বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

২০২০-এ এভিয়েশনে আলোচিত ১০

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ৩০ ডিসেম্বর, ২০২০ ১৫:২৮

করোনা মহামারিতে লকডাউন, বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা, শিডিউল বিপর্যয়ের জেরে পথ পরিবর্তন, সূচি পরিবর্তনসহ বিমান পরিবহনের রেকর্ড বইতেও বেশ ওলটপালট হয়েছে ২০২০ সালে। অভিনব উপায় আর ব্যতিক্রমী পথে হাঁটার চেষ্টা করেছে অনেক এয়ারলাইন্স।

২০২০ সালটি বিমান চলাচল খাতের জন্য ছিল একটি আতঙ্কের বছর। করোনা মহামারির কারণে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে লকডাউন, যাত্রী পরিবহনে কড়াকড়ি আর নতুন নতুন স্বাস্থ্যবিধির কারণে যেসব খাত সবচেয়ে বেশি ধাক্কা খেয়েছে তার মধ্যে এভিয়েশন বা বিমান পরিবহন খাত অন্যতম।

তবে খুব খারাপ এই বছরটিতেও হাতেগোনা কিছু মজার, আশা জাগানিয়া ও ব্যতিক্রমী মুহূর্ত কিছুটা হলেও খুশির ছটা ফেলেছে।

আলাস্কার অ্যাংকরেজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

১. বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ত আলাস্কার পিচ্চি বিমানবন্দর

বরফে ঢাকা যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কার অ্যাংকরেজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে না আছে সিঙ্গাপুরের চেঙ্গি বিমানবন্দরের মতো ঝরনা বা শিকাগোর ও’হারা বিমানবন্দরের মতো আটটি রানওয়ে। তারপরেও গত এপ্রিলে ছোট এই বিমানবন্দরটিই কিছু সময়ের জন্য হয়ে উঠেছিল বিশ্বের ব্যস্ততম বিমানবন্দর। মূলত মহামারির কারণে বিশ্বজুড়ে যাত্রী পরিবহন অনেকটা স্থবির হওয়ার কারণে এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ নির্বিঘ্ন করতে গিয়েই এমন ঘটনা। পণ্য পরিবহনে অ্যাংকরেজ বিমানবন্দরের বিশেষ সুবিধা থাকায় হঠাৎ করেই এর নাম বিশ্বের ব্যস্ততম বিমানবন্দরের তালিকায় উঠে যায়।

২. ‘ফ্লাইটস নোহোয়্যার’ বা ‘গন্তব্যহীন ফ্লাইট’

মহামারির এই সময়ে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে অভিনব উপায় বের করার বিকল্প নেই, আর সে পথে হেঁটেছে কোয়ানটাস/কানটাস এয়ারলাইনসের ‘ফ্লাইট নোহোয়্যার’। অস্ট্রেলিয়ার সিডনি থেকে উড়ে আবার সিডনি বিমানবন্দরেই ফিরে আসা যাত্রীর অভাব হয়নি এমন ফ্লাইটে। ভ্রমণপাগল মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ে কিনেছেন টিকিট। এয়ারলাইনস কর্মীরা জানান, বায়রন বে ও গোল্ড কোস্টের মতো দর্শনীয় স্থানের ওপর দিয়ে ঘুরে আসার সাত ঘণ্টার একটি ফ্লাইটের টিকিট বিক্রি শুরুর ১০ মিনিটের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়।

তাইওয়ানেও বেশ ভালো সাড়া মিলেছে এ ধরনের ‘গন্তব্যহীন ফ্লাইট’-এ। সেখানকার বিমান পরিবহন সংস্থাগুলো আরও অভিনব উপায় বের করেছে, উড়োজাহাজে ‘স্পিড ডেটিং’। ওই অঞ্চলের জনপ্রিয় একটি বিমান পরিবহন সংস্থা ইভা এয়ার-এর স্লোগান ‘ফ্লাই! লাভ ইজ ইন দ্য এয়ার (উড়ুন! ভালোবাসা বাতাসে ভাসছে)’। থাই এয়ারওয়েজ তাদের ‘ফ্লাই নোহোয়্যার’-এর আয়োজনে গুরুত্ব দিয়েছে আধ্যাত্মিকতাকে। সেদেশের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থানগুলোর ওপর দিয়ে যাত্রীদের ঘুরিয়ে আনছে এয়ারলাইনসটি।

৩. এভিয়েশন-এর নসট্রাডামুস নাওমি ক্যাম্পবেল

ব্রিটিশ মডেল, অভিনেত্রী নাওমি ক্যাম্পবেল যেন বিমান পরিবহন খাতের এক নসট্রাডামুস- ভবিষ্যৎদ্রষ্টা। ২০১৯ এর গ্রীষ্মে নাওমি উড়োজাহাজে ভ্রমণে তার রীতিনীতি চালু করেন। হাতমোজা, মাস্ক, ব্যাকটেরিয়া নিরোধক ইত্যাদির ব্যবহার তিনি যখন শুরু করেন, তখনও বিশ্ববাসী ভাবতেও পারেনি আর কয়েক মাসের মধ্যে এটাই হয়ে উঠবে স্বাভাবিক বিধি।

