বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কেওক্রাডংয়ে রাত ভোর

  • শিমুল খালেদ   
  • ২৮ নভেম্বর, ২০২০ ১২:০২

বান্দরবানে বেড়াতে গেলে কেওক্রাডং ভ্রমণপিপাসুদের জন্য একটি আকর্ষণীয় জায়গা। পাহাড়ের উপর এখন থাকার জন্যে কটেজ ভাড়া পাওয়া যায়। তবে যেতে হলে আপনাকে বেশ কিছুটা পথ পাহাড় আর জঙ্গলের মধ্য দিয়ে ট্রেকিং করতে হবে।

কেওক্রাডং পাহাড়ে সন্ধ্যা নামছে। পাল্লা দিয়ে নীড়ে ফিরছে পাহাড়ি পাখিরাও। ছাই বর্ণে ঢেকে যাচ্ছে চারপাশের পাহাড়।

দৃষ্টি খুব একটা এগোয় না। পশ্চিমাকাশে সূর্য কিছুক্ষণ আগে টুপ করে ডুবে গেছে। আকাশের কোণে কালচে পাহাড় সারির ওপর ছোপ ছোপ রক্তিম আভারাও মুছে যাওয়ার অপেক্ষায়। সন্ধ্যার পর হিমেল হাওয়া বইতে শুরু করে।

চূড়ার এক পাশে বসে সহযাত্রী ডাক্তার জাহিদ ও মৌ আপুর সঙ্গে গল্প জুড়ে দেই। বাতাস বাড়ছে আর ফুরফুরে হিমেল হাওয়া হিমলতর হচ্ছে। খানিক পর দলের শেষ অংশ নিয়ে দলনেতা অপু ভাই ফিরলেন। নির্ধারিত কটেজের চাবিও বুঝে পেলাম।

ভেতরে ঢুকেই গা এলিয়ে দেই। আপাদমস্তক কাঠের কটেজ। প্রায় চার ঘণ্টা হাইকিং, তার আগে ১৬ ঘণ্টা বাস-ট্রেন-জিপ জার্নির ধকল শরীরজুড়ে।

পাহাড়ে সবচেয়ে দুষ্প্রাপ্য হলো পানি। সেটা আমলে নিয়ে মিতব্যয়ী হয়ে গোসল সেরে নিই। ফিরতেই ডিনারের ডাক পড়ল লালা বমের কটেজে।

বান্দরবানের রুমা উপজেলার দক্ষিণ-পূর্ব কোণে কেওক্রাডং পাহাড়ের অবস্থান। ৯৮৬ মিটার উঁচু এ পাহাড়ের চূড়াকে একসময় দেশের সর্বোচ্চ মনে করা হতো।

তবে ট্রেকারদের সাম্প্রতিক জরিপে সর্বোচ্চের স্থান না হলেও কেওক্রাডং অন্যতম সুন্দর চূড়া। এ চূড়ায় দাঁড়িয়ে অন্য সব পর্বত চূড়াই দেখা যায় খালি চোখে।

কেওক্রাডং শব্দের উৎপত্তি মারমা ভাষা থেকে, যার মানে সবচেয়ে উঁচু পাথরের পাহাড়।

রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরো আকাশ যেন নেমে আসছিল কেওক্রাডংয়ের চূড়ায়। চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে ভাসছিল লক্ষ কোটি তারা। কালপুরুষ, শুকতারা, সপ্তর্ষীমণ্ডল—নাম না জানা আরও কতশত নক্ষত্ররাজি।

দ্যুতি ছড়াতে ছড়াতে তারাগুলো ঝাপসা হতে হতে অদৃশ্য হয়ে যায়। কয়েক মুহূর্ত পর আবার ভেসে ওঠে।

মূলত মেঘের খণ্ড এসে কিছুক্ষণ পরপর ঢেকে দেয় আকাশ। তাতে ঢাকা পড়ছিল তারাদের দল। কেউ একজন টর্চলাইট জ্বেলে দেয়ায় দেখলাম, আমাদের ঘিরে ভেসে যাচ্ছে খণ্ড খণ্ড মেঘদল। দূর আকাশে তারাদের ভিড়ে ঝিম ধরে যাওয়া দৃষ্টিকে হঠাৎ হঠাৎ হকচকিয়ে দেয় উল্কাপিণ্ডের পতন।

এদিকে বুক কাঁপিয়ে দিচ্ছে ঠান্ডা। তারপরও ফিরতে চাইছে না মন। আমরা দুই-তিন জন ছাড়া চূড়ায় আর কেউ নেই।

রাতের মৌনতা ভেদ করে হঠাৎ হঠাৎ ভেসে আসছিল অচেনা পাখির স্বর। রাত আরও গভীর হলে ফিরে যাই কটেজে।

কাঠের মেঝের ওপর আড়াআড়ি তোশক ফেলে বিছানা করা হয়েছে। গল্প করতে করতেই ঘুম এসে জড়িয়ে ধরল। ঠান্ডা ঠান্ডা লাগতে ঘুম ভেঙে গেলে খেয়াল করলাম মেঘের ভেতর শুয়ে আছি।

ভারী কম্বলখানা আরেকটু গলা পর্যন্ত টেনে নিলাম। তার একটু পরে কটেজ থেকে বের হতেই চমকে যাই বিস্ময় আর অসম্ভব ভালো লাগায়। রাতের শেষ প্রহরের ক্ষীণ আলো আর আঁধারমাখা মেঘের ভেতর দাঁড়িয়ে আছি।

বগা লেকে লেখক

চোখ, মুখ, কান, গলা ছুঁয়ে দিচ্ছে মেঘ। নিঃশ্বাসে মেঘের স্পর্শ। চারপাশে এক ঘোরলাগা অপার্থিব দৃশ্যপট। যেন ধবল মেঘে ডুবে গেছে দুনিয়া। তিরতির করে কেঁপে উঠছে শণঝোপ। চূড়া থেকে কাছেই বেশ বড়সড় এক মেঘখণ্ড।

কিউমুলোনিম্বাস ক্লাউড জলোচ্ছ্বাসের অবয়বে ধেয়ে আসছে; যেন ভাসিয়ে নিয়ে যাবে আমাদের। একসময় সোনালি আভা ছড়িয়ে ধবল দিগন্তে জ্বলে উঠল সূর্য। 

সূর্য ওঠার পর মেঘ ঊর্ধ্বাকাশে মিলিয়ে যেতে থাকে। দূর দিগন্তে রোদ ঝলমল পরিষ্কার আকাশে ভেসে উঠতে থাকে অন্য পাহাড়চূড়াগুলোও। রোদ প্রখর হওয়ার আগ পর্যন্ত চূড়ার ওপর চলল আমাদের আড্ডা-গল্প।

ভোরের পর শুরু কেওক্রাডং থেকে ফেরার পালা। খাড়া ঢালের চড়াই বেয়ে উপরে ওঠার কষ্ট ফেরার পথে নেই বটে।

কীভাবে যাবেন

ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে শ্যামলী, হানিফসহ আরও বেশ কিছু বাস যায় বান্দরবান। নন-এসির ভাড়া ৬২০ টাকা। এসি বাসে যেতে গুনতে হবে ১ হাজার ৪০০ টাকা।

বান্দরবান থেকে চাঁদের গাড়িতে করে বগা লেক। সেখানে এক রাত থেকে সকাল সকাল রওনা দিয়ে পৌঁছে যাবেন কেওক্রাডং। বন আর পাহাড়ের মধ্য দিয়ে ট্রেকিং করে যেতে হবে।

এ বিভাগের আরো খবর