প্রতিযোগিতামূলক রান্নার রিয়েলিটি শো মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার চূড়ান্ত পর্বে তৃতীয় হিসেবে বিজয়ী হয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কিশোয়ার চৌধুরী।
সংবাদমাধ্যমে দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবারের ১৩তম আসরে বিজয়ী হয়েছেন ২৭ বছর বয়সী ভারতীয় বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক জাস্টিন নারায়ণ। প্রথম রানারআপ হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েল্সের বাসিন্দা পিট ক্যাম্পবেল। আর দ্বিতীয় রানারআপ হিসেবে বিজয়ী হয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কিশোয়ার চৌধুরী।
ফাইনালে কিশোয়ার পেয়েছেন ১১৪ নম্বর আর পিট পেয়েছেন ১২৪। অন্যদিকে, প্রায় পূর্ণ নম্বর নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন জাস্টিন নারায়ণ।
বিজয়ী হিসেবে পিট ও কিশোয়ার পাবেন যথাক্রমে ৩০ হাজার ডলার ও ২০ হাজার ডলার।
জয়ের পর এক প্রতিক্রিয়ার কিশোয়ার বলেন, ‘ আন্তর্জাতিকমানের এই প্রতিযোগিতায় বাঙালি রান্নার ঐতিহ্য তুলে ধরতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত ও গর্বিত।’
গ্র্যান্ড ফাইনাল
দুই দিনের এই চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে জাস্টিন, পিট ও কিশোয়ারের মধ্যে। এই আসরে বিশ্ববিখ্যাত শেফ পিটার গিলমোরের উপস্থিতি প্রতিযোগীদের মধ্যে লড়াইকে আরও তীব্র করে।
চূড়ান্ত পর্বে তারা একই সঙ্গে দুটি ভিন্ন ধরনের খাবার তৈরি করতে হয়েছে তাদের।
মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার চূড়ান্ত পর্বে বিজয়ী জাস্টিন নারায়ণ (বামে), প্রথম রানারআপ পিট ক্যাম্পবেল (ডানে) আর দ্বিতীয় রানারআপ হিসেবে বিজয়ী হয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কিশোয়ার চৌধুরী (মাঝে)। ছবি: সংগৃহীত
কিশোয়ারের তৈরি মিষ্টান্ন খাবারের ভূয়সি প্রশংসা করেন বিচারকরা।
এর আগে, মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার চূড়ান্ত পর্বে পান্তাভাত ও আলু ভর্তা বানিয়েছেন কিশোয়ার চৌধুরী। একইসঙ্গে বিচারকদের উদ্দেশে পরিবেশিত তার রান্নায় ছিল সার্ডিন মাছ ভাজি ও সালাদ।
সোমবার মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজ থেকে এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
সেখানে দেখা যায়, নিজের রান্নার বিবরণ দিয়ে কিশোয়ার বলছেন, আপনারা এই খাবার রেস্টুরেন্টে পাবেন না। এটি বেশ দুর্লভ। তবে ফাইনালে এই খাবার তৈরি করতে পারাটা আমার জন্যে বেশ আনন্দের।
খাবার সামনে নিয়ে বিচারকদের একজন বলেন, এটি খুবই শক্তিশালী খাবার। এটি ইতিহাসে ও স্বাদেও শক্তিশালী।
বিচারকদের আরেকজন বলেন, খাবারটি দেখে আমার জিভে পানি আসছে।
সোমবারের এপিসোডের প্রতিযোগিতায় ৫১ পয়েন্ট পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন কিশোয়ার। অন্য দুই প্রতিযোগী পিট ও জাস্টিনের স্কোর যথাক্রমে ৫৩ ও ৫০।
মঙ্গলবার পর্দা নামবে মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার এবারের আসরের।
কিশোয়ার চৌধুরী অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া রাজ্যের মেলবোর্নের বাসিন্দা। তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা অস্ট্রেলিয়াতেই। প্রকাশনা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কিশোয়ার সন্তানদের জন্য বাংলাদেশি খাবার রান্না করতে গিয়েই পরিবারের কাছে শিখেছেন নানান রেসিপি।
কিশোয়ার চৌধুরী অস্ট্রেলিয়ায় সমাজসেবার জন্য বিশেষভাবে সুপরিচিত বাংলাদেশি ব্যবসায়ী কামরুল হোসাইন চৌধুরী এবং লায়লা চৌধুরীর মেয়ে।
জাস্টিন নারায়ণ দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে এই প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়েছেন। তার আগে, ২০১৮ সালে ভারতীয় বংশোদ্ভূত শসী শ্যালিয়ান আন্তর্জাতিক মানের এই প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়েছিলেন। তিনি অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেইডের কারাগারে শেফ হিসেবে কাজ করতেন।
মাস্টারশেফ বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় রান্না বিষয়ক রিয়েলিটি শো। বিশ্বের কমপক্ষে ৪০টি দেশে নিজস্ব আয়োজনে মাস্টারশেফ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। তবে জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়া শীর্ষে রয়েছে।
কে এই কিশোয়ার চৌধুরী
কিশোয়ার চৌধুরী অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া রাজ্যের মেলবোর্নের বাসিন্দা। তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা অস্ট্রেলিয়াতেই। দীর্ঘদিন ধরে বিজনেস ডেভেলপার হিসেবে কাজ করছেন তিনি। পাশাপাশি পারিবারিক প্রকাশনা ব্যবসাও দেখভাল করেন তিনি।
কিশোয়ার সন্তানদের জন্য বাংলাদেশি খাবার রান্না করতে গিয়েই পরিবারের কাছে শিখেছেন বাঙালির ঐতিহ্যবাহী রান্না। আর রান্নায় হাতেখড়ি ছোটবেলাতেই বাবা-মায়ের হাত ধরে।
কিশোয়ার চৌধুরী অস্ট্রেলিয়ায় সমাজসেবার জন্য বিশেষভাবে সুপরিচিত বাংলাদেশি ব্যবসায়ী কামরুল হোসাইন চৌধুরী এবং লায়লা চৌধুরীর মেয়ে।
কিশোয়ার বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। কিশোয়ারের দাদার বাড়ি ঢাকার বিক্রমপুরে। নানার বাড়ি কলকাতার বর্ধমানে। প্রায় ৫০ বছর আগে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমান তার বাবা-মা। সেখানেই জন্ম হয় কিশোয়ারের।