৪. বিশ্বের দীর্ঘতম ফ্লাইট আরও দীর্ঘ

করোনা মহামারির কারণে পথ-পরিবর্তন, সূচি-পরিবর্তন করার পাশাপাশি বিমান পরিবহনের রেকর্ড বইতেও বেশ ওলটপালট হয়েছে। প্রথম ঘটনাটি ফরাসি বিমান পরিবহন সংস্থা এয়ার তাহিতি নুই-র।

যাত্রী পরিবহনে বিশ্বের দীর্ঘতম পথ পাড়ি দেয়ার রেকর্ড গড়েছে তাদের একটি ফ্লাইট। কোভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে নয় হাজার ৭৬৫ মাইল পথ পাড়ি দিয়ে তাহিতি থেকে প্যারিস পৌঁছায় উড়োজাহাজটি। এরপর, কিছুদিন বিশ্বের সবচেয়ে বড় যাত্রীবাহী বিমান এয়ারবাস এ থ্রিএইটজিরো দিয়ে অস্ট্রেলিয়া থেকে লন্ডন সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করে কোয়ানটাস। সবশেষ ঘটনাটি সিঙ্গাপুর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নেওয়ার্ক বিমানবন্দর যাওয়ার।

নভেম্বরে টানা ১৮ ঘণ্টা উড়ে বিশ্বের স্বীকৃত দীর্ঘতম যাত্রীবাহী ফ্লাইটের রেকর্ড গড়ে এই ফ্লাইট। কারণ, মহামারি পরিস্থিতিতে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস তাদের গন্তব্য নিউ ইয়র্কের জেএফকে বিমানবন্দর থেকে নিউ জার্সির নেওয়ার্ক বিমানবন্দরে সরিয়ে নেয়, ফলে যাত্রা পথের মোট দূরত্ব আরও আড়াই মাইল বেড়ে হয় নয় হাজার ৫৩৬ দশমিক ৫ মাইল।

৫. যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ হয়েছে মালবাহী উড়োজাহাজ

করোনা মহামারির কারণে যাত্রী বহনে খরা, দুর্দশা কাটাতে পণ্য পরিবহনেই মনোযোগ বাড়াতে হয়েছে বিমান সংস্থাগুলোর। এই পথে হাঁটতে গিয়ে সংবাদ হয়েছে পর্তুগালের চার্টার অপারেটর হাই ফ্লাই। বিমান পরিবহন সংস্থাটি তাদের মালিকানাধীন একমাত্র এ থ্রিএইটজিরো উড়োজাহাজের বেশিরভাগ যাত্রী-আসন সরিয়ে একে মালবাহী উড়োজাহাজে রূপান্তর করেছে। এর মধ্যদিয়ে তারা প্রথম একটি এ থ্রিএইটজিরো উড়োজাহাজকে পণ্যবাহী উড়োজাহাজে পরিণত করার রেকর্ড গড়ে।

৬. পাইলটের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই উড়োজাহাজের টেক অফ

এটা বছরের শুরুর দিকের একটি ঘটনা। জানুয়ারিতে বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এয়ারবাস সফলভাবে স্বয়ংক্রিয় পাইলট প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে উড়োজাহাজের টেক অফ বা উড্ডয়ন করে সংবাদ মাধ্যমে আলোড়ন সৃষ্টি করে। ফ্রান্সের তুলো-ব্লাগনাক বিমানবন্দরে একটি এ থ্রিফাইভজিরো-থাউজেন্ড উড়োজাহাজে এই সাফল্য অর্জন করে তারা। সাধারণত আকাশে ওড়ার সময় উড়োজাহাজের অটো-পাইলট সিস্টেম সেটিকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং টেক অফ এবং ল্যান্ডিংয়ের কাজটি ঝুঁকিপূর্ণ বলে পাইলটরাই এই দায়িত্ব পালন করে থাকেন। তবে এই প্রথম অটো-পাইলটে আটবার সফলভাবে টেক অফ করার খবর জানায় এয়ারবাস। এ সময় দুজন পাইলট বিমানের ককপিটে স্ট্যান্ডবাই ছিলেন।

৭. জ্বালানি তেল ছাড়াই উড়োজাহাজের উড্ডয়ন

বিমান পরিবহন খাতের আরেকটি সাফল্যগাঁথার খবর আসে ২০২০ সালের মে মাসে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় সম্পূর্ণ বিদ্যুৎচালিত উড়োজাহাজ এর প্রথম ফ্লাইট সম্পন্ন করে। নয় জন যাত্রী বহনে সক্ষম ইক্যারাভান উড়োজাহাজটি ওয়াশিংটনের মুসা হ্রদের ওপর ৩০ মিনিটের সফল উড়ান পরিচালনা করে। এরপর সেপ্টেম্বরে এয়ারবাস তাদের জিরো ই উড়োজাহাজ উন্মুক্ত করে। ইউরোপের এই বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ২০৩৫ সাল নাগাদ দূষণমুক্ত যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ বাজারে আনার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।

৮. অবশেষে চালু হলো বার্লিনের ‘অভিশপ্ত’ বিমানবন্দর

প্রায় এক দশকের টানাপোড়েন, অভিযোগ আর অদক্ষতার সমাপ্তি ঘটিয়ে গত অক্টোবরে চালু হয়েছে বার্লিন-ব্রানডেনবুর্গ ভিলি ব্রান্ডট্‌ বিমানবন্দর। জার্মানির ব্রানডেনবুর্গের এই বিমানবন্দরটি শুধু নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ১০ বছর পিছিয়েই পড়েনি, এর নির্মাণ খরচ বেড়েছে ৪০০ কোটি ইউরো এবং করোনা মহামারির সময়ে এটি চালু হয়েছে। এতেও শেষ রক্ষা হয়নি, এক জন যাত্রীও ওঠানামা করার আগেই রাজ্য সরকারের কাছ থেকে আরও ৩০ কোটি ইউরো সাহায্য নিতে হয়েছে।

৯. তীব্র গতির বিমান

গত শতাব্দীর আশি-নব্বইয়ের দশকে কনকর্ড উড়োজাহাজের কথা হয়তো অনেকেরই মনে আছে। সুপারসনিক যাত্রীবাহী বিমানের এক অনন্য প্রতীক ছিল সেটি। তবে নানা জটিলতায় বন্ধ হয়ে যায় কনকর্ডের উড়ান। তবে তীব্র গতির উড়োজাহাজের সম্ভাবনা মরে যায়নি।

গত ফেব্রুয়ারিতে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ দ্রুততম সাবসনিক ফ্লাইটের রেকর্ড গড়ে নিউ ইয়র্ক থেকে লন্ডনগামী একটি ফ্লাইটে, যার সর্বোচ্চ গতি ছিল ঘণ্টায় ৮০০ মাইলের বেশি। এরপর সেপ্টেম্বরে একটি সংবাদ প্রচার হয় যে, ২০২৫ সাল নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রে একটি সুপারসনিক এয়ার ফোর্স ওয়ান দেখা যেতে পারে। বলে রাখা ভালো, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট যে উড়োজাহাজে ভ্রমণ করেন সেটাই এয়ার ফোর্স ওয়ান।

এ ছাড়া ক্যালিফোর্নিয়া ভিত্তিক স্টার্টআপ এক্সোসনিক একটি লো-বুম সুপারসনিক বিমান বানানোর চেষ্টা করছে। আটলান্টাভিত্তিক আরেকটি প্রতিষ্ঠান হারমেউস করপোরেশন ২০ আসনের একটি হাইপারসনিক উড়োজাহাজ তৈরির প্রচেষ্টায় যুক্ত হয়েছে, তাদের প্রতিশ্রুতি হচ্ছে যাত্রীদেরকে ৯০ মিনিটে নিউ ইয়র্ক থেকে লন্ডন পৌঁছে দেয়া। ডেনভারত্তিক স্টার্টআপ বুম অক্টোবরে তাদের এক্সবিওয়ান উড়োজাহাজের প্রতিরূপ উন্মোচন করে। এক্সবিওয়ান ব্যক্তি উদ্যোগে নির্মিত প্রথম সুপারসনিক উড়োজাহাজ।

১০. বুদ্ধের রথে উল্টোপথে

যাওয়ার কথা ছিল দক্ষিণে কিন্তু বিমান থেকে নেমে দেখলেন পৌঁছে গেছেন উত্তরে! একদম বোকা বনে যাওয়ার কথা। ঘটনা ঘটেছেও তেমন। গত ১৮ ডিসেম্বর নেপালের কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৬৯ জন যাত্রী নিয়ে বুদ্ধ এয়ারওয়েজের একটি বিমান দক্ষিণ-পূর্বে জনকপুর শহরের উদ্দেশে রওনা দেয়, কিন্তু নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়ার বদলে সেটি চলে যায় উত্তর-পশ্চিমের শহর পোখারায়। আর এই কাণ্ডে হতবাক যাত্রীরাও। তবে বড় ধরনের ঝামেলা হয়নি। পরের একটি বিমানে সবাই সঠিক গন্তব্য পৌঁছাতে পেরেছেন।

এ বিভাগের আরো খবর