয়ের জন্য আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।

‘পর্যটনকেন্দ্র খুললেও দেশে করোনার সংক্রমণ এখনও কমেনি। সিলেটেও সংক্রমণের হার এখনও আশঙ্কাজনক। এ ছাড়া বেশির ভাগ মানুষ এখনও টিকা নিতে পারেনি। তাই মানুষ ঘুরতে বের হতে ভয় পাচ্ছে। বিশেষত পরিবার নিয়ে কেউ ঘুরতে আসতে চাচ্ছেন না।’

সিলেটের বিমানবন্দর এলাকায় সরকারি মালিকানাধীন পর্যটন মোটেলে গিয়ে দেখা যায়, আশপাশে পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে। ধোয়া-মোছা করা হচ্ছে মোটেলের স্থাপনাগুলো।

পরিচ্ছন্নতা কাজে তদারকি করছেন সাইফুল ইসলাম নামের এক কর্মী। তিনি বলেন, ‘বাক্কাদিন বন্ধ আছিল। এর লাগি আশপাশে আগাছা জমছে। সব কিছু ময়লাও হয়ে গেছে। কাইল থাকি তো টুরিস্ট আওয়া শুরু অইব। তাই সব কিছু পরিষ্কার করছি।’

সিলেটের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র বিছনাকান্দি। পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝর্ণা আর পাথুরে নদীর সৌন্দর্য দেখতে এখানে ভিড় করেন প্রচুর পর্যটক। গোয়াইনঘাট উপজেলার হাদারপার বাজার থেকে ইঞ্জিন নৌকায় করে যেতে হয় বিছানাকান্দি।

হাদারপাড়ের নৌকাচালক আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ‘পর্যটক না আওয়ায় বহুত কষ্টে আছি। আয়-রোজগার নাই। কাইল থাকি হুনছি আবার মানুষ বেড়ানিত আইব। আমিও আমার নৌকা ঠিকঠাক করছি। কিছু মেরামত কাজ করছি। এখন পর্যটক অখল আইলে আমরা খাইয়া বাঁচতে পারি।’

বর্ষা মৌসুমে পানিতে টইটম্বুর থাকে সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর। সেখানে নৌকা ভ্রমণে যান প্রচুর পর্যটক। তবে গত দুই বর্ষায়ই নিষেধাজ্ঞার কারণে পর্যটক সমাগম হয়নি। এখন নিষেধাজ্ঞা উঠলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনেই পর্যটকদের আসতে হবে বলে জানিয়েছেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কাল থেকে সব কিছু আমরা খুলে দিব। প্রস্তুতি তেমন কিছু না, তবে যেহেতু এখন পানির মৌসুম, তাই অনেকেই ঘুরতে আসতে পারেন। তবে যারা আসবেন তাদের সবাইকে মাস্ক পড়তে হবে এবং আগে যেখানে ১০০ জন এসেছেন সেখানে এখন আসবেন ৫০ জন।

তিনি জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় প্রশাসনের নজরদারি থাকবে। এ ব্যাপারে পর্যটকদেরও সহযোগিতা প্রয়োজন।

বিভাগের অন্যতম আকর্ষণীয় স্পট শ্রীমঙ্গল। এখানকার হোটেল-রিসোর্ট ও গেস্ট হাউসগুলোতেও চলছে পর্যটক বরণের প্রস্তুতি।

শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থার সাংগঠনিক সম্পাদক ও গ্রীনলিফ গেস্ট হাউসের পরিচালক এস কে দাশ সুমন বলেন, ‘করোনার কারণে শ্রীমঙ্গলের পর্যটন শিল্প রীতিমতো স্থবির হয়ে পড়েছে। পর্যটক না আসায় কেবল বড় উদ্যোক্তারা নন, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বর্তমানে যেহেতু সরকার পর্যটনকেন্দ্র খুলে দিচ্ছে, তাই আশা করি আস্তে আস্তে এই অবস্থার পরিবর্তন হবে।’

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ট্যুর গাইড হিসেবে কাজ করেন সাজু মারছিয়াং। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিল। তাই আমাদেরও তেমন কোনো কাজ ছিল না। বৃহস্পতিবার থেকে আবার উদ্যানে পর্যটকদের আনাগোনা শুরু হবে। তাই আমরাও প্রবেশ পথের কাউন্টার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে পর্যটক বরণে প্রস্তুত থাকব।’

সিলেটের পর্যটন খাতের উন্নয়নে পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন হাসান মোরশেদ। তিনি বলেন, পর্যটনকেন্দ্র খুললেও এখনই পর্যটন সেক্টরের সংকট কেটে যাবে না। কারণ মানুষের আয় কমেছে। ফলে খরচ কমাবে। আগের মতো পর্যটকরা আসবে না। এতে একেবারে শূন্য থেকে শুরু করতে হবে পর্যটন খাতের উদ্যোক্তাদের।

সিলেটের হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি সুমাত নুরী জুয়েল বলেন, সরকারি সহযোগিতা ছাড়া এই খাতে ঘুরে দাঁড়ানো খুব কঠিন। পর্যটন খাতে সরকার প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু প্রণোদনা পাওয়ার জন্য যেসব শর্ত দেয়া হয়েছে তা মানা বেশির ভাগ ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রেই সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, ‘আমরা এই শর্ত শিথিলের দাবি জানিয়েছি। এ ছাড়া হোটেল খাতে কর কমানোর দাবি জানিয়ে আসছি।’

এ বিভাগের আরো খবর