নেই চিরচেনা কোলাহল। নিঃসঙ্গতায় যেন লজ্জা পাচ্ছে ‘সাগরকন্যা’। এই সুযোগে রাজত্ব করছে লাল কাঁকড়ারা। আর সাগরলতারা যেন দোল খাচ্ছে সৈকতে। এ যেন এক নতুন সবুজের অরণ্য।
স্থানীয় লোকজন বলছেন, সব মিলে টানা লকডাউনে নতুন রূপ পেয়েছে ‘সাগরকন্যা’ হিসেবে পরিচিত কুয়াকাটা, পর্যটকদের বরণে প্রস্তুতির শেষ নেই তার।
একই স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দেখার অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত। স্বাভাবিক সময়ে ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সৈকতে সব সময় লেগে থাকে ভ্রমণপিপাসুদের বিচরণ।
করোনা সংক্রমণের কারণে চলতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা। বন্ধ সেখানকার সব আবাসিক হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগামী বৃহস্পতিবার থেকে দেশের সব পর্যটনকেন্দ্র খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে সরকারের। সে অনুযায়ী পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হচ্ছে কুয়াকাটা সৈকত। আবাসিক হোটেল-মোটেল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং সাজানো-গোছানোয় ব্যস্ত সময় পার করছেন ব্যবসায়ীরা।
কুয়াকাটার পূর্বে গঙ্গামতি সৈকতে গিয়ে দেখা গেছে, লকডাউনের কারণে কোথাও কোনো কোলাহল নেই। আছে শুধু সাগরের ঢেউ, লাল কাঁকড়া, ঝিনুক আর সবুজ অরণ্য। সব মিলে প্রকৃতি যেন নিজের মতো করে সাজিয়ে নিয়েছে নিজেকে।
সাগরলতার বিরামহীন ছুটে চলা আর লাল কাঁকড়ার ছোটাছুটি ছড়াচ্ছে মুগ্ধতা।
কুয়াকাটার পর্যটন ব্যবসায়ী আবুল হোসেন রাজু জানান, করোনার কারণে দীর্ঘদিন পর্যটক নেই। সৈকতে মোটরসাইকেলসহ পর্যটকদের হাঁটাহাঁটি নেই। এই সুযোগে যেন নিজ রাজ্যে অবাধে বিচারণের সুযোগ পেয়েছে সৈকতের প্রাণিকুল।
তিনি বলেন, ‘করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে দুই দফায় বন্ধ থাকার পর বিধিনিষেধ তুলে নেয়া হবে ১৯ আগস্ট। পর্যটকদের স্বাগত জানাতে কুয়াকাটার সব ব্যবসায়ী প্রস্তুত।’
লম্বা সময় লকডাউনের কারণে পোয়াবারো হয়েছে কুয়াকাটার প্রকৃতি-পরিবেশের।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. ছানাউল্লাহ বলেন, এক যুগেরও বেশি সময় কুয়াকাটাকে এমন দূষণমুক্ত দেখা যায়নি। পর্যটকরা আসার পরও এমন পরিবেশ থাকলে সবাই প্রকৃতির এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারত।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের কলাপাড়া উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন মান্নু জানান, লকডাউন শেষে পর্যটকদের গোটা সৈকতে বাধাহীন চলাচল বন্ধের পাশাপাশি পরিবেশ ও প্রকৃতির জন্য নির্দিষ্ট স্থান চিহ্নিত করা গেলে স্থায়ীভাবে সৌন্দর্য বজায় থাকত।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাগ্রোফরেস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক মো. মাসুদুর রহমান জানান, পরিবেশের ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কুয়াকাটার দূষণমুক্ত এ অবস্থা টিকিয়ে রাখা এখন সময়ের দাবি। কারণ জলবায়ুর বিরূপ আচারণের প্রভাব এক সময়ে পর্যটকদের ওপরও পড়বে।
কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র মো. আনোয়ার হাওলাদার জানান, পর্যটকবান্ধব যেসব কাজ পৌরসভার অধীনে রয়েছে সেগুলো অব্যাহত রাখা হবে।
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীপ জানান, গোটা সৈকত এখন দূষণমুক্ত। কোনো ধরনের ময়লা-আবর্জনা নাই। সাগরপাড়ের গাছগুলো গাঢ় সবুজ রং ধারণ করেছে। পশ্চিমে ব্লকপাড়ও সেজেছে ভিন্ন আঙ্গিকে। সবমিলিয়ে পর্যটকদের হাতছানি দিচ্ছে সাগরকন্যা কুয়াকাটা।