বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চাকরি পেয়েছেন ইউএনও-কাণ্ডে আলোচিত ফরিদ

  •    
  • ৮ জুলাই, ২০২১ ০৮:৫১

গত ২০ মে ফরিদ আহমেদ ত্রাণ চেয়ে ৩৩৩ নম্বরে ফোন করেছিলেন। তার জন্য খাবার নিয়েও গিয়েছিলেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। তবে তারা দেননি। আর ইউএনও আরিফা জহুরা তাকে ১০০ জনকে ত্রাণ বিতরণের নির্দেশ দেন। বিপাকে পড়া ব্যবসায়ী স্ত্রীর অলংকার বন্ধক রেখে সুদে টাকা এনে ত্রাণ বিতরণ করেন। তার সেই কাহিনি প্রকাশ হওয়ার পর ছি ছি পড়ে যায়। জনগণের করের টাকায় ইউএনওর ভুলের ক্ষতিপূরণ দেয় প্রশাসন।

নিজের কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। তবে সংসার চালাতে ন্যূনতম আয়ের ব্যবস্থা হয়েছে ৩৩৩ নম্বরে ত্রাণ চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নির্দেশে উল্টো ত্রাণ বিতরণে বাধ্য হওয়া ব্যবসায়ী ফরিদ আহমেদের।

করোনার কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া নিজের হোসিয়ারি (গেঞ্জি) কারখানা চালু করতে পারেননি ফরিদ। তবে অন্য একটি কারখানায় চাকরি নিয়েছেন। চোখের জ্যোতি কম, বয়সের কারণে ভারী কাজও করতে পারেন না। তাই কাজ নিয়েছেন পলিম্যান হিসেবে।

আগে কারখানার মালিক ছিলেন, সেই অতীতকে ভুলে গিয়ে মাসে ৯ হাজার টাকা বেতনে এই চাকরি তার। সংসার চালানোর জন্য যথেষ্ট নয় কোনোমতে, তবে তিন বেলা ডালভাত খেয়ে বাঁচা যাবে, এই দুঃসহ সময়ে এটাই তার কাছে অনেক কিছু।

সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের দেওভোগ নাগবাড়ী এলাকায় এ এম আবুল হোসিয়ারি নামে কারখানাটিতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়। সেখানে উৎপাদিত পোশাক প্যাকেট করছিলেন ফরিদ আহমেদ। কাজের চাপে তখন কথা বলতে পারেননি।

পরে তিনি বলেন, ‘ত্রাণ বিরতণের জরিমানার টাকা ফিরত পাইয়া সব ঋণ পরিশোধ করেছি। এরপর থেকে আর কোনো চাপ নেই।’

তিনি বলেন, ‘স্ত্রী, মেয়ে ও প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে এখন অনেক ভালো আছি। তবে ঘটনার পর থেকে আত্মীয়স্বজনরা আগের মতো যোগাযোগ করে না। কিন্তু তারপরও অনেক ভালো আছি।’

গত ২০ মে ফরিদ আহমেদ ত্রাণ চেয়ে ৩৩৩ নম্বরে ফোন করেছিলেন। তার জন্য খাবার নিয়েও গিয়েছিলেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। তবে তারা দেননি।

ফরিদ আহমেদ ত্রাণ চেয়ে ফোন করেছিলেন ৩৩৩ নম্বরে। তার বাড়িতে গিয়ে অবস্থা দেখে শাস্তির ঘোষণা দেন ইউএনও আরিফা জহুরা।

তিনি চার তলা একটি ভবন থেকে বের হয়ে আসেন। আর ততক্ষণে যারা ত্রাণ নিয়ে গেছেন, তারা জেনে গেছেন, তার গেঞ্জি কারখানা আছে। কিন্তু সেটি যে বন্ধ, তা আর জানেননি।

ডাক পড়ে ইউএনও আরিফা জহুরার। তিনি ঘটনাস্থলে এসেই রায় ঘোষণা করে দেন, উল্টো ত্রাণ বিতরণ করতে হবে ফরিদকে। আর তা দিতে হবে ১০০ জনকে। প্যাকেটে থাকবে সরকার যে পরিমাণ ত্রাণ দেয় সেই পরিমাণই।

ইউএনওর বরাত দিয়ে এই সংবাদ গণমাধ্যমে এলে পাঠকরা ফরিদকে গালমন্দ করে। কিন্তু ২৫ মে ত্রাণ বিতরণের দিন তার জীবনকাহিনি যখন তুলে আনে নিউজবাংলা, তারপর তোলপাড় পড়ে যায়।

ফরিদের যে কারখানা ছিল, সেটি বন্ধ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে। পরে সংসার চালাতে তিনি কাজ নিয়েছেন আরেক কারখানায়, কিন্তু চোখের সমস্যায় সেই কাজও করতে পারেন না। সংসারের আয় নেই। আর তিনি যে বাসায় থাকেন, সেটি তাদের ছয় ভাই-বোনের। নিজের অংশ কমই।

ফরিদ আহমেদের জীবনের কাহিনি না জেনেই তাকে সম্পদশালী ভেবে ১০০ জনকে ত্রাণ বিতরণে বাধ্য করেছেন ইউএনও।

ইউএনওর আদেশ না মানলে কারাভোগের ভয়ে তিনি স্ত্রীর স্বর্ণ বন্ধক রেখে সুদে টাকা এনে খাদ্যসামগ্রী কেনেন। আর ইউএনও উপস্থিত থেকে সেই ত্রাণ বিতরণও করেন।

কিন্তু পরদিন টনক নড়ে প্রশাসনের। ফরিদকে তার টাকা ফেরত দেয়া হয়। তদন্ত কমিটির সুপারিশের পর ইউএনওকেও সতর্ক করে দেয়া হয়।

আরও পড়ুন: সেই ফরিদকে টাকা ফেরত চুপিচুপি

ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘আমার ঘটনা আপনারা মানুষের কাছে তুলে ধরছেন। তাই সত্য ঘটনাটা সবার নজরে আইছে। প্রশাসনও বুঝতে পারছে। তারা যাচাইবাছাই কইরা দেখছে আমি সত্য তাই আমার টাকা ফিরত পাইছি। এ জন্য নিউজবাংলার কাছে অনেক কৃতজ্ঞ।’

ইউএনওর নির্দেশে সুদে টাকা ধার করে ত্রাণ বিতরণে বাধ্য হওয়া ফরিদ আহমেদকে টাকা তুলে দিয়েছেন স্থানীয় পঞ্চায়েত কমিটির নেতা।

ত্রাণ বিতরণের পর দিন বাসায় প্রশাসনের লোকদের আনাগোনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তারা দেখছে আমার প্রতিবন্ধী ছেলেটারে। তাই যাওয়ার সময় কইছিল, আমাগো সহযোগিতা করব। কিন্তু তারা যাওয়ার পর আর যোগাযোগ করে নাই।’

ফরিদের স্ত্রী হিরন বেগম বলেন, ‘আমরা অনেক ভালো আছি। কখনো চিন্তা করি নাই সব ঝামেলা শেষ হইব। আমরা এখন কারও কাছে ঋণ নাই। উনি (ফরিদ) যে টাকা বেতন পায় তাই দিয়া কোনোমতে সংসার চলে। তারপরও আল্লাহ ভালো রাখছে।’

ফরিদ আহমদকে সাহায্যের আশ্বাসের বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ জানান, ‘ফরিদ আহমদ একজন বৃদ্ধ মানুষ। তিনি জেলা প্রশাসনের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন বিধায় সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কাগজপত্র দিলে তাকে সহায়তা করা হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর