করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে একে একে বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে দেশের সব বিনোদন ও পর্যটন কেন্দ্র। এরই ধারাবাহিকতায় পর্যটকদের জন্য এবার বন্ধ হলো কক্সবাজার সৈকত। এর আগে তিন পার্বত্য জেলায় এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে প্রশাসন। এ ছাড়া পর্যটক আনাগোনার লাগাম টেনে ধরা হয়েছে শেরপুর ও মৌলভীবাজারে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ নিউজবাংলাকে বলেন, ১ এপ্রিল মধ্যরাত থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত জেলার সব পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে। এরই মধ্যে সমুদ্র সৈকতে যাতে কেউ প্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য ব্যারিকেড স্থাপন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দিনভর সৈকতে চালানো হয় সচেতনতামূলক প্রচার।
তিনি আরও বলেন, চলতি বছরের শুরুর দিকে দেশে করোনার প্রকোপ কিছুটা কম ছিল। কিন্তু মার্চের শেষদিকে আবার করোনার প্রকোপ বেড়েই চলেছে। করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে নতুন করে কক্সবাজার জেলায় সংক্রমণ পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এই অবস্থায় করোনা প্রতিরোধ এবং প্রাণহানি ঠেকাতে বাড়তি সতর্কতার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
জেলা করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ বিষয়ক কমিটির সভাপতি মামুনুর রশীদ আরও বলেন, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকার ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করে। যা কার্যকর করতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে অভিযান চলছে। সেই সঙ্গে সচেতনতা বৃদ্ধিতে চলছে প্রচার।
পাহাড়ে পর্যটক না
১৪ দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ির ও বান্দরবানের সব পর্যটনকেন্দ্র।করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় করণীয় নির্ধারণে রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসন সম্মেলনকক্ষে বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টায় জরুরি সভায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ১ এপ্রিল থেকে ১৪ দিন জেলার সব পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন।
সভায় জানানো হয়, করোনা সংক্রমণ রোধে শহরের সব হোটেল-রেস্তোরাঁয় ধারণক্ষমতার ৫০ ভাগ মানুষ প্রবেশ করতে পারবে।
প্রতিদিন রাত ৮টার পর শহরের সব দোকানপাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে। তবে জরুরি সেবা হিসেবে ওষুধের দোকান খোলা থাকবে।
সোমবার সরকারের জারি করা ১৮ দফা নির্দেশনা মেনে স্বাস্থ্যবিভাগ কাজ করবে বলে জানান রাঙ্গামাটি সিভিল সার্জন কার্যালয়ের করোনা বিষয়ক ফোকাল পারসন ডা. মোস্তফা কামাল।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজেও বুধবার একইভাবে আগামী ১৪ দিনের জন্য জেলার সব পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়া হয়।
রাঙ্গামাটির ঝুলন্ত ব্রিজ
এর আগে জেলা প্রশাসন থেকে গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় সমাবেশ সীমিত আকারে করা, বাড়ি থেকে বের হলে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলকসহ আরও কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।
১ এপ্রিল থেকে আগামী ১৪ এপ্রিল র্পযন্ত জেলার অর্ধশত পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে বান্দরবান জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভিন নিউজবাংলাকে জানান, দুই সপ্তাহের জন্য পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের না আসার জন্য একান্তভাবে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। এ জেলায় বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানও সীমিত আকারে করার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
শেরপুরে ১৫ দিনের জন্য সমাগম নিষিদ্ধ
শেরপুরে করোনা সংক্রমণ রোধে ১ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত পর্যটন কেন্দ্র, সিনেমা হল, বিয়ে, খেলাধুলা এবং সব ধরনের সভা-সমাবেশ বন্ধ ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন।
নির্দেশনা জারি করে এরই মধ্যে জেলাজুড়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে। সেই সঙ্গে জেলা প্রশাসনের অফিশিয়াল ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে বন্ধ ঘোষণা সংক্রান্ত পোস্ট দেয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত ঝিনাইগাতীর গজনী অবকাশ কেন্দ্র, নালিতাবাড়ীর মধুটিলা ইকো পার্ক, তাড়ানি পানিহাতা, শ্রীবরদীর রাজার পাহাড়, ডিসি উদ্যান, অর্কিডসহ জেলার সব পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ থাকবে। আর পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে।
শেরপুরে পর্যটন কেন্দ্রে বিধিনিষেধ জারি
তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যান চলাচল, হোটেল ও উপাসনালয় খোলা রাখা যাবে। এ ছাড়া প্রয়োজন ছাড়া রাত ১০টার পর বাড়ির বাইরে না বেরোনোর নির্দশনা দেয়া হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক (ডিডিএলজি) এ টি এম জিয়াউল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মৌলভীবাজারে বন্ধ সব পর্যটন কেন্দ্র
করোনা সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা দেশের ২৯টি জেলার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে মৌলভীবাজার জেলা।
করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন ১ এপ্রিল বৃহস্পতিবার থেকে ১৪ দিনের জন্য জেলার সব পর্যটন স্থানগুলো বন্ধ ঘোষণা করেছেন।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান নিউজবাংলাকে জানান, জেলায় করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, মাস্ক ব্যবহারে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে, যেসব জেলায় উচ্চ সংক্রমণ রয়েছে, প্রয়োজনে সেসব জেলার সঙ্গে আন্তঃজেলা যোগাযোগও সীমিত করা হতে পারে। প্রয়োজন হলে স্থানীয়ভাবে লকডাউন আরোপ করা হতে পারে। তবে সেটি সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন জেলার পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেবেন।