কক্সবাজারসহ দেশের সব পর্যটন কেন্দ্রের ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠে যাচ্ছে আর মাত্র দুইদিন পর। কিন্তু তার আগেই ভ্রমণপিপাসুরা ছুটছেন সমুদ্রের নোনা জলে পা ভিজিয়ে ক্লান্তি দূর করতে।
এ অবস্থায় করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির শঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। তারা বলছেন, প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় পর্যটকরা স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। যদিও ট্যুরিস্ট পুলিশ বলছে, বিভিন্ন পয়েন্টে তাদের নজরদারি রয়েছে। তবে বাস্তবতা হলো সৈকতের ৭০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কড়াকড়ি আরোপ সম্ভব নয়।
সরেজমিনে রোববার বিকেলে সৈকতের প্রায় সব পয়েন্টে দেখা গেছে হাজারো মানুষ। মাস্ক পরা বা অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধিও মানছেন না তারা।
বিধিনিষেধের কারণে সৈকতের প্রতিটি ফটকে ব্যারিকেড থাকার পরও সমুদ্রে নামছে মানুষ। সৈকতমুখী মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে সচেতনতামূলক মাইকিংও করা হচ্ছে।
কিন্তু প্রশাসনের এসব কর্মকাণ্ডে অবশ্য খুব একটা কাজ হচ্ছে না। সৈকতের কলাতলী, সুগন্ধা, লাবণীসহ প্রায় সব পয়েন্টের সমুদ্রজলে নামছে মানুষ।
প্রশাসনের লোকজন এলে তারা সমুদ্র থেকে উঠে যাচ্ছে, তবে পরক্ষণেই আবার নেমেছে জলে।
সৈকতে আসা পর্যটকরা বলছেন, দীর্ঘদিন লকডাউনের কারণে ঘুরতে না পারায় লকডাউন খুলে দেয়ায় আনন্দ উপভোগে সৈকতে ছুটে এসেছেন তারা।
কলাতলী পয়েন্ট দশনার্থী মুনতাহিনা বলেন, ‘লকডাউনের ঘরবন্দি ছিলাম। এখন লকডাউন খুলেছে, একটু বাড়তি আনন্দের জন্য সমুদ্রে আসলাম।’
হিমছড়ির দরিয়া নগরে আরেক দর্শনার্থী আবু রায়াত বলেন, ‘বিধিনিষেধে যান চলাচল বন্ধ ছিল। যার কারণে অনেক দিন ধরে বাচ্চাদের নিয়ে কোথাও বেড়াতে যাইনি। তাই বাচ্চাদের নিয়ে কক্সবাজারে বেড়াতে আসলাম।’
স্থানীয় বাসিন্দরা বলছেন, সমুদ্রসৈকতে গত কয়েক দিনে প্রশাসনের নজরদারি কম দেখা গেছে। আর এভাবে জনসমাগম হলে বাড়তে পারে সংক্রমণ।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসপি) মো. জামাল নিউজবাংলাকে জানান, বিধিনিষেধ শিথিল, সড়ক ও আকাশপথ এবং হোটেল-মোটেল খুলে দেয়ার পর থেকে সৈকতমুখী মানুষ। প্রতিদিন হাজারো পর্যটক কক্সবাজারে আসছে। পাশাপাশি স্থানীয়রাও সৈকতমুখী হচ্ছে।
বিধিনিষেধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেউ যাতে সৈকত ও বিনোদনকেন্দ্রে ভিড় না করে, তার জন্য নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি সব পয়েন্টে টহল জোরদার করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন ও প্রটোকল শাখার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মুরাদ ইসলাম জানান, নির্ধারিত সময়ের আগ পর্যন্ত কেউ যাতে সৈকতে প্রবেশ করতে না পারে, তা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মামুনুর রশীদ বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী বৃহস্পতিবার পর্যটন স্পটগুলো খুলে দেয়া হবে। সরকার প্রদত্ত যে নির্দেশনা আছে তা অবশ্যই মানতে হবে।
‘নির্দেশনা না মানলে বাধ্য হয়ে অন্য পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হব। কারণ কক্সবাজারবাসীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কোনো ধরনের ঝুঁকি নিতে চাই না।’
তিনি জানান, জেলায় সংক্রমণের হার প্রায় ২০ শতাংশ। তাই সবকিছুর আগে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
দেশে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এ বছরের ১ এপ্রিল বন্ধ ঘোষণা করা হয় দেশের সব পর্যটনকেন্দ্র। প্রায় চার মাস পর আগামী বৃহস্পতিবার কক্সবাজারের সব পর্যটনকেন্দ্র খোলা হবে। গত ১০ আগস্ট থেকে বিভিন্ন আবাসিক হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলো খোলা রয়েছে।
গত ১৪ আগস্ট পর্যন্ত করোনা শনাক্ত হয়ে কক্সবাজারে মারা গেছেন ২৩৫ জন। তার মধ্যে ২৯ জন রোহিঙ্গা। এ সময়ে সুস্থ হয়েছেন ১৭ হাজার ৪৫ জন।