বাইরে থেকে শুকনো। কামড় বসালেই ভেতরের হালকা রস মুখে আনে তৃপ্তি। মিষ্টান্নের নাম ছানামুখী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যেসব খাবার বিখ্যাত, তার একটি এটি।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিও এর কদর কমাতে পারেনি। অবরুদ্ধ সময়েও বিক্রি বন্ধ নয়।
মিষ্টির প্রতি বিশেষ দুর্বলতা আছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষদের। তবে ছানামুখী তৈরি হয় শহরের দোকানগুলোতে। শহরে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় দেড়শ মিষ্টির দোকান রয়েছে।
এসব দোকানে ছানা দিয়ে তৈরি হয় ছানামুখী, ছানার বরফি, ছানার পোলাও, ছানার আমিত্তি।
আরও পাওয়া যায় মাসের আমিত্তি, বাদশাভোগ, রাজভোগ, স্পঞ্জ, রসমলাই, চমচম, কালজাম, দধি, লাড্ডু, সন্দেশ, জিলাপি।
ছানামুখীর জন্য সবচেয়ে প্রসিদ্ধ হচ্ছে শহরের ভোলাগিরি মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, ভোলানাথ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, আনন্দময়ী মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, আদর্শ মাতৃ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার।
মিষ্টির কারিগররা জানান, প্রায় ১০০ বছর আগে ছানামুখীর নাম মজাদার তালিকায় যোগ করেন ভারতে কাশীধাম থেকে আসা মহাদেব পাড়েঁ।
শহরের মেড্ডার শিবরাম মোদকের দোকানে মিষ্টি তৈরির চাকরি নিয়েছিলেন মহাদেব। তখন থেকেই শিবরামের দোকানের মিষ্টির সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। মহাদেব দুটি মিষ্টি বানাতেন। একটি ছানামুখী, অন্যটি লেডি কিনিং বা লেডি কিনি।
মহাদেবের তৈরি করা এই দুই মিষ্টি বাংলাদেশের অন্য কোথাও পাওয়া যেত না। তার মতো করেই এখনও তৈরি হয় ছানামুখী।
কারিগররা জানান, ছয় কেজি ছানামুখী তৈরি করতে সাধারণত ৪০ লিটার দুধ প্রয়োজন। দুধের ছানা তৈরি করে তা থেকে অতিরিক্ত পানি ঝরাতে হয়। এরপর শুকনো ছানাকে দুই থেকে তিন ঘণ্টা রাখতে হয় ফ্রিজে। এতে ছানা শক্ত হয়ে যাবে।
এবার শক্ত ছানাকে ছোট ছোট চার কোনা আকারে কেটে নেয়া হয়।
এরপর একটি প্যানে চিনি, পানি ও এলাচ দিয়ে মাঝারি আঁচে চুলায় দিয়ে ফুটিয়ে নেয়া হয়। এবার ছানার টুকরোগুলো ছেড়ে দেয়া হয় সেই পানিতে।
চার-পাঁচ মিনিট আস্তে আস্তে নাড়ার পর প্যানটি চুলা থেকে নামিয়ে নিতে হবে। তখনও হালকা করে কিছুক্ষণ নাড়তে হয়।
একসময় দেখা যাবে, ছানার গায়ে চিনি সুন্দরভাবে লেগে গেছে। আর জ্বাল দেয়ার কারণে ছানার ভেতরে কিছুটা রস ঢুকে গেছে। বাইরে চিনির রস শুকিয়ে লেগে থাকলেও ভেতরের অংশ খানিকটা ভেজাই থাকবে।
ফরিদপুরের মৎস্য অধিদফতরের এক কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম। বাড়ি কিশোরগঞ্জ। শ্বশুরবাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কাজীপাড়ায়। বাড়িতে যাওয়ার সময় প্রত্যেক বার ছানামুখী কিনে নিতে ভুলেন না।
গত ১৬ নভেম্বর এক দোকানে ছানামুখী কিনছিলেন। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এখানকার ছানামুখী অনেকটাই উন্নত মানের। এখানে এলে কখনো কিনতে ভুল করি না। ফরিদপুরে আমার অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও আবদার করেন ছানামুখী খাওয়াতে। তাই বেশিই কিনতে হয় পরিমাণে।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের আদর্শ মাতৃ ভাণ্ডারের চয়ন চাকলাদার বলেন, ‘ছানামুখী খুচরা বিক্রি থেকে পাইকারি বিক্রি বেশি।’
তিনি জানান, করোনা মহামারির আগে গড়ে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকার ছানামুখী বিক্রি হতো। এখন বিক্রি হয় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার।
সাংবাদিক বিশ্বজিৎ পাল বাবু বলেন, ‘ঢাকা থেকে ফোন করে ছানামুখী ভালো হবে এমন একটি দোকানের ঠিকানা নিতে চেয়েছেন একজন।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম জানান, দেশি গরুর দুধ থেকে তৈরি ছানায় এই মিষ্টির স্বাদ হয় ভালো। কিন্তু এখন খামারের সংকর জাতের গরুর দুধের ছানায় তা এত ভালো হয় না। দেশি গরুর দুধ পাওয়াটাই এখন সমস্যা।