চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে বৃহস্পতিবার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ছবি তুলছিলেন সিলেটের সাফায়েত হোসেন। ছবি তোলা শেষে ফটোগ্রাফারের সঙ্গে ছবিগুলো প্রিন্ট করা নিয়ে কথাকাটি হয় তার।
কিছুক্ষণ পর ওই ফটোগ্রাফারের সঙ্গেই ছবিগুলো প্রিন্ট করতে যান সৈকতের সায়মা মার্কেটের নিচতলার নামফলকহীন একটি দোকানে। তাদের পিছু নেন নিউজবাংলার প্রতিবেদক। ছবি প্রিন্ট করতে গিয়ে দ্বিতীয় দফায় কথাকাটাকাটি হয় তাদের মধ্যে।
এ নিয়ে সাফায়াত জানান, সৈকতে আসার পর তাকে প্রতিটি ১৫ টাকা দরে ১০টি ছবি তুলে দেয়ার প্রস্তাব দেন ওই ফটোগ্রাফার। ছবি তোলা শেষে ওই ফটোগ্রাফার তাকে জানান, ৫৯টি ছবি হয়েছে; সব ছবি প্রিন্ট করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘৫৯টি ছবির মধ্যে একই ছবি একাধিকবার ছিল। সবগুলো ছবি না নিয়ে কথামতো ১০টি ছবি নিতে চাইলে ওই ফটোগ্রাফার ক্যামেরায় থাকা ছবিগুলো ডিলিট করে দেয়ার হুমকি দেন। পরে দর কষাকষি করে ৩৫টি ছবি প্রিন্ট করাতে বাধ্য করেন ওই ফটোগ্রাফার।’
ওই স্থানে থাকা মো. কাউছার নামে আরেক পর্যটকও করেন একই অভিযোগ।
তিনি নিউজবাংলাকে জানান, স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে গিয়ে একই পরিস্থিতির শিকার হন তিনি। ১৫টির কথা বলে ১৩৩টি ছবি তুলে সবগুলো নিতে তাকে বাধ্য করা হয়।
পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঝামেলা এড়াতে পুলিশকে অভিযোগ করা হয়নি।’
পতেঙ্গা সৈকত ট্যুরিস্ট পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, সৈকতে ভ্রাম্যমাণ ফটোগ্রাফার রয়েছেন ২২০ জন। শুক্র ও শনিবার ছুটির দিনে ফটোগ্রাফারের সংখ্যা আরও বাড়ে। এসব ফটোগ্রাফার দিনে গড়ে ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা আয় করেন।
চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় পর্যটন স্পট হওয়ায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্তই পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে। একটু ফুসরত পেলে প্রাণভরে শ্বাস নিতে সৈকতে আসেন নগরবাসী। দেশের অন্যতম বৃহৎ সমুদ্র সৈকত হওয়ায় চট্টগ্রামের বাইরে থেকেও অনেকে আসেন।
সৈকতে ভ্রাম্যমাণ ফটোগ্রাফারদের এমন কর্মকাণ্ড প্রায়শ ভ্রমণার্থীদের আনন্দ নষ্ট করে। যদিও এ ধরনের হয়রানির ক্ষেত্রে ঝামেলা এড়াতে পুলিশকে জানান না অধিকাংশ পর্যটক।
হয়রানির ব্যাপারে কথা বলতে চাইলে অবশ্য সৈকতের অধিকাংশ ফটোগ্রাফার তা এড়িয়ে যান। যারা কথা বলেছেন তারাও দাবি করেন, হয়রানি হয় না।
মো. হেলাল নামের এক ফটোগ্রাফার দাবি করেন, তিনি পাঁচ বছর ধরে এই সৈকতে ছবি তুলেন। তবে তারা কাউকে হয়রানি করেন না।
পতেঙ্গা সৈকতের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পর্যটকদের সুরক্ষা দেয়ার দায়িত্ব ট্যুরিস্ট পুলিশের। আমরা তাদেরকে পর্যটকদের সুরক্ষায় সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’
পতেঙ্গা সৈকত ট্যুরিস্ট পুলিশের ইনচার্জ এনামুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কম ছবি তোলার কথা বলে বেশি ছবি তোলা এবং সেসব ছবি নিতে বাধ্য করার কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
হয়রানির শিকার হলেও অধিকাংশ মানুষ অভিযোগ করেন না এটি অবশ্য স্বীকার করেছেন তিনি। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘সৈকতে আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থী যেসব ঘটনা ঘটে, আমরা হয়তো তার ১০ শতাংশ অভিযোগ পাই। এজন্য হয়রানি কমাতে সবসময় আমাদের চারটি দল সৈকতে টহল দেয়।’
পতেঙ্গা সৈকতের অবস্থান কর্ণফুলী নদী ও বঙ্গোপসাগরের মিলনস্থলে। এই সৈকতকে ঘিরে বর্তমানে হোটেল-মোটেলসহ বিভিন্ন অবকাঠামো গড়ে উঠছে।
এ ছাড়া সিডিএ আউটার রিং রোড প্রকল্পের আওতায় সৈকতের ৫ কিলোমিটার জায়গায় ওয়াকওয়ে, সুপরিসর আসন, খেলার মাঠ, সাগরে সাঁতারের পর গোসলের ব্যবস্থা, আধুনিক শৌচাগার ও কার পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রতিদিন এ সৈকতে গড়ে পাঁচ থেকে ছয় হাজার পর্যটকের সমাগম হয়। ছুটির দিনে এ সংখ্যা বাড়ে আরও কয়েকগুণ।