একসময়ের দুর্গম সাজেকের যোগাযোগব্যবস্থা এখন উন্নত হয়েছে। বিদ্যুতের আলোয় ঝলমল করছে সাজেক। মানুষের জীবনমান হয়েছে উন্নত।
রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার বাঘাইহাট হলো সাজেক সংরক্ষিত বনাঞ্চলের কাঠ, বাঁশসহ বিভিন্ন বনজদ্রব্যের প্রসিদ্ধ বিক্রয়কেন্দ্র। এই বাঘাইহাট থেকে রুইলুই পর্যটন কেন্দ্রের দূরত্ব ৩৪ কিলোমিটার। এই দুই স্থানের মধ্যে অবস্থিত সাজেক সংরক্ষিত বনাঞ্চল।
২০১৩ সালে বাঘাইহাট-রুইলুই পর্যটনকেন্দ্র সড়ক নির্মাণের পর রুইলুই পর্যটনকেন্দ্রের অবস্থার দ্রুত পরিবর্তন হতে থাকে। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে পর্যটনকেন্দ্র রুইলুই এলাকা বিদ্যুৎ-সংযোগের আওতায় আসে।
তবে সড়ক নির্মাণের আগে রুইলুই পর্যটনকেন্দ্র ছিল বিচ্ছিন্ন ও দুর্গম। সেই সময় সেখানে মানুষের ন্যূনতম মৌলিক চাহিদাও পূরণ করার সুযোগ ছিল না। সেই দুর্গম সাজেক বিজলিবাতির আলোয় আলোকিত। আর যোগাযোগব্যবস্থাও উন্নত হয়েছে।
সম্প্রতি সাজেক পর্যটন এলাকা ও আশপাশের বাসিন্দারা নিউজবাংলাকে বলেছেন, তাদের জীবনমান উন্নত হয়েছে।
আঁকাবাঁকা রাস্তা চলে গেছে সাজেকের পথে। ছবি: নিউজবাংলা
রুইলুই মৌজার হেডম্যান এল থাংগ্যা পাংখোয়া জানান, আগে তো তারা বিচ্ছিন্ন ছিলেন। কোনো সড়ক ছিল না। উপজেলা সদর বাঘাইছড়িতে যেতে তাদের পুরো একদিন হাঁটতে হতো। সংরক্ষিত বন অতিক্রম করার সময় পশু ও সাপের আক্রমণের ভয় থাকত। এখন সড়ক হওয়ায় অনায়াসে যাতায়াত করতে পারেন। এখন রুইলুইতে বিদ্যুৎ-সংযোগ দেয়া হয়েছে। তাদের জীবনযাত্রা এখন অনেক সহজ হয়েছে। এ জন্য তিনি সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ।
সাজেক রুইলুইকেন্দ্রের হ্যালিপ্যাড। ছবি: নিউজবাংলা
সাজেক রুইলুই পর্যটনের পার্শ্ববর্তী এলাকা ছয়নাল ছড়া দোপথা গ্রামের ব্যবসায়ী বিপুল কান্তি চাকমা বলেন, বিদ্যুৎ-সংযোগ পাওয়ায় এবং যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় তাদের অনেক সুবিধা হয়েছে। আগে তারা অন্ধকার দূর করতে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করতেন। এরপর এলো বিদ্যুৎ। এখন বিজলিবাতির আলোয় রাতেও তারা সহজে অনেক কাজ করতে পারেন।
তবে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘শুকনো মৌসুমে সাজেকে পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়। এ সমস্যার সমাধান হওয়া দরকার।’
সাজেকে রাতের দৃশ্য। ছবি: নিউজবাংলা
বাঘাইহাট-রুইলুই সড়কের পাশে ৯ নম্বর ত্রিপুরা পাড়া অবস্থিত। এই পাড়ার প্রধান চিরন কার্বারি বলেন, এই দুর্গম সাজেকে রাস্তা হবে, বিদ্যুৎ আসবে তারা কখনও কল্পনা করতে পারেননি। এখন পাড়ার পাশ দিয়ে চলে গেছে পাকা সড়ক। বিদ্যুতের আলো পেয়েছেন। তবু দুঃখ আছে, এই এলাকার মানুষ খাদ্যের অভাবে থাকে। এই অভাব দূর করা দরকার।
সাজেক ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নেলসন চাকমা বলেন, রুইলুই পর্যটনকেন্দ্র হওয়ায় অনেক সুযোগসুবিধা পাচ্ছেন তা সত্য। কিন্তু সাজেক ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ অত্যন্ত গরিব। চিকিৎসাব্যবস্থা নেই বললেই চলে।
তিনি সাজেকের প্রত্যন্ত এলাকায় বিশেষ প্রকল্প হাতে নিয়ে প্রতিটি ঘরে সোলার প্যানেল, প্রতিটি গ্রামে সংযোগ সড়ক ও অভাবের সময় রেশনের ব্যবস্থা করার দাবি জানান।
ভোরবেলায় সাজেক। ছবি: নিউজবাংলা
পার্বত্য খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরন্তর যে উন্নয়নের কাজ করছেন, দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো পার্বত্য অঞ্চলেও তার ছোঁয়া লেগেছে। যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও চিকিৎসাসেবা ব্যবস্থায় বিপুল উন্নয়ন হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমরা বলতে পারি একসময়ের দুর্গম সাজেক এখন অনেক আলোকিত ও সমৃদ্ধ। এভাবেই তো দেশ এগিয়ে যাবে। এই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারলে আর বেশি দেরি নেই বাংলাদেশ একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্রে পরিণত হবে।’