যশোর মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন মাহফুজুর রহমান নামে এক যুবককে ‘পিটিয়ে হত্যার’ ঘটনার পর কেন্দ্রটি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে পুলিশ।
কেন্দ্রটিতে চিকিৎসাধীনদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করার পর এটি সিলগালা করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মাহফুজুর হত্যা মামলায় কেন্দ্রটির দুই পরিচালকসহ ১৪ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেপ্তারের পর মঙ্গলবার থেকে এটি যশোর সদর থানার চাঁচড়া ফাঁড়ির হেফাজতে আছে।
চাঁচড়া ফাঁড়ির ইনচার্জ ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রাকিুজ্জামান বলেন, ‘আমরা ফাঁড়ি থেকে পালাক্রমে সেখানে গিয়ে ডিউটি করছি। বর্তমানে এখানে যারা ভর্তি, শিগগিরই অভিভাবকদের ফোন দিয়ে তাদের অন্যত্র বা বাড়িতে নিয়ে যেতে বলব।’
‘ভেতরে ক্রাইম সিনসহ নানা আলামত থাকায় আমরা কাউকে ভেতরে যেতে দিচ্ছি না।’
যশোর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বাহাউদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখানে বর্তমানে ১৬ জন ভর্তি আছেন। তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়া হবে। না হয় বাড়িতে ফেরত পাঠানো হবে।
‘কেন্দ্রটি বর্তমানে পুলিশি হেফাজতে আছে। চলমান মামলার ওপর ভিত্তি করে কেন্দ্রটি বন্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু হবে।’
যশোর সিভিল সার্জন অফিসের কর্মকর্তা আরিফ হোসেন বলেন, ‘মাদক নিরাময় কেন্দ্রগুলোর মূল দায়িত্ব মাদ্রকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের। আমরা শুধু তালিকা তৈরি করি। যশোরে বর্তমানে তিনটি মাদক নিরাময় কেন্দ্র আছে।’
কী ঘটেছিল সেদিন
শনিবার বিকেলে শহরের রেল রোডের মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মাহফুজুরের মরদেহ যশোর জেনারেল হাসপাতালে ফেলে পালিয়ে যান।
রোববার মাহফুজুরের বাবা মনিরুজ্জামানের মোবাইল ফোনে কল করে ছেলের মৃত্যুর খবর জানানো হয়। তিনি আসার পর মরদেহে আঘাতের চিহ্ন দেখে পুলিশকে অভিযোগ দিলে কেন্দ্রটির মালিকসহ ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
যশোর কোতোয়ালি থানার ওসি তখন জানান, প্রতিষ্ঠানটির সিসিটিভির ফুটেজ দেখে মাহফুজুরকে পিটিয়ে হত্যার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তার ১৪ জন হলেন কেন্দ্রটির পরিচালক পূর্ব বারান্দীপাড়ার মাসুম করিম ও বারান্দীপাড়া বটতলা এলাকার আশরাফুল কবির।
কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হলেন রেজাউল করিম, ওহেদুজ্জামান, ওহিদুল ইসলাম, আল শাহরিয়া, শাহিন, ইসমাইল হোসেন, শরিফুল ইসলাম, সাগর আলী, অহেদুজ্জামান সাগর, নুর ইসলাম, হৃদয় ওরফে ফরহাদ ও আরিফুজ্জামান।
আরও পড়ুন: মাদক নিরাময় কেন্দ্রে যুবককে পিটিয়ে হত্যা
তিনজনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি
মাহফুজুর হত্যা মামলায় কেন্দ্রটির তিনজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
যশোর জেলা আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম শাহাদৎ হোসেন সোমবার সন্ধ্য ৬টায় তাদের জবানবন্দি নেন।
কোর্ট পরিদর্শক মাহাবুবুর রহমান জানান, চৌগাছার বিশ্বাসপাড়ার রিয়াদ, ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরের শাহিনুর রহমান ও যশোর শহরের রেজাউল করিম রানা জবানবন্দি দিয়েছেন। অন্য ১১ আসামির রিমান্ড শুনানির জন্য আগামী ২৭ মে দিন ঠিক করেছেন বিচারক।