চট্টগ্রামের হাজারীখিল বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ও বারৈয়াঢালা ন্যাশনাল পার্কে ঢুকতে ফি দিতে হবে পর্যটক ও ভ্রমণার্থীদের।
গাড়ি পার্কিং, ভিডিও ধারণ, নৌকা ভ্রমণ, মাছ শিকার, রেস্ট হাউস ও পিকনিক স্পট হিসেবে ব্যবহার করতে চাইলেও নির্ধারিত টাকা দিতে হবে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয় সংরক্ষিত স্থান দুটিতে প্রবেশসহ আনুষাঙ্গিক ফি নির্ধারণ করে ১৯ জানুয়ারি গেজেট প্রকাশ করেছিল। তবে করোনা মহামারির কারণে ফি আদায় কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক হাছানুর রহমান বলেন, ইজারাদার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। শিগগিরই ফি আদায় শুরু হবে।
ফি আদায় কার্যক্রম শুরু হলে হাজারীখিল ও বারৈয়াঢালা এলাকায় ঢুকতে প্রাপ্তবয়স্কদের ২০ টাকা ও শিক্ষার্থীদের ১০ টাকা দিতে হবে। বিদেশিদের ক্ষেত্রে প্রবেশ ফি ধরা হয়েছে পাঁচ ডলার। এ ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আসা ১০০ জনের দলকে ২০০ টাকা এবং এর বেশি হলে ৪০০ টাকা দিতে হবে।
বাস ও ট্রাক পার্কিংয়ে ১৫০ টাকা; ব্যক্তিগত কার, জিপ ও মাইক্রোবাসে ১০০ টাকা; অটোরিকশা ও টেম্পুতে ৩০ টাকা এবং মোটরসাইকেলের জন্য ২০ টাকা ফি ধরা হয়েছে।
এ ছাড়া একদিন একটি ক্যামেরা দিয়ে হাজারীখিল বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ও বারৈয়াঢালা ন্যাশনাল পার্কে এলাকায় শুটিং করতে চাইলে ‘ফিল্মিং ফি’ দিতে হবে ছয় হাজার টাকা।
আধাঘণ্টা নৌকা ভ্রমণের ২০ টাকা ও ইঞ্জিনবিহীন নৌকা চালাতে প্রতিজন ১৫ টাকা দিতে হবে। মাছ ধরতে এক দিনের জন্য দেয়া লাগবে ৪০০ টাকা।
এ ছাড়া রেস্ট হাউসের ভাড়া ৫০০ টাকা ও পিকনিক স্পট ব্যবহারে প্রতিজন ১০ টাকা করে ফি দিতে হবে।
বারৈয়াঢালা ন্যাশনাল পার্ক। ছবি: নিউজবাংলা
গত কয়েক বছরে হাজারীখিল বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ও বারৈয়াঢালা ন্যাশনাল পার্ক পর্যটকদের অন্যতম পছন্দ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন এসব স্থানে হাজারও পর্যটক ভিড় করেন। ছুটির দিনে এই সংখ্যা আরও বাড়ে।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে হাজারীখিল বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ও বারৈয়াঢালা ন্যাশনাল পার্কে দর্শনার্থীদের প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। নভেম্বর থেকে দুটি স্থানই পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
২০১০ সালের ৬ এপ্রিল চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের সীতাকুণ্ড ও মিরসরাই উপজেলার ২ হাজার ৯৩৩ দশমিক ৬১ হেক্টর বনকে বারৈয়াঢালা ন্যাশনাল পার্ক (সংরক্ষিত বনাঞ্চল) ঘোষণা করা হয়।
এ পার্কের মূল আকর্ষণ নয়স্তরের খৈয়াছড়া ঝর্ণা, সহস্রধারা ঝর্ণা, নাপিত্তা ছড়া ঝর্ণা ও সোনাই ছড়া ঝর্ণা। এ ছাড়া বাওয়া ছড়া, কমলদহ ছড়া, নাপিত্তার ছড়া ও লবণাক্ত ছড়া এখানকার সৌন্দর্যে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে।
চট্টগ্রামের হাজারীখিল বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের নয়নাভিরাম প্রকৃতি। ছবি: নিউজবাংলা
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির হাজারীখিলকে বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয় ২০১০ সালে। এক হাজার ১৭৭ হেক্টরের এ অভয়ারণ্যে হুদহুদ, হুতুম পেঁচা, ময়ূর, নীলকান্ত, বসন্তবাউড়ি, সুইচোরা, তোতা, আবাবিল, টুনি, শঙ্খচিলসহ প্রায় ১২৩ প্রজাতির পাখি রয়েছে।
এ ছাড়া মায়া হরিণ, হনুমান, বানর, চিতা বিড়াল, মেছোবাঘসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী বাস করে এখানে। রয়েছে গর্জন, চাপালিশ, সেগুন, কড়ই, মেহগনি, চুন্দুলসহ হাজার প্রজাতির গাছ।
চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের আওতাধীন সংরক্ষিত স্থান দুটিতে পর্যটকের কারণে বন্যপ্রাণীদের সমস্যা হচ্ছে বলে এর আগে জানিয়েছিলেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা।
পর্যটকদের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করার কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানান বন সংরক্ষক হাছানুর রহমান